বাংলাদেশে আইসক্রিম ইন্ড্রাস্ট্রি কাজ করছে প্রায় অনেক দিন হচ্ছে।আমাদের ছেলেবেলায়, অর্থাৎ ৯০ এর দশকে মাঝামাঝি সময়ে মফস্বলে দেখেছি স্কুলের সামনে ছোট ছোট লোকাল আইসক্রিমওয়ালাদের। যারা ১ টাকা ২ টাকায় আইসক্রিম বিক্রি করতো এবং স্কুলের প্রায় সব ছাত্র-ছাত্রীরা এই ধরনের আইসক্রিমের কনজিউমার ছিলাম। তবে, এলাকার কিছু ভালো রিটেইল দোকানে ফ্রিজের মধ্যে বেশি দামে ১০-৩০ টাকার আইসক্রিম পাওয়া যেত, যার মধ্যে চকবার, অরেঞ্জি ফ্লেবার, বল কিংবা পরবর্তীতে কোণ আইসক্রিমের সাথে আমাদের পরিচয় হয়েছিল।
Other Information: সবচেয়ে ভাল সার্ভিস দেয়া কিছু ই কমার্স
যতটুকু মনে পরে, তখনকার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্র্যান্ডের আইসক্রিমগুলো ( ইগলু, পোলার, কোয়ালেটি) ছিল উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত ফ্যামেলিদের এবং তাদের ছেলেমেয়েদের টার্গেট করে। কারণ আমাদের মত মধ্যবর্তী পরিবারের সন্তানদের কাছে এই ধরনের ব্র্যান্ডের আইসক্রিম হাতে পাওয়া ছিল আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত। এই আইসক্রিমগুলো খাওয়ার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হত কোন বিশেষ দিনের, সেলিব্রেশনের কিংবা মোমেন্ট এর।
যদি উদাহরণ দেই, ঈদের দিন বা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলে বাবা-মায়ের কাছ থেকে আইসক্রিম খাওয়ার টাকা পেতাম, সেই টাকায় ব্র্যান্ডের আইসক্রিমগুলো কিনে খেতাম। এই পদ্ধতি গুলো আমরা কনজিউমার হিসেবে নিজেরাই নেচেরালি এক্সপ্লোর করেছি, আমার মনে হয় নাহ TV এড-এ এই ধরনের কোন ডিরেকশান ছিল কজিউমারদের জন্য।
তবে যাই হোক, ২০-২৫ বছর পর আজকের এই আইসক্রিম ইন্ড্রাস্ট্রি অনেক দূর এগিয়েছে নিঃসন্দেহে। এখন আইসক্রিম মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালে। পুরনোদের সাথে নতুন নতুন প্লেয়ার এসেছে মার্কেটে (গোল্ডেন হারভেস্ট, কাজি, লাভেলো ইত্যাদি), ক্যাটাগরি এক্সপানশান, লাইন এক্সটিনশান হয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে মার্কেট পেনিট্রেশন এবং মার্কেট সাইজ বড় হয়েছে, প্রতিনিয়তই হচ্ছে, সর্বোপরি বুঝা যাচ্ছে, ইন্ড্রাস্ট্রি ভালো করছে অথবা প্রটেনশিয়াল।
কিন্তু, একজন আইসক্রিমের কনজিউমার বা আইসক্রিম লাভার হিসেবে আমার মনে একটা কষ্ট হচ্ছে, বাংলাদেশে কোন আইসক্রিম কোম্পানির মার্কেটাররা তাদের মার্কেটিং কমুনিকেশন এর মাধ্যমে কনজিউমারকে ডিফাইন করে দিতে পারে নি অথবা কোন ডিরেকশনাল গাইডলাইন দিতে পারে নি – যে কে, কখন, কোন সময়ে, জীবনের কোন ছোট ছোট মোমেন্টগুলোতে কনজিউমাররা আইসক্রিম কনজিউম করবে। (আমার ভুল হতে পারে, আমি আসলে রি-কল করতে পারছি নাহ)।
সত্যি বলতে, আমার মনে হয় – এখানে অনেক বড় অপরটুনিটি আছে – পজিশনিং করার। আমি আমার গল্প বলতে পারি, রাতে ডিনার করার ৩০ মিঃ -১ ঘণ্টা পর আমি TV দেখতে দেখতে সাধারণত আইসক্রিম খাই, খেতে এঞ্জয় করি এবং আজকাল আমার সাথে আমার ওয়াইফ ও আইসক্রিম খায়, খেতে এঞ্জয় করে। সে কিন্তু আগে কখনই এই সময়ে আইসক্রিম খেত নাহ।
আরেকজন হয়ত বিকেলে বই পড়ার সময় আইসক্রিম খেতে ভালোবাসে, এঞ্জয় করে। আবার শীতকালে আমি অনেকেই দেখেছি আইসক্রিম খেতে, আমি নিজেও শীতে আইসক্রিম খাই, খুব এঞ্জয় করি।
এই যে জীবনের ছোট ছোট মোমেন্ট, সেলিব্রেশনে, সিজনে আইসক্রিম কনজিউম করানোর বিষয়গুলো আইসক্রিম কোম্পানির মার্কেটাররা তাদের মার্কেটিং কমুনিকেশন-এ, ব্র্যান্ডের গল্পের মধ্যে কি এসোসিয়েট করতে পারে নাহ? আমারতো মনে হয় এই ধরনের স্ট্রেটিজি নিয়ে কাজ করার, ইউনিক পজিশনিং ক্রিয়েট করার খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। তাতে কনজিউমারের সংখ্যা এবং সেলসকে বুস্ট আপ করতে সাহায্য করতে পারে ।
ভিন্ন আইডিওলজি বা মতামত থাকলে শেয়ার করতে পারেন, ওয়েলকাম!