ট্রেড মার্কেটিং বাংলাদেশের মার্কেটে বিশেষ করে ব্র্যান্ড কমিউনিকেশনে, সেলস চ্যানেল পার্টনারশীপে (ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার, রিটেইলার) এবং সর্বোপরি সেলসে এ অনেক বড় রোল প্লে করে থাকে। স্পেশালি এফএমসিজি, এমএফএস, টেলিকমিউনিকেশন ইন্ড্রাস্টির বেশির ভাগ ব্র্যান্ড এর মার্কেটিং বাজেটের একটি চাংক এই খাত এ ইউটিলাইজড হয়ে থাকে বলে আমরা সবাই জানি।
আজকে এই বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছাটা এসেছে মূলত এই গ্রুপে থাকা বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে/কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে পড়া প্রিয় ভাইবোনদের জন্য। কারন, আমরা সবাই জানি এবং অনুভব করি মার্কেটিং এমন একটি বিষয়, এতটা ভারসেটাইল এর Depth যেটি শুধুমাত্র ইউনিভার্সিটিতে/ কলেজে বইয়ের ডিফিনেশনে, থিউরিতে এবং বিদেশী কেস স্টাডিতেই যদি সীমাবদ্ধ থেকে যায় তাহলে আফটার গ্রাজুয়েশন আমরা যখন এই ফিল্ডে কাজ করতে আসি তখন অনেক ছোট ছোট, কিন্তু দরকারি বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে নলেজ গ্যাপ থেকে যায়। অন্তত আমি এই গ্যাপগুলো নিয়ে নিজে প্রবলেম ফেস করেছি, অন্যদের ও ফেস করতে দেখেছি এবং আমি বিশ্বাস করি একাডেমিক স্টাডিস এর সাথে ইন্টারেক্টিভ লার্নিং হতে যাচ্ছে আগামি দিনের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিক পরিবর্তন ।
আরেকটি বিষয় মনে হচ্ছিল, এই ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে যদি, এমন একটি গ্রুপে সবার সাথে আলোচনা করা যায়, তাহলে এই মুহূর্তে মার্কেটিং বিষয়ে পড়াশোনা করা প্রিয় ভাইবোনদের এবং আমরা যারা মার্কেটিং এর ফিল্ডে অল্প সময় ধরে কাজ করছি তারা এই ইন্ড্রাস্ট্রিতে অনেক দিন ধরে কাজ করা বড় ভাইবোনদের অভিজ্ঞতা গুলো/ চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে এবং সর্বোপরি নতুন কিছু জানতে পারব, শিখতে পারব।
হ্যাঁ, এটা সত্য যে বাংলাদেশ এবং এই দেশের মার্কেটে ডিজিটাল কমিউনিকেশন/মার্কেটিং এখন অনেক বড় ধরনের ইমপ্যাক্ট ক্রিয়েট করছে। স্পেশালি করোনা পূর্ববর্তী এবং করোনাকালীন সময়ে আমরা অনেক লোকাল এবং মাল্টিন্যাশেনাল ব্র্যান্ডগুলোকে দেখেছি ডিজিটাল কমিউনিকেশন -এ নিজেদেরকে মর্ডানাইজড হতে, ইম্ফাসাইজ করতে যা এপ্রেশিয়েট করার মত।
কিন্তু, এদেশের প্রেক্ষাপটে, রুট টু মার্কেট – সেলস স্ট্রেটিজিতে ট্রেড মার্কেটিং ও কিন্তু একটি ইম্পরট্যান্ট গেম চেঞ্জার বা ডার্ক হর্স । কারন হিসেবে আমার ধারণা, সেলস চ্যানেল পার্টনারা (ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার, রিটেইলার)। আমাদের দেশের এফএমসিজি, এমএফএস কিংবা টেলিকমিউনিকেশন খাতের মেন্যুফেকচারদের বেশীর ভাগ সেলস রেভিনিউ এর অংশ কিন্তু এই সেলস চ্যানেল পার্টনারদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
