মোবাইলে ডায়াল করলেই অ্যাকাউন্ট খোলা, খরচ ছাড়া লেনদেন, সবচেয়ে কম খরচে ক্যাশ-আউট করা, নিখরচায় ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট- এসবই মাত্র দুই বছরের কম সময়ে ইর্ষণীয় সাফল্য পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছে সরকারি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ‘নগদ’কে। ফলে ডিজিটাল লেনদেনে বহুদিন থেকে দেশে গড়ে ওঠা একচ্ছত্র আধিপত্য ভেঙে দিয়ে ডাক বিভাগের সেবাটি প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক অন্তর্ভূক্তি বৃদ্ধিতে দারুণভাবে সরকারের কাজে লাগছে। অন্যদিকে ডিজিটাল লেনদেনে স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে- এমনটাই মনেকরছেন এর ব্যবহারকারীরা।
‘যে যাই বলুক, যারা আমাদেরকে সবচেয়ে কম খরচে লেনদেন করতে দেবে আমরা তাদের সঙ্গেই থাকবো’ সাফ জবাব, তাইজুল ইসলাম সজীবের। মাদারীপুর সদরের মুন্সিগঞ্জ গ্রামের ছেলে সজীব কাজ করছেন মহাখালীর একটি বেসরকারি ফার্মে। একই সঙ্গে নিজেকে তৈরি করতে রাতে অনলাইনে পড়াশোনাটাও চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
‘দেখেন আমি যে আর্থ-সামাজিক অবস্থানে আছি তাতে খরচ কমানো যে কতোটা জরুরি তা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ বোঝে না। সুতরাং কম খরচে গুনগত আধুনিক সেবা যেখানে, আমি সেখানেই থাকবো।’
নিজের খরচ বাঁচিয়ে প্রতি মাসে গ্রামে বাবা-মাকে টাকা পাঠাতে হয় সজীবকে- মাধ্যম এখন ‘নগদ’। নিজেদের জন্যে মোবাইলে ভয়েস ও ডেটা কেনা, কোর্সের ফি দেওয়া সবই তিনি করছেন ‘নগদ’ প্ল্যাটফর্ম থেকে। সব কিছু করতে গিয়ে কখনো সখনো সজীব যে ঠেকায় পড়েন না তা নয় তখন বন্ধুদের কাছ থেকে ধার দেনা করতেও মাধ্যম সেই ‘নগদ’। কারণ ‘নগদ’-এ টাকা আনতে বা কাউকে টাকা পাঠাতে খরচ হয় না তার। অন্যখানে যে খরচ প্রতি লেনদেনে ৫ টাকা।
সজীব শুধু একা নন, তার মতো লক্ষ-কোটি গ্রাহক খরচের বিবেচনায় হলেও বেছে নিয়েছেন ‘নগদ’কে। কেউ আবার পছন্দ করেছেন আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার বা গ্রাহক বান্ধব সেবার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে। কেউ ‘নগদ’ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হচ্ছেন কোনো রকম বাড়তি খরচ ছাড়া বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট করার প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে।
সজীবদের মতো মানুষদের কথা ভেবেই ‘নগদ’ ভ্যাটসহ হাজারে সাড়ে এগারো টাকা খরচে ক্যাশ-আউট করার সুযোগ এনেছে। অ্যাপ না ব্যবহার করলে অবশ্য খরচটা চৌদ্দ টাকায় গিয়ে পড়ছে। তবে সব মিলে মাত্র দুই বছর আগে যাত্রা করা ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এভাবেই অসংখ্য সজীবের জীবনগল্পের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। সে কারণে ‘নগদ’ এর গ্রাহক সংখ্যা এরই মধ্যে তিন কোটি পেরিয়েছে। প্রতিদিনের গড় লেনদেন উঠেছে তিনশ কোটি টাকায়।
যে কোনো মোবাইল থেকে *১৬৭# ডায়াল করে তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাকাউন্ট খোলা, ডিজিটাল কেওয়াইসি’র প্রচলন, অ্যাকাউন্ট না থাকলেও যে কোনো নম্বরে টাকা পাঠানো- দেশের আর্থিকখাতে এসব ডিজিটালাইজেশন ‘নগদ’ ই চালু করেছে। গত কয়েক বছর সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবায় যে অগ্রগতি ঘটিয়েছে, এমন অসংখ্য সজীবের জন্যে ডিজিটাল জীবন নিশ্চিত করে এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘নগদ’।
‘আমাদের লক্ষ্য সাধারণ মানুষের জীবনাচরণে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করা। তার জন্যে লেনদেনকে সহজ সাধ্য এবং সাশ্রয়ী করতেই ‘নগদ’ উদ্ভাবন নিয়ে সবচেয়ে বেশী কাজ করছে।’ বলছিলেন ‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক।
