Written by 2:51 am Brand Practitioners, Buzz

সুপারশপগুলো ব্র্যান্ডিং এবং বাস্তবতা

Nulla pariatur. Excepteur sint occaecat cupidatat non proident, sunt in culpa qui officia deserunt mollit anim id est laborum.

Share this on
Walton and Herlan Ads
কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়লাম, জেমকন গ্রুপের ’মিনা বাজার’ রহিম আফরোজের ’এগোরাকে’ কিনে নিচ্ছে। যদি তাই হয়, তবে এটি হবে বাংলাদেশের ওরগানাইজড গ্রোসারি চেইন শপের সেক্টরে প্রথম ইন্টার একুইজেশন। ২০০১ সালে চালু হওয়া এগোরা এই দেশের প্রথম গ্রোসারি সুপার চেইন শপ। আমি যখন ঢাকা সিটি কলেজে ইন্টারের ছাত্র, সেই সময়ে রাইফেলস স্কয়ারে প্রথমবারের মত এগোরাতে শপিং করতে গিয়ে খুবই মুগ্ধ হয়েছিলাম। চারপাশের সেলফগুলো কি পরিপাটি করে সাজানো, এয়ার কন্ডিশন আর এয়ার ফ্রেশনারের উপস্থিতি, হালকা স্বরে মিউজিক বাজছে, ফ্লোরে এক কনা ধুলোও নেই, সুন্দরী সেলস গার্লরা পরিপাটি ইউনিফম পড়ে হাসিমুখে কথা বলছে, সব মিলিয়ে মনে হলো যেন বিদেশে চলে এসেছি!
কিন্তু সেই এগোরাই (সঠিক উচ্চারণ এগোরা, আগোরা নয়) এখন বিলুপ্তির খাতায় নাম লেখাচ্ছে, যেমন লিখিয়েছিলো ’নন্দন’ সুপারশপ। অনেকেরই হয়তো মনে আছে, একটা সময় নন্দন খুবই জনপ্রিয় সুপারশপ ছিলো এ শহরে, তারপর হঠাৎ করে এটি একটা একটা করে সবগুলো স্টোরই বন্ধ করে দিলো। নতুন প্রজন্মের মার্কেটাররা হয়তো জানেনও না নন্দনের নাম!
তাহলে কি রহিম আফরোজ তাদের নতুন স্টার্টাপ “ডেলিগ্রাম” এ পূর্ণ মনোযোগ ও ফান্ডিং দেবার জন্য তাদের আপাতঃ লস প্রজেক্ট এগোরাকে বিক্রি করে দিচ্ছে? আবার এমনও হতে পারে, রহিম আফরোজের বিজনেস পার্টনার Brummer & Partners (যারা কিনা এগোরোর ৭০% শেয়ারের মালিক) এগোরাকে বিক্রি করে দিতে বাধ্য করছে। গত মাসে প্রকাশিত ডেইলি স্টারের নিউজের বরাতে সে রকমটাই জানা যায়।

আমি এগোরাকে বিসিজি ম্যাটরিক্সের ছকেঁ ফেলে একে লস প্রজেক্ট বলেছি। আমার ধারনা, BCG Matrix এ এগোরা রয়েছে কুকুরের কাতারে, যার মার্কেট গ্রোথ এবং মার্কেট শেয়ার উভয়ই কমতির দিকে! আর এই কারণেই এগোরার সুইডিশ মালিক এটিকে বিক্রি করার সিন্ধান্ত নিয়েছে। (যেসব ব্র্যান্ড প্যাকটিশনার্সরা ভুলে গেছেন BCG Matrix কি, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য কমেন্টের ঘরে ছবি দিলাম একটা।)

