Written by 4:27 pm News

রবির সঙ্গে ৮ ঘণ্টার নিলাম যুদ্ধে জিতলো গ্রামীণফোন

Press briefing of BTRC
Walton and Herlan Ads

Spectrum৮ ঘণ্টার যুদ্ধের অবসান হলো। গ্রামীণফোন ও রবির মধ্যকার এই যুদ্ধে জয়ী হলো গ্রামীণফোন। ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ৯ নম্বর ব্লকের ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ (স্পেক্ট্রাম) বরাদ্দ পাওয়ার জন্য দুই অপারেটর সোমবার (৮ মার্চ) দুপুর থেকে যুদ্ধে নামে। মাঝ পথ থেকে টেলিটক যুদ্ধে ইস্তফা দিয়ে সরে গেলে ময়দানে থেকে যায় গ্রামীণফোন ও রবি। এই দুই অপারেটরের মধ্যে যুদ্ধ শেষ হয় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য যে নিলাম শুরু হয় ২৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যে, নিলাম শেষে প্রকারন্তরে যুদ্ধ শেষে তা গ্রামীণফোন কিনে নেয় ৪৬.৭৫ মিলিয়ন ডলারে।

১৭তম রাউন্ডে এসে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের দাম ৩০.৭৫ মিলিয়ন ডলার উঠলে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইলফোন অপারেটর টেলিটক নিলাম থেকে সরে দাঁড়ায়। তারপর থেকে এক অর্থে লড়াই শুরু হয় গ্রামীণ ফোন আর রবির মধ্যে। ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।’ সময় গড়াতে থাকে, রাউন্ড বাড়তে থাকে, ডলারের অংকও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে।

নিলাম অনুষ্ঠানে ও হোটেলের লবিতে সবার মুখে একটাই আলোচনা, কোথায় গিয়ে থামবে দুই অপারেটর। অনেকেই বলছিলেন, ৩৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি যাবে না। এর মধ্যেই কেউ নিয়ে নেবে। কিন্তু অনেকের মুখের কথা আর সত্যি হয় না, এক সময় প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গে দাম ৪০তম রাউন্ডে ৩৬.৭৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে শেষ হয় ৫০তম রাউন্ড। দর ওঠে ৩৯.২৫ মিলিয়ন ডলার। সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে শেষ হয় ৬০তম রাউন্ড। এ সময় দর ওঠে প্রতি মেগাহার্টজের জন্য ৪১.৭৫ মিলিয়ন ডলার, যা শুরু হয় ২৭ মিলিয়ন ডলারে। রাত ৮টায় শেষ হয় ৭০তম রাউন্ড। তরঙ্গের দাম গিয়ে ঠেকে ৪৪.২৫ মিলিয়ন ডলার। ৮০তম রাউন্ড শেষ হয় রাত ৮টা ৩৩ মিনিটে, দাম ওঠে ৪৬.৭৫ মিলিয়ন ডলার। এই রাউন্ডে রবি নো কার্ড দেখায়। ৮১ তম রাউন্ডে গ্রামীণফোন ও রবি দুই অপারেটরই নো কার্ড দেখালে গ্রামীণফোন জয়ী হয়। প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গ গ্রামীণফোন কিনে নেয় ৪৬.৭৫ মিলিয়ন ডলারে।

৯ নম্বর তথা শেষ ব্লকটা নিয়ে কত বড় যুদ্ধ হয়েছে তা বোঝার জন্য একটা চিত্রই যথেষ্ট। ৪০তম রাউন্ড পর্যন্ত গ্রামীণফোন ও রবি তাদের ‘ইয়েস’ লেখা বোর্ড তুলতে সময় নিলেও, ৪০-এর পর থেকে থেকে তাতে গতি আসে। ৫০তম রাউন্ডের পরে একজন ইয়েস বোর্ড তুললেই, সঙ্গে সঙ্গে অন্য অপারেটর তাদের ইয়েস বোর্ড দেখায়। যদিও বোর্ড তোলার জন্য একেক রাউন্ডে কখনও ৪ মিনিট, কখনও ৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া ছিল। যত বেশি সংখ্যক রাউন্ডের দিকে নিলাম গড়িয়েছে ততই ভাবনা-চিন্তার জন্য সময়ও বাড়ানো হয়। নিলামে পরপর দুইবার নো ডাকলে নিলাম প্রক্রিয়া থেকে সেই অপারেটরকে চলে যেতে হয়। একবার ইয়েস একবার নো ডেকে নিলাম কার্যক্রমে টিকে থাকা যায়। নিলামের শুরুর দিকে ইয়েস বোর্ড তুলে, কখনও নো বোর্ড তুলে নিলামে টিকে থাকা গেলেও পরের দিকে, বিশেষ করে ৪০তম রাউন্ডের পরে বোর্ডে শুধু সবুজ রঙের ‘ইয়েস’ ‘ইয়েস’ লেখা দেখা যায়। নিলাম অনুষ্ঠানে প্রতি রাউন্ডে দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার করে দাম বাড়িয়ে ডাক শুরু করে বিটিআরসি।

নিলাম অঙ্গণে অনেকের মুখেই আলোচনা, গ্রামীণফোন ও রবি দুটি অপারেটরই পুঁজি বাজারে আছে। ফলে কেউ সহজে হারতে চাইবে না। হারলেই পুঁজি বাজারে তার প্রভাব পড়বে। ফলে দাম যতই উঠুক, দুই অপারেটরই নিলামে জিতে তরঙ্গ কিনতে চাইবে। তরঙ্গ কিনতে না পারলে, বাজারে বার্তা যাবে ওই অপারেটরের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। দুই অপারেটরের মধ্যে শুরু হওয়া লড়াই শেষ হয় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে। যা শুরু হয়েছিলো দুপুর ১২টার কিছু পরে।

নিলাম অনুষ্ঠানে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী এরিক অস, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীনকে উপস্থিত থেকে নিলাম কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা গেলেও ছিলেন না গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী। গ্রামীণফোনের টেবিলে শুধু একজন ছিলেন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, আর সবাই ছিলেন বিদেশি।

রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, নিলামে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি আয় হয়েছে। ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ৭.৪ মেগাহার্টজ এবং ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ২০ মেগাহার্টজ ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, বিটিআরসির কমিশনার, মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Share this on
Close