দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে । সরগরম মিটিং হচ্ছে বোর্ড রুমে । কান্ট্রি হেড, এশিয়া-প্যাসেফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট সহ আরোও কয়েকজন বড় কর্তার সামনে আমার তখন পেটের ভাত নাকে-মুখে ওঠার মত অবস্থা ! এমন সময় মোবাইলে কল আসলো । Unknown number । স্বাভাবিকভাবেই কেটে দিলাম । কয়েক সেকেন্ড পর আবার কল । আবার কেটে দিলাম । কিন্তু আবারও এলো । এবার কিছুটা চিন্তা লাগল । যোগাযোগের জন্য এই একটিই নাম্বার আমার । প্রফেশনাল কিংবা পারিবারিক সবাইকে এই নাম্বারটিই দেয়া । বাবা-মা দূরে থাকেন । বয়স হয়ছে দুজনেরই । বোন-ভাগিনারাও একেকজন একেক জায়গায় । দেশের নিরাপত্তা আর রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে যে কোনও সময়ে যে কোন দূর্ঘটনা ঘটা অসম্ভব না । কেটে দেবার পরেও তিনবার কল করেছে যেহেতু, খারাপ কিছুও তো হতে পারে । অজানা আশংকায় মন কেঁপে উঠল ! Excuse me বলে মিটিং রুম থেকে বাইরে গিয়ে কল রিসিভ করলাম।
– হ্যালো
– গালীব বিন মোহাম্মদ বলছেন?
– জ্বী বলছি । কে বলছেন?
– স্যার আমি অমুক-ডট-কম থেকে বলছি (দেশের বিখ্যাত একটি অনলাইন শপ । নাম বললাম না । কে না কে আবার মাইন্ড করে বসেন) । আজকে যদি আপনি আমাদের কাছে এতটাকার অর্ডার করেন, তবে ৫% ডিস্কাউন্ট পাবেন ।
বিরক্তিতে মাথায় রক্ত উঠে যাবার মত অবস্থা হলো !
প্রশ্ন করলাম “আমার প্রোফাইলটা আপনাদের কাছে আছে ?”
– “হ্যা ।”
– “ডেজিগনেশনটা কি লেখা আছে ?”
– “হেড অফ মার্কেটিং”
– “আপনাদের কোম্পানীতে কি হেড অফ মার্কেটিং বা হেড অফ সেলস আছেন?”
– “জ্বী, আছেন ।”
– “আপনি দয়া করে উনাকে গিয়ে এখন এই কাজের দিনে অফিস টাইমে আপনার অফারটা বলে আসার চেষ্টা করুন তো, আর দেখে আসুন তো উনি কতক্ষণ শোনেন আর রিএ্যাকশনটা কি হয় ।”
– “জ্বী ? ঠিক বুঝলাম না স্যার ।”
উনি কল সেন্টারের একজন এক্সিকিউটিভ । উনি বুঝতে নাই পারেন । কিন্তু আমরা যারা বড় বড় পদে বসে কোম্পানীর প্রমোশন ডিজাইন করি তাঁদের তো অন্ত:ত বোঝার কথা, তাই না ? প্রমোশনটা কনজ্যুমারকে কিভাবে জানাচ্ছি, কখন জানাচ্ছি, কোন মাধ্যমে জানাচ্ছি প্রমোশন সফল করার পেছনে সেটি একটি অত্যন্ত বড় বিষয় । যোগাযোগ ব্যবস্থার গুণে পার্সোনালি কল করে অফার দেয়া এখন মার্কেটিয়ারদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি Tool । কিন্তু সেটি যেন আমরা ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহারই করছি বেশী । রাত বারোটা, ছুটির দিনে ভোর বেলা, অফিসের কর্মব্যস্ত সময়ে………….সময় নেই-অসময় নেই ফোন আসছে । ভাই, আপনার কাছে আপনার অফার বিশাল গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ আপনার টার্গেট পূরণ-বেতন-বোনাস-প্রমোশন নির্ভর করছে এটির উপর; কিন্তু একজন সাধারণ কনজ্যুমারের কাছে কিন্তু এটি জাস্ট আরেকটা অফার ছাড়া আর কিছুই না । অফার দিতে গিয়ে যদি তাঁকে বিরক্ত কিংবা বিড়ম্বনায় ফেলা হয়, তবে আপনার অফার মাঠে তো মারা গেলই তার উপর আপনার ব্র্যান্ডের উপরেও কিন্তু নেগেটিভ ইম্প্রেশন তৈরী হল । সুতরাং, পয়সা খরচ করে কাজের কাজ তো কিছু হলই না, বরং উল্টো ক্ষতি হলো !
আরেকটা উদাহরণ দেই । গেল ১৮ বছর ধরে আমি একটা অপারেটরের মোবাইল ফোনই ব্যবহার করি । আবারও নাম বললাম না । সবাই ভাই-বেরাদার এখানে । কে আবার মন খারাপ করে বসেন। দরকার কি ! নাম্বারও আমার মাত্র একটা । একটু খানি usage হিস্টোরী চেক করলেই সহজেই দেখা যাবে গত প্রায় ৪-৫ বছর ধরেই আমার মাসিক মোবাইল ডাটা ব্যবহারের পরিমান ৩-৫ জিবি । আমার অপারেটরের পক্ষে এটুকু ডাটা মাইনিং করা কিন্তু কঠিন কিছু না । অথচ, প্রায় প্রতি দু-তিন দিন পরপর আমি অফার পাই 250 MB, 500 MB, এমনকি 50 MB ডাটা কেনার জন্য ! ভাই, যে লোক প্রতিমাসে ৩-৫ জিবি ডাটা ব্যবহার করে, সে দুদিন পরপর খুচরা ডাটা কিনবে কেন? এরকম অফার না দিয়ে তাকে বরং মাসিক ডাটার উপর আপগ্রেড অফার দেয়াটা কি যুক্তিযুক্ত না, যাতে করে সে ৫ জিবি থেকে ৬-৭ জিবির দিকে যায়? কিন্তু না। ডাটা এ্যানালাইসিস করে এই সামান্য কাস্টোমাইজেশনের কষ্টটুকু আমরা করতে চাই না । সবাই হাঁটতে চাই সোজা-সহজ পথে – ঢালাও অফার সবার জন্য তা সেটি relevant হোক বা না হোক । খুঁজলে এরকম অনেক উদাহরণ আমাদের সবার কাছেই আছে। ফলাফল – প্রমোশন বাজেটের অপচয় আর সাথে বোনাস হিসেবে কনজ্যুমার-কাস্টোমারের বিরক্তি তৈরী করে উল্টো ব্রান্ডের বারোটা বাজানো । মার্কেটিয়ার হিসেবে আরেকটু স্মার্ট হবার, আরেকটু কমনসেন্স ব্যবহার করার, আরেকটু ডাটা ব্যবহার করে সঠিক মানুষকে সঠিক সময়ে সঠিক উপায়ে সঠিক অফারটা দেয়ার দায়িত্বটা কিন্তু দিনশেষে আমাদের কাঁধেই পরে, আর কারোর উপরে নয় ।
#Branding #Marketing #Offer #Communication #MarketingPromotion #ValueLoss
লিখেছেনঃ Galib Bin Mohammad