এগোরা বেচে দেয়ার সংবাদটা পড়ামাত্রই আমি কিছু জিনিস চিন্তা করলামঃ
এগোরার ব্র্যান্ড পজিশনিং কি? তার আগে আসুন, সংক্ষিপ্তাকারে একটা তুলনামূলক পর্যালোচনায় যাইঃ
ক) এসিআই গ্রুপের স্বপ্ন সুপার শপ এই মূহুর্তে নিঃসন্দেহে দেশের পয়লা নম্বর গ্রোসারি সুপারশপ ব্র্যান্ড। এদের একটা শক্ত ব্র্যান্ড পজিশনিং আছে, কষ্টের টাকায় শ্রেষ্ঠ বাজার। এই ট্যাগ লাইন দ্বারা তারা দেশের আপামর মধ্যবিত্ত সেগমেন্টকে এড্রেস করেছে; কারণ এর কাউন্টারপার্ট এগোরা, ইউনিমার্ট এরা হচ্ছে সমাজের ধনী ও হাই সোসাইটির গ্রোসারি শপিংয়ের জায়গা। মধ্যবিত্তদের জন্য সেখানকার জিনিসপত্রের দাম তখনো নাগালের বাইরেই ছিলো।
ঠিক সে সময়ে স্বপ্ন আত্নপ্রকাশ করলো, দামও বেশ রিজনেবল, আর প্রচুর ডিসকাউন্ট! স্বপ্নের মত এত বিপুল পরিমান ডিসকাউন্ট দেশের আর কোন সুপারশপ দেয় বলে মনে হয় না। প্রসঙ্গত একটা তথ্য দেই, অনেকেই হয়তো জানেন না, ধানমন্ডি ল্যাব এইডের পেছনে যে স্বপ্ন আছে, সেখান থেকে স্থানীয় টং দোকানের চা ওয়ালারাও বাজার করেন, তারা স্বপ্ন থেকে চিনি-চা-দুধ এসব কেনেন। ভাবা যায় এগ্লা?
খ) মিনা বাজারের একটা শক্ত পজিশনিং হচ্ছে, এরা সেইফ ফুড (অরগানিক ফুড, ফ্রেশ ফুড, ক্যামিকেল-ফ্রি ফুড, অথেনটিক ফুড) প্রভাইড ও প্রোমোট করে থাকে, ষ্টোরের ভেতরে ঢুকলেই আপনি দেখতে পাবেন এই জাতীয় নানা ভিজুয়াল, তারা সাধারনত সেফ ফুডের মেসেজটাই তাদের টিজির সাথে কমিউনিকেট করে থাকে। এদের অন্যতম ইউএসপি হচ্ছে, মিনা বাজারই প্রথম গ্রোসারী শপিংয়ে হোম ডেলিভারী দেয়া শুরু করে মিনাক্লিক ডট কম এর মাধ্যমে। (এমনকি কাস্টমাররা স্রেফ ফোন করেও অর্ডার করতে পারে। থিংক এবাউট বাসার বুয়া, যার জন্য অনলাইনের চাইতে ফোনে অর্ডার করা সহজতর।)
এটিকে তারা ইদানিং বেশ চমৎকার করে ফাইন টিউনিং করছে। এর নিজস্ব এপ আছে, ডেলিভারী কাভারেজ বাড়িয়ে ঢাকা (পুরান ঢাকাসহ) আর ঢাকার বাইরে প্রায় ১০০০ টা লোকেশনে তারা পৌছেঁ গেছে। এমনকি আমার দাদু বাড়ি টাংগাইল জেলায়ও নিয়ে গেছে! ভাবুন, মফস্বল এলাকার মানুষজন এখন অনলাইনে কাঁচা বাজার করছেন! উক্ত এলাকার টিজির জন্য এটা বিরাট পাওয়া! শুধু গ্রোসারি না, তারা মিনা সুইটস আর বইও বিক্রি করছে অনলাইনে। এ সেক্টরে তারা চালডাল ডট কমের সাথে ফাইট করছে। নাকি ভাইসভার্সা? 1f615 (এর বেশী বল্লে মিনা বাজারের মুফতে পাবলিসিটি করা হবে। এমনিতেই কালকে থেকে আফসোস হচ্ছে সানলিল্ক এর মুফতে ছয় ছয়টা বিজ্ঞাপন দিসি বলে! 1f641 )
অবশ্য সেইম মেসেজটা (সেইফ ফুড) কৃষিবিদ গ্রুপের সুপারশপও কমিউনিকেট করে থাকে, তবে তারা বোধকরি একেবারেই নীশ বাজারের প্লেয়ার!
গ) প্রিন্স বাজারও অনেকটা স্বপ্নের মতই পজিশনিং আর টিজি সিলেক্ট করেছে, মধ্যবিত্ত (উচ্চ ও নিম্ন উভয়ই), তবে তারা একটা দীর্ঘ সময় শুধুমাত্র নীশ এলাকায় ব্যবসা করেছে, আমাদের মিরপুরে। তারপর তারা শ্যামলী ও ধানমন্ডির দিকে এগিয়েছে। মিরপুরে প্রিন্স বাজারের আধিপত্য রীতমতো চোখে পড়ার মত। মিরপুর ১ নং প্রিন্স বাজারের মত ক্রেতার এত উপচে ভীড় আমি দেশের আর কোন সুপারশপে দেখতে পাই না।
ঘ) ইউনিমার্টঃ এদের ব্র্যান্ড পজিশনিং হলো The Ultimate Retail Experience মানে পশ, এক্সক্লুসিভ আর ইউনিক শপিং এক্সপেরিয়েন্স দেয়া। তাই ইউনাইটেড গ্রুপের এই সুপারশপের টিজি হলো সমাজের উচ্চবিত্ত ও ফরেইনার শ্রেনী। এই কারনে তারা জীবনে কোনদিন গুলশান, বনানী, ধানমন্ডির বাইরে যাবে না। সিটিজিতে গেলে ব্রান্চ সবার আগে খুলবে খুলশীতে।
আর এদের ইউএসপি হলো, ম্যাসিভ ভ্যারাইটিজ। সামান্য একটা মধুরও প্রায় ৫০ টি ভিন্ন ভিন্ন দেশী-বিদেশী ব্র্যান্ড পাবেন আপনি এইখানে। আমি ওখানে গেলে আয়েশ করে তাদের চিজের ভ্যারাইটিজ দেখি!