যদি এফএমসিজি খাত নিয়ে বলতে চাই, এই খাত এদেশে নির্ভরশীল হচ্ছে রিটেল চ্যানেল এবং হোলসেল চ্যানেল এর উপর। আর দেশের এফএমসিজি রিটেলকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
১। Organized Retail ( স্বপ্ন, আগোরা, মিনা বাজার এই ধরনের সুপারস্টোর)
২। Unorganized Retail ( ১। Neighborhood shops বা ঘরের পাশের মুদির দোকান ২। Cluster shops বা একটি নির্দিষ্ট বাজারে একসাথে অনেকগুলো মুদির দোকান)
মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে এফএমসিজি রিটেল চ্যানেল এ সবচেয়ে বেশী মার্কেট /স্টোর কাভার করে ইউনিলিভার আফটার BAT ( যার সংখ্যা ৩.৫ লাখ এর আশেপাশে ) [ Source ঃ 1 Area Manager-Sales currently works in a Multinational FMCG Company ]
গুগলের মতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের GDP ছিল ৩২৪.২ বিলিয়ন ইউএসডি এবং May 17, 2021 পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের income per capita ছিল $ ২২২৭ । তারমানে হচ্ছে আমাদের ইকোনমি একটি growing economy এবং দিন দিন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । যার ফলশ্রুতিতে আমরা প্রায় প্রতিদিনই রিটেল আউটলেটগুলোতে নিত্য- নতুন এফএমসিজি প্রোডাক্ট এর উপস্থিতি লক্ষ্য করছি (ক্যাটাগরি এক্সপানশান, লাইন এক্সটিনশান, নিউ ব্রান্ড ডেভ্লপমেণ্ট) । তার মানে হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে বা লাইনে একজিস্টিং বা অনেকদিন ধরে মার্কেটে টিকে থাকা BRAND গুলো প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জ ফেস করছে মার্কেট শেয়ার ধরে রাখার । যেমন ঃ Retail এ, Trade Shelf এ, রিটেইলার এর চাহিদায়, কাস্টমার এর মাইন্ড শেয়ারে, Product Visibility র ক্ষেত্রে দারুণ কম্পিটিশন হচ্ছে ।
আবার, একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে যখনই নিত্য-নতুন BRAND বাজারে ঢুকেই স্বাভাবিক ভাবে ওই ব্র্যান্ড এর সেলস এবং মার্কেটিং টীম ক্যাটাগরির সেলস শেয়ার নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে । তার জন্য ওই Brand কে রুট টু মার্কেট স্ট্রেটিজি, ট্রেড স্ট্রেটিজি, সেলস স্ট্রেটিজিতে বিভিন্ন ধরনের Trade offers, Trade promotions , Product Merchandising, Point of Sales Materials (POSM) Branding, Trade show , Brand Promoter এক্টিভিটিস করে থাকে । এই সব এক্টিভিটিস গুলোর মধ্যে আজকে ৩ টি ইম্পরট্যান্ট এক্টিভিটিস নিয়ে বিশদভাবে বলতে চাই,
বেশীর ভাগ Brand ই কমন এক্টিভিটিস ফলো করে সেটা হচ্ছে Trade Offer । কারণ আমাদের দেশের রিটেলে এখন সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি (কিং) হচ্ছে একজন ঝানু রিটেইলার/ দোকানদার । কারন এই মানুষটিই পারে একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির নতুন প্রোডাক্ট কে কোন ধরনের Brand Awareness , Recall ছাড়া একজন কনজিউমার এর কাছে বিক্রি করতে (Push Sell ) । আর তাই জন্যই একজন ঝানু রিটেইলার নতুন প্রোডাক্ট তার দোকানে তুলতে গেলে SR এবং TSM এর মাথা খেয়ে ফেলে Trade Offer এর জন্য এবং কোম্পানি ও তার নতুন পণ্যের বিক্রির স্বার্থ -এ এই কাজ করে। আর এর মাধ্যমে কোম্পানি তার নতুন প্রডাক্টটি বাজারে প্রেনিট্রেশনের সুযোগ করে মার্কেট শেয়ার দখল এর চেষ্টা চালায় ।
