Written by 12:05 pm News, PR

কোন লক্ষ্যের জন্য সরে দাঁড়ালেন বেজোস

Jeff Bezos 1
Walton and Herlan Ads
Jeff Bezos

জেফ বেজোস

আমাজন এখন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় দামি কোম্পানি। গত বছর করোনার কারণে তাদের ব্যবসা রীতিমতো ফুলেফেঁপে উঠেছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে তাদের রেকর্ড বিক্রি হয়েছে। বৃদ্ধিও হার ৪৪ শতাংশ এবং বিক্রির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। ব্যাপারটা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। তবে এ সবকিছু ছাপিয়ে সম্প্রতি শিরোনাম হয়েছে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস পদত্যাগের ঘোষণা। প্রায় তিন দশক দায়িত্বে থাকার পর তিনি এ ঘোষণা দিলেন।

এ খবরে বিশ্বজুড়েই নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। হবেই না বা কেন, ১৯৯৪ সালে পুরোনো একটি টেবিল নিয়ে অনলাইনে বই বিক্রি শুরু করেছিলেন যে বেজোস, সেই তিনি এখন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী। অনেকেই মনে করেন, ব্যবসার জগতে তিনি সর্বকালের সেরা। মহামারির আগে ২০১৯ সালে আমাজন ৩৫০ কোটি পার্সেল সরবরাহ করেছিল। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতি দুজনে একজনকে পার্সেল সরবরাহ করেছে আমাজন।

কোম্পানির এতটা সাফল্যের পেছনে বড় অবদান বেজোসেরই। ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত কঠোর তিনি। কর্মীদের প্রতি তাঁর কড়া নির্দেশ ছিল, প্রতিটি দিনকে ‘প্রথম দিন’ হিসেবে দেখতে হবে। যার ফল হাতেনাতে তিনি পেয়েছেনও। অনলাইনে বই ও মুদিপণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে স্মার্ট স্পিকার, ভিডিও স্ট্রিমিং, বিজ্ঞাপন, ক্লাউড কম্পিউটিং নানা দিকে ছড়িয়েছে তাঁর ব্যবসা। ১৯৯৭ সালে শেয়ারবাজারেও তালিকাভুক্ত হওয়ার পর আমাজনের মূল্যায়ন তিন হাজার গুণ বেড়েছে।

অবশ্য সমস্যার অন্ত নেই আমাজনে। বিভিন্ন দেশে আইনি সমস্যায় জড়িয়ে আছে কোম্পানিটি। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই আস্থার সংকটে পড়েছে আমাজন। প্রতিষ্ঠাতার পক্ষে এসব সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু প্রধান নির্বাহী কীভাবে এসব সামাল দেবেন, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষায় সবাই। নতুন প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জেসি কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা।

অনেকেই প্রশ্ন, বেজোস ঠিক কতটা ক্ষমতা ছাড়বেন? নাকি আপাতত কয়েক বছর পেছন থেকে নেতৃত্ব দেবেন? সংগঠন হিসেবে আমাজন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। ফলে ক্লাউড কম্পিউটিং কোম্পানি বক্সের প্রধান অ্যারন লেভি মনে করেন, আমাজন বেজোসকেও ছাড়িয়ে যাবে।

খুচরা বিক্রির জগতে আমাজন একচেটিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, ছোটরা তার সঙ্গে পারছে না, এমন বিস্তর অভিযোগ আছে অ্যামাজনের বিরুদ্ধে। এমনকি মার্কিন কংগ্রেসের এক প্রতিবেদনে আমাজনের বিরুদ্ধে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া এবং অননুমোদিত কাজে ব্যবহারের অভিযোগও আনা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক রাজনীতিবিদ চান, আমাজনকে যেন তার তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে দেওয়া না হয়। এমনকি কোম্পানি ভেঙে দেওয়ার কথাও বলেন অনেকে। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই বেজোস চলে যাচ্ছেন।

তবে তাঁর আরও বড় লক্ষ্য আছে, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন বেজোস। এই পরিস্থিতিতে বেজোসের প্রস্থানের সঙ্গে বিল গেটসের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গেটসের মতো পরিবেশ বিপর্যয় রোধে তাঁর অঙ্গীকার আছে। এর আগেও তিনি বলেছেন, সম্পদের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা পৃথিবীর অস্তিত্বেও জন্য হুমকি। এলন মাস্কের মতো তাঁরও মহাশূন্য নিয়ে অপার আগ্রহ আছে। ব্লু অরিজিন নামে একটি রকেট ফার্মও আছে তাঁর। এই কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের মহাশূন্যবিষয়ক নানা তৎপরতায় যুক্ত। দেশটি যে আবারও চাঁদে নভোচারীদের নিয়ে যাবে বলে ভাবছে, সেই পরিকল্পনায় ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছে ব্লু অরিজিন।

২০০০ সালে মাইক্রোসফট ছেড়ে দেওয়ার পর গেটস যেমন দানধ্যানে সময় দিচ্ছেন, তেমনি বেজোসও বড় কোনো লক্ষ্যে নিজেকে যুক্ত করবেন, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। গেটস ফাউন্ডেশন এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনুদান দেওয়া প্রতিষ্ঠান। ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ থেকে এইডস গবেষণা—কোথায় নেই তারা।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বেজোসের চিন্তাও অনেকটা সে রকম। ২০১৯ সালে তিনি যে ভবিষ্যতের চিত্র এঁকেছিলেন, তাতে দেখা যায়, জনাকীর্ণ পৃথিবীতে শত শত কোটি মানুষ মহাশূন্যগামী কৃত্রিম যানে বসবাস করছে। এই চিত্রকল্পের মাজেজা হলো পৃথিবী একসময় ধ্বংস হবে। আর তাঁর এই ধারণাও অত্যন্ত সাহসী। অনলাইনে খুচরা বিক্রি যেমন আমাজনের এক যুগান্তকারী পরিবর্তন, তেমনি মহাকাশযানে মানুষের বসতি আরেক যুগান্তকারী ঘটনা হতে পারে।

দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে  প্রথম আলো

Share this on
Close