পৃথিবীর হেন কোন রিটেইল ব্র্যান্ড নাই যেটা আপনি এখানে পাবেন না। আবার নিজস্ব কার পারকিং আছে, নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। এদের গুলশান ২ শাখায় সামুদ্রিক বারমান্ডি মাছ দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে গেছিলাম, কারণ আমি জানতাম এটা বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, আমি সিডনীতে থাকার সময় প্রায়ই খেতাম এই মাছ। তারা জানালো, এই জিনিস তারা অষ্ট্রেলিয়া থেকেই আমদানী করে থাকে এদেশে থাকা এক্সপ্যাটদের জন্য। বলাবাহুল্য, দামটা আকাশচুম্বি নয়, রীতিমত মহাকাশচুম্বী ছিলো।
ঙ) শুরুর প্রশ্নে ফিরে যাই। এগোরার ব্র্যান্ড পজিশনিং কি? আমি আসলে অনেক খুঁজেও তেমন কোন পজিশনিং আইডেন্টিফাই করতে পারলাম না যেটা তাদেরকে একটা শক্ত অবস্থান দিয়েছে, দেশের অন্যান্য সুপারশপ ব্র্যান্ডগুলোর যেমনটা আছে। অথচ এই দেশের প্রথম সুপারশপ হিসেবে তাদের ক্ষেত্রে এটা হবার কথা ছিলো না। তাদের ওয়েব সাইটে লেখা একটা খেলো বাক্য – কোয়ালিটি ইউ ক্যান ট্রাষ্ট! এই মোটোকে তাদের কোন ফিজিক্যাল স্টোরে লেখা আছে বলে মনে পড়ে না, তাদের কোন টিজি বা প্রডাক্টকেও স্পেসিফিকলি রিপ্রেজেন্ট করে না, তাই ধারনা করছি, ওয়েব সাইট ডেভেলপার এই বাক্যটা নিজের ইচ্ছেমতো বসিয়েছে, তাদের ব্র্যান্ড বিভাগ নয়। তবে এগোরার কাস্টমার সার্ভিস বেশ উন্নত মানের, এমনকি স্বপ্নের চাইতেও বেটার মনে হয়েছে। (স্বপ্ন মেবি ক্রেতার চাপে কাস্টমার সার্ভিসের দিকে ফোকাস করতে হিমশিম খায়!)
তার মানে কি গত প্রায় কুড়ি বছরেও এগোরা কোন শক্ত ব্যান্ড পজিশন বানাতে পারে নি? যদি তাই হয়, তবে এর চাইতে বড় ব্যর্থতা এগোরোর ইতিহাসে আর নেই। অথচ ২০১১ তে এই এগোরাই দেশের তৎকালীন অন্যতম জনপ্রিয় সুপারশপ চেইন PQS কে কিনে নিয়েছিলো, আর ২০১৫ তে Bangladesh Brand Forum একে দেশের সেরা রিটেইল ব্র্যান্ড হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলো।
শুরুতে তারা নাকি প্রায় ৫০ হাজার কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সবজি ও মাছ-মাংস আনতো, কিন্তু তারা এই বিষয়টাকে মিনা বাজরের মত অতটা বুদ্ধিদীপ্তভাবে প্রোমোট করতে পারেনি। তারা চাইলেই দাবী করতে পারতো, ”সরাসরি কৃষদের কাছ থেকে আমরা পন্য আনি বলে আমাদের খাদ্যপন্যগুলো যেমন নিরাপদ, তেমনি কৃষকরাও পায় তাদের ন্যায্য দাম”।
আর তাদের মোটো হতে পারতো – ”কৃষকের গোলাঘর থেকে সরাসরি আপনার রান্নাঘর।” কিন্তু আফসোস, তারা এইসবের ধার দিয়েও কোনদিন যায়নি। 1f641
এগোরার আরেকটা সমস্যা হলো, এদের কোন ছোট স্টোর নেই, যতগুলোতেই গেছি, দেখেছি বিশাল বড় বড় জায়গা নিয়ে তারা স্টোর দিয়ে বসে আছে, বিক্রি বাট্টা হোক আর না হোক। মানে খামোখা খরচ বাড়িয়েছে, সে তুলনায় আয় বাড়াতে পারেনি। তারা যে বড় জায়গাজুড়ে দোকান দিচ্ছে, সেটাকেও তারা ইউএসপিতে রূপান্ত করে কমিউনিকেট করতে পারতো টিজির কাছে, কিন্তু তারা সেটাও করেনি।
অপরদিকে, স্বপ্ন চালু করেছে “স্বপ্ন এক্সপ্রেস”। শুরুটা যদিও করেছিলো বড় পরিসরে, বড় জায়গা নিয়ে। কিন্তু যেখানে টিজি কম, সেখানে তারা বসিয়েছে স্বপ্ন এক্সপ্রেস, ছোট্ট পরিসরে, এগোরার মত সব জাগায় বেহুদা ফুটবল খেলার মাঠের সমান স্পেস নিয়ে দোকান দিয়ে বসে নাই। এটা তাদের অন্যতম ইউএসপি! আমার বাসার সামনেই আছে একটা, প্রডাক্ট ভ্যারাইটি অনেক কম, কিন্তু ক্রেতা নেহায়েত কম নয়। আর এখানেই তাদের স্বার্থকতা।
স্বপ্ন এক্সপ্রেস ওয়াজ আ ব্রিলিয়ান্ট মুভ ফ্রম এসিআই। আমি যতদূর জানি, আগামী ৫ বছরের ভেতর তারা দেশের সবগুলা মফস্বল এলাকাতে স্বপ্ন এক্সপ্রেস বসিয়ে দেবে। হয়তো এরপর মিনা বাজারও দিবে, নাম দিবেঃ মিনা বাজার এক্সপ্রেস, স্বপ্নের পাশেই! 1f603

