প্রশ্নটা অনেককেই কনফিউজ করে দিবে। আমরা যদি ডিকশনারি দেখি তাহলে “ইমেজ” এর সঙ্গায় আমরা পাবো – “Impression: A mental conception held in common by members of a group and symbolic of a basic attitude and orientation-Idea, concept: a vivid or graphic representation or description”
আবার “পার্সোনালিটি” এর সঙ্গা খুজলে আমরা পাবো- “The complex of characteristics that distinguishes an individual or a group- The totality of an individual’s behavioral and emotional tendencies.”
কেতাবি ভাষায় না গিয়ে সহজ করলে বললে দাঁড়ায়- আমি যা তাই আমার পার্সোনালিটি। কিন্ত আমাকে অন্যরা যেভাবে দেখে, সেইটা হলো আমার ইমেজ। ব্রান্ডিং বা ব্র্যান্ড বিল্ডিং স্ট্রাটেজি তৈরি করতে গেলে এই ইনসাইট টা মাথায় রাখতে পারেন। ব্রান্ড ইমেজ আসলে একদিনে তৈরি হয় না। বছরের পর বছর ধরে ইমেজ তৈরি করতে হয়। হেয়ার স্টাইল বা পোষাক আশাক দিয়ে হয়তো শর্টটাইম একটা ইমেজ তৈরি করা যায়, কিন্ত লং টার্ম ইমেজ তৈরি করতে গেলে অবশ্যই মার্কেটে দীর্ঘদিনের একটা প্রেসেন্স থাকতে হবে। অনেক টা গুডইলের মত। এবং শুধু প্রেসেন্স থাকলেই হবে না, থাকতে হবে ব্রান্ডের টার্গেট গ্রুপের কাছ থেকে পজেটিভ এপ্রুভাল। কঞ্জুমার রা নিজেরাই তখন সার্টিফাই করবে ব্রান্ড কে।
ব্রান্ড অনেক টা সন্তানের মত। এবং কখনো কখনো সন্তান যেমন বংশানুক্রমিকভাবে বাবা মার মত হয়, তেমনি ব্রান্ডও তার কোম্পানির বৈশিষ্ট ধরে রাখে। এমনকি তাদের জেন্ডারও পুর্বনির্ধারন করা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, একটা ব্রান্ডের পার্সোনালিটি মেল হলেও তার ইমেজ হতে পারে ফিমেল, অথবা ভাইস ভার্সা। ক্যাডবেরি চকলেটের বিজ্ঞাপনের জন্য একটা ব্রেইন স্টর্মের সময় এড এজেন্সি হটাত করেই ফিল করলো, ক্যাডবেরি চক্লেট কোম্পানি হচ্ছে স্যুট টাই পরা একজন জেন্টেল্ম্যান। কিন্ত ক্যাডবেরি জেমস (ক্যাডবেরির একটা রেঞ্জ) হচ্ছে ইউনিসেক্স। তরুন এবং ব্রাইট। কাজেই বিজ্ঞাপনের টোন ও তৈরি হবে সেটা মাথায় রেখেই। ব্রান্ড ইমেজ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা ব্র্যান্ড বিল্ডীং এর জন্য খুব ই জরুরী। একটা ব্রান্ডকে তার কঞ্জুমার কিভাবে দেখবে তা নির্ভর করে এই ব্রান্ড ইমেজের উপরেই। আপনি যদি আপনার কঞ্জুমার কে আপনার ব্রান্ড সম্পর্কে একটা নতুন পারসেপশন তৈরি করে দিতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ব্রান্ড্যের ইমেজ মডিফাই করে নিতে হবে। যেমন ধরুন গ্রামীনফোন আর এয়ারটেল। গ্রামীন ফোনকে পার্সনিফিকেশন করলে মনে হয় এইটা উচ্চবিত্ত পরিবারের গম্ভীর টাইপের একজন লোক যে আসলে সবার মাথার উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে। আবার এয়ারটেলের কথা ভাবলে মনে হয়, এইটা একটা আধুনিক ড্রেস পরা ফাঙ্কি একজন তরুণ। যে আসলে সারাক্ষন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে। একজন মানুষ কিন্ত কল করা কিংবা ধরার জন্যেই মোবাইল ফোন ব্যাবহার করে। তারপরেও সবাই যার যার পছন্দ মত মোবাইল অপারেটর চুজ করে নেয়। কারন যেই ইমেজ তার নিজের সাথে যায়, সেটাতেই সে কম্ফোর্ট ফিল করে।