অধিকাংশ ডিজিটাল কোম্পানি যেখানে শহরকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা সাজায়, ‘নগদ’ সেখানে সেবাটি তৈরি করেছে সব পর্যায়ের মানুষের জন্যে। ‘বালিশের নীচে টাকা রাখার যে সংস্কৃতি সেটাকে বদলে দিয়ে ওই টাকা যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে কাজে লাগে সেই প্রচেষ্টা নিয়ে এগুচ্ছি আমরা, যোগ করেন মিশুক।
মিশুকের হাত ধরেই ‘নগদ’ এর স্বপ্ন দেখার শুরু হয়েছে এবং বাস্তবতাও মিলেছে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাস্তবতা দেওয়ার চিন্তাও এক্ষেত্রে তার বিবেচনায় ছিল, জানান তিনি।
সব কাজ তো কেবল সরকারই করবে না। সরকারের নির্দেশনাকে ধারণ করে সেটিকে বাস্তবতায় রূপান্তরের দায়িত্ব অন্যদেরও নিতে হবে। সে কারণে একটি সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকারের ভিশন বাস্তবায়নে কাজ করছি বলেন মিশুক।
ডাক বিভাগ, মিশুক আর ‘নগদ’ এর ভাবনা এবং সে অনুসারে কার্যপরিচালনা সফলতায় রুপান্তর করেছে ‘নগদ’। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ মডেলে পরিচালিত এই ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসটি ডিজিটালা সেবায় সরকারকে উদাহরণ তুল্য সাফল্য এনে দিয়েছে, বিশেষ করে লেনদেনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে।
সে কারণে একের পর এক সরকারের সকল আর্থিক সেবা কার্যক্রম একের পর যুক্ত হচ্ছে ‘নগদ’ এর সঙ্গে। সরকারের যে কোনো ভাতা বিতরণ করতে হবে- এক সময় মহাকর্মযজ্ঞের এসব কাজের সহজ সমাধান এখন ‘নগদ’।
শুরুটা হয়েছিল গত বছর কভিডের সময় কাজ হারানো ৫০ লাখ মানুষকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা বিতরণের মাধ্যমে। চারটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানিকে এ কাজে বেছে নেওয়া হলেও ‘নগদ’-কে দেওয়া হয় সবচেয়ে বেশী অংশ বিতরণের দায়িত্ব। আসলে এটি ছিল মাত্র এক বছরের একটি কোম্পানির দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষাও। সেই পরীক্ষায় ‘নগদ’ এতোটাই সফল হয়েছে যে তারপর থেকে সব ভাতা, সহায়তা, উপবৃত্তি যা কিছু বিতরণ হচ্ছে সবকিছুতে ‘নগদ’-কেই ডেকেছে সরকার।
দীর্ঘদিন প্রাথমিক পর্যায়ের উপবৃত্তি বিতরণে যে জঞ্জাল জমেছিল তা পরিস্কার করতেও ‘নগদ’-কে ডেকে নেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায় গত ডিসেম্বরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর ‘নগদ’-কে দেড় কোটি শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির দায়িত্ব দেয়। দুই মাসেরও কম সময়ে এমন এক ডেটাবেজ প্রস্তুত হয় যেখানে সকল শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন ও অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধিন করা হয়েছে। এই ডেটাবেজটি আগামী বহু বছর সরকারকে সুবিধা দেবে। ইতিমধ্যে উপবৃত্তি বিতরণও শুরু হয়ে গেছে। ডিজিটাল এই সেবা পেতে গ্রাহকের কিন্তু একটি টাকাও বাড়তি খরচ হচ্ছে না। সরকারের খরচও কমে এসেছে এক তৃতীয়াংশে।
তাছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর চার ধরণের ভাতা বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘নগদ’কে। এর আগে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের মাধ্যমে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এর ৯০তম জন্মদিনে দুস্থ নারীদের সহায়তা প্রদান, কভিড টেস্টের বিল পরিশোধ, সরকারের সকল ধরণের সেবার বিল দেওয়া সবখানেই এখন কেবল ‘নগদ’ আর ‘নগদ’। সব মিলে ‘নগদ’ হয়ে উঠেছে সরকার ও সাধারণদের আস্থার অবিচল জায়গায়।
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে জন্ম হয়েছিল ‘নগদ’ এর। সেবার পর সেবা আর উদ্ভাবনের পর উদ্ভাবন যোগ করে আজ এটি দেশের দ্বিতীয় সেরা ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটর যেখানে মোট গ্রাহকের ৩০ শতাংশ যুক্ত আছে। গ্রাহক ভালোবাসায় চলতি বছরের মধ্যেই মার্কেট শেয়ার ৫০ শতাংশে উন্নিত করার লক্ষ্য নিজে কাজ করছেন তানভীর আহমেদ মিশুক।
কালের কন্ঠ