তাহলে মুদি দোকানের ভবিৎষত কি?

“স্বপ্ন এক্সপ্রেস” এর কারণে হুমকির মুখে পড়তে শুরু করেছে রেগুলার রিটেইল শপগুলা, মানে পাড়ার মোড়ের মুদি দোকানগুলো। যে কারণে এমাজনকে ভারতীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা মুর্দাবাদ জানিয়েছে, সম্প্রতী জেফ বাজোসের ১ বিলিয়ন ডলারের অনুদানের প্রস্তাব তারা ফিরিয়ে দিয়েছে, কারণ জেফ চেয়েছে ভারতের সকল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাকে অনলাইনে নিয়ে আসতে। আর ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও জানে, এই কাজটা করলে কি পরিনাম তাদের জন্য অপেক্ষা করছে, তাই তারা জেফের প্রস্তাব প্রত্যাখানই করেনি শুধু, তীব্র সমালোচনাও করেছে।
রিটেইল সুপারশপের তিনটা নতুন ট্রেন্ড আমি লক্ষ্য করেছিঃ i) ছোট পরিসরে সেবাদান (এক্সপ্রেস) ii) অনলাইন অরডার, ফ্রি হোম ডেলিভারি ও নন-ক্যাশ পেমেন্ট iii) নিজস্ব খুচরা পণ্যের ব্র্যান্ডের প্রচলন।
রিটেইল দুনিয়াতে আগামীকে কি ট্রেন্ড আসছে? রিটেইল মার্কেট তো সেচুরেটেড হয়ে যাচ্ছে! একই পন্য স্বপ্ন, মিনা বাজার, এগোরা, প্রিন্স বাজার – সবাই বিক্রি করছে। তাহলে উপায় কি? ভাবুন প্রিয় ব্র্যান্ড প্র্যাকটিশনার্সরা, ভাবা প্র্যাকটিস করুন, এবং ভাবার পর এই গ্রুপে সেটা নিয়ে দু কলম লিখুন। 1f603

তবে পাড়ার মনিহারী বা মুদি দোকানেরও কিন্তু একটা ইউএসপি আছে। কি বলেন তো সেটা?