Trade Marketing এ এফএমসিজি খাতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে Product Merchandising । কোম্পানি চায় তার পণ্য রিটেইলার এর দোকানের এক কোনায় যেন পড়ে নাহ থাকে। কারন , রিটেল শপ এ Product ভিজিবিলিটি এনসিউর করা সেলস স্ট্রেটিজির খুবই এসেন্টিয়াল একটা টাস্ক । এফএমসিজি কনজিউমাররা যখন দোকানে যায় কিছু কিনতে এবং সেই প্রোডাক্ট টি যত সুন্দরভাবে সেলফ এ ভিজুয়ালি দারুন Attractive হয়ে থাকে তাকেই কল করতে চায় বা তার বায়িং কন্সিডারেশনে জায়গা করে নেয়। উদাহরণ ঃ ম্যাগী নুডুলস কখনই চাইবে নাহ সারাবছর ধরে প্রোডাক্ট এর গুণ গান করে ( TVC , Billboard , Online Ad etc ) Consumer এর Brand Awareness , Recall ক্রিয়েট করে শুধুমাত্র Product Placement / Shelf এর ভালো জায়গায় নাহ থাকার জন্য কনজিউমার মিঃ নুডুলস (পরাণ) (Nestlé) কিনুক । এই জন্যই বেশীর ভাগ রিটেল শপে খেয়াল করলে লক্ষ্য করবেন এই দুইটি ব্রান্ড এর কম্পিটিশন, Product Placement / Shelf এ নিজেদের খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখা হয় ।
Point of Sales Materials (POSM) Branding হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের Marketing Materials যা রিটেইল স্টোরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে কনজিউমারের এটেনশান ক্যাচ করার জন্য, পণ্য বা সেবার পরিচিতি, ব্যবহার, পদ্ধতি জানানোর জন্য যেটি পণ্য/সেবা বিক্রির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কি ধরনের POP Materials রিটেইল স্টোরে ব্যবহার করা হবে সেটা ডিপেন্ড করে ট্রেড স্ট্রেটিজি, ইন্ড্রাস্ট্রি এবং রিটেল শপের ধরনের উপর। বাংলাদেশে ভিন্ন ভিন্ন ইন্ড্রাস্ট্রির / ক্যাটেগরির বিজনেসের POSM Branding এর পদ্ধতি এবং আইটেম ভিন্ন ভিন্ন । যেমন, আপনি যদি রড-সিমেন্টের দোকানে যান – দেখবেন তাদের শপ সাইনেজ, দোকানের ভিতরে ক্যালেন্ডার, ঘড়িতে বা দোকানের দেয়ালে পেন্টিং করা ব্র্যান্ডদের এর উপস্থিতি। আবার যদি এমএফএস সেবা দেয়া রিটেল বিজনেসগুলোতে গেলে দেখবেন দোকানের সামনের অংশে উপরে বিকাশ / নগদ এর সাইনেজ পিভিসি, দোকানের টেবিলে স্টিকার, দেয়ালে পোস্টার ইত্যাদি ।
একটা কথা না বললেই নয়, বিকাশ এর এক্টিভিটি অবসারভ করলেই আপনি বুঝতে পারবেন ওরা কতটা এগ্রেসিভ ভাবে রিটেল পয়েন্টে POSM Branding করে থাকে। বেশীর ভাগ রিটেল আউটলেটে তারা এতধরনের আইটেম দিয়ে তাদের উপস্থিতি জানান দেয় যে খেয়াল করলে দেখবেন দোকানের অন্তত ৩০ – ৫০% অংশ (কোন কোন ক্ষেত্রে আরও অধিক) তাদের Branding র দখলে , যেটি সত্যি শিক্ষণীয় এক্সজিকিউশান। আর এর মাধ্যমেই সে গ্রাহকদের মাইন্ড শেয়ারে বিশাল একটা অংশ দখল করে আছে।