সেটা হলো, বাকীতে বিক্রি করা। স্বপ্ন হয়তো কখনোই বাকীতে পন্য বিক্রি করবে না, কিন্তু পাড়ার মনিহারী বা টং দোকানগুলো অন্তত এই একটা ক্ষেত্রে স্বপ্নের থেকে এগিয়ে থাকবে, এদের একটা অব্যর্থ সেলস স্ট্রাটেজি হচ্ছে, বাকীতে বিক্রি করা। এটাই তাদের ইউএসপি। আপনি এমন কোন টং বা মুদি দোকান দেখাতে পারবেন না, যারা দিনে ১০ টাকা হলেও বাকীতে বিক্রি করে না। মূলতঃ বাকীর কারণেই তাদের বিক্রি চলে। এটা এমন এক স্ট্রাটেজি, একেবারেই না দিলে ব্যবসায় লস নিশ্চিত, আবার খুব বেশী দিলেও ব্যবসায় লস নিশ্চিত! যারা এর মাঝে ব্যালেন্স করতে পারে, তারাই টিকে থাকে। স্বপ্ন এক্সপ্রেসের চাপে মুদি দোকানগুলো যদি টিকে থাকতে চায়, তবে তাদের উচিত হবে বাকীতে বিক্রির পরিমান বাড়িয়ে দেয়া।
এটা মনে হয় আমাদের খাসলতের দোষ, বাংগালী যেখানেই যায়, বাকীতে খাবার ট্রাই করে, দেশের বাইরেও বাংলা দোকানগুলোতে এই প্রবণতা দেখেছি। বিশেষ করে ভেন্ডরদের কাছ থেকে তারা কখনই ক্যাশ টাকা দিয়ে মাল নেবে না। ১০ ডলার হলেও বাকী রাখবে। অথচ অজিদের দেখেছি, এরা বাকীতো রাখেই না, বরং ভেন্ডরদের আগে থেকেই একটা বড় অংকের জামানত দিয়ে রাখে, তারপর ভেন্ডর সেই জামানত থেকে একটু একটু করে কেটে রাখে অর্ডার অনুয়ায়ী! পুরোই বিপরীত চর্চা!
যা বলছিলাম, বাকীতে বিক্রি করা ব্যতীত পাড়ার মোড়ের দোকানগুলোর নেক্সট মুভ কি হতে পারে? যেমনঃ হক বেকারী অনেক পুরনো ব্র্যান্ড, এরাও নাকি সুপারশপের কাতারে নাম লেখাচ্ছে। এরা পজ মেশিন নিয়ে এসেছে, নিজেদের কার্ড নিয়ে এসেছে। কারণ, কাস্টমার এখন কাডে পে করতে চায়। তাদের বেকারী পন্যই তাদের সুপারশপে বিক্রি করছে।
রিটেইল সুপারশপ ব্র্যান্ড থেকে কনজুম্যার প্রডাক্ট ব্র্যান্ডঃ
আমরা দেখেছি যে, পন্য বিক্রি করতে করতে একটা সুপারশপ ব্র্যান্ড এতটাই শক্তিশালী হয়ে যায় যে, তারা নিজেরাই পরবর্তীতে নিজস্ব প্রডাক্ট ব্র্যান্ড লঞ্চ করে। এ কাজটা করেছে দেশের ২ সুপারশপ জায়ান্ট স্বপ্ন এবং প্রিন্স বাজার। এ জাগাটাতে অষ্ট্রেলিয়াতে দেখেছি Home Brand. পণ্যের মান যে কোন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের চাইতে ভালো না হলেও খারাপ হয় না। আমার প্রিয় আফটার-ডিনার-ডিজার্ট হচ্ছে Dano এর গুড়া দুধ দিয়ে ভাত আর পাকা কলা মিশিয়ে খাওয়া, একদিন ভাবলাম হোম ব্রেন্ডের দুধ কিনে খাই, অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, স্বাদ ডানোর চাইতে এক রত্তি কম নয়, অথচ দাম অর্ধেকেরও কম। এরপর থেকে নিয়মিত হোমব্যান্ড কেনা শুরু করলাম।
বলাই বাহুল্য, জেমকন গ্রুপের যেমন রিটেইল ফুটপ্রিন্ট (ফুড এন্ড এগ্রো) বাজারে আগে থেকেই ছিলো, সেই একই সুবিধা এসিআইয়েরই ছিলো। শুধু ফারাক হচ্ছে, এসিআই তাদের সুপারশপ স্বপ্ন এর মাধ্যমে সেটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে, কিন্তু জেমকন সেটা পারেনি।
এসিআইয়ের কনজুম্যার প্রডাক্ট চাল ডাল আটা ময়দা সুজি লবন, এসব কিন্তু আগে থেকেই বাজারে ছিলো, এবং এসিআই তার কনজুমার প্রডাক্টগুলার একটা বড় অংশ স্বপ্নের মাধ্যমেই বিক্রি করে থাকে। তবে গত বছর থেকে দেখছি তারা এখন স্বপ্ন এর নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়েও একই ধরনের পন্য বাজারজাত করছে। মানে, স্বপ্নের স্টোরে গেলে আপনি এখন স্বপ্ন ব্র্যান্ডেরও চাল, ডাল, আটা, লবন এসব পাবেন। ইট ওয়াজ এনাদার ব্রিলিয়ান্ট মুভ ফ্রম এসিআই। তারা একই প্রডাকশন প্লান্ট থেকে একই পন্য উৎপাদন করছে, কিন্তু বাজারে যাচ্ছে দুইটা ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে! অপারেশনাল খরচ প্রায় একই থাকছে, অথচ এখন আয় হচ্ছে আগের চাইতে বেশী, অপরদিকে বাড়ছে প্রতিটার ব্র্যান্ড ভ্যালু আর ব্র্যান্ড প্রেজেন্স!

তবে এক্ষেত্রে ক্যানিবালাইজেশন হবার আশংকা রয়েছে কি? মানে স্বপ্নের লবনের কারণে যদি পুরনো এসিআই ব্র্যান্ডের লবনের বিক্রি কমেও থাকে, আমার মনে হয় না এসিআই গ্রুপ তাতে নারাজ হবে।

মার্কেটিং নিয়ে ইউনিতে পড়ার সময় আমরা জেনে এসেছি যে, একই কোম্পানির একই ভেরিয়েন্টে একাধিক ব্র্যান্ড লঞ্চ করার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে, দ্রুত মার্কেট শেয়ার করায়ত্ব করা যায়, যেটা এতদিন প্রাণ একচেটিয়া করে এসেছিলো। এবার করছে এসিআই। তারা তাদের সুপার শপের ব্র্যান্ডটাকে এতটাই শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছে যে, আলাদা করে সেই ব্র্যান্ড এর অধীনেই নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য বাজারজাত করা শুরু করেছে। প্রিন্স বাজারও একই কাজ করেছে, তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ে তারা পানি, বোরহানী, লবন, ইত্যাদি বাাজারজাত করে। (তাদের পানির বোতলের ব্র্যান্ডের নাম ”পানি”! Such a creative name! 1f611 )
অথচ গত ২০ বছরেও এগোরার কোন কনজ্যুমার ব্র্যান্ড আমরা দেখতে পাইনি!

সবশেষে মিনা বাজারকে গায়ে পড়ে একটা উপদেশ দেই, আপনারা যদি সত্যিই এগোরাকে কিনে থাকেন, তবে ভুলেও কোনদিন দুইটা ব্র্যান্ডকে মার্জ কইরেন না, দয়াকরে আলাদাই রাইখেন। দুটাকে দুই ব্র্যান্ড হিসেবেই চলতে দেন, আলাদা আলাদা ব্র্যান্ড হিসেবে এদের প্রত্যেকের পজিশনিং নির্বাচন ও শক্ত করুন। তাহলেই মিনা বাজার আরো শক্তিশালি ব্র্যান্ড হিসেবে বাজারে জায়গা করে নিতে পারবে বলে মনে করি।
লিখেছেনঃ Proloy Hasan

Share this on
Close