জুতা কিনতে গেলে দেখবেন, একদল মানুষ সবসময় বাটা জুতা কিনছে। কারন তারা মনে করে বাটা জুতার উপর কোন কোয়ালিটিফুল জুতা হতেই পারেনা। আবার একদল মানুষ ভাবে, আর যাই কিনি, বাটা কিনবো না। কক্সবাজারে গেলে দেখবেন একদল মানুষ সবসময় সিগাল এ উঠে। ঐ নির্জন, কিছুটা ক্লাসি, পুরোনো, বদ্ধ হোটেল ই তাদের ভালো লাগে। আবার একদল দেখবেন মারমেইড এ উঠে। তাদের ভালো লাগে নির্জনতা। আর কিছু মানুষ উঠে লং বিচ বা এই টাইপের হোটেলে। ভাইব্র্যান্ট, কোলাহলই তাদের ভালো লাগে। মানুষ কিন্তু একটা কারনেই হোটেলে উঠে, বেড়ানোর সময় থাকার জন্য, বা অবসর কাটানোর জন্য। তাহলে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ কেন ভিন্ন ভিন্ন হোটেল বেছে নেয় ? বিজ্ঞাপনের স্ট্রাটেজি বানানোর সময় এই প্রশ্নগুলো অবশ্যই আপনার করতে হবে।আপনি যখন ব্র্যান্ড ইমেজ দাড়া করাতে যাবেন, তখন অবশ্যই আপনার মাথায় রাখতে হবে, কে আসলে আপনার এই ব্রান্ড টা ব্যাবহার করবে। যার জন্য আপনি ব্র্যান্ড টাকে দাড়া করাচ্ছেন, শুধু তাদের নিয়েই ভাবুন। আপনার টার্গেট গ্রুপ কি ভাবছে, তাদের বিহেভিয়রই সবচাইতে ইম্পর্ট্যান্ট। একবার যদি একটা ইমেজ দাঁড়িয়ে যায়, সেটা চেঞ্জ করা সহজ নয়। একটা পুরাতন ব্র্যান্ডও দেখবেন তাদের প্যাকেজিং সহজে চেঞ্জ করতে চায় না। কারন একবার কঞ্জিউমার যেটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, সেখান থেকে সরে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। অনেক পুরাতন ব্রান্ড গুলো খেয়াল করলে দেখবেন, ১৯৪০/৫০ সালের এড থেকে ২০০০ এর পরের এডগুলো অনেক আলাদা। তবে এই চেঞ্জটা কিন্ত অনেক ধীরে ধীরে এসেছে। এবং গ্রাজুয়েলি এমনভাবে হয়েছে যাতে করে অডিয়েন্সের কখনো বিচ্ছিন্ন মনে হয় নি। সো ব্র্যান্ড গ্রোস এন্ড চেঞ্জেস জাস্ট লাইক এ চাইল্ড। কোকাকোলার ৫০ বছর আগের আর আজকের বিজ্ঞাপন দেখলে আপনার মনে হবে, আরেহ, প্যাকেজিং চেঞ্জ হয়েছে, বিজ্ঞাপনের টোন চেঞ্জ হয়েছে, কিন্ত তারপরেও ঠিক যেন আগের মতই। স্টিল দ্যা সেইম পারসন।
ব্র্যান্ড ইমেজ কিন্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়, মানুষ কি ভাববে ? কিংবা আপনি মানুষকে কি ভাবাতে চান ? প্রথমে আপনার ব্র্যান্ডের সুন্দর একটা নাম দিন। এই ব্যাপারটা অনেকটাই আকীকা দিয়ে নাম রাখার মত। সালমান শাহ নামটা যেই ক্রেজ তৈরি করতে পেরেছে, তার আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরি ইমন কি সেই ক্রেজ তৈরি করতে পারতো ? মেরিলিন মনরো যেইভাবে বিংশ শতাব্দীর সেক্স আইকন হিসেবে ইস্টাব্লিশ হয়েছে, নরমা জেন বেকার নামটা কি সেই আপিল দেয় ? মনে করুন আপনি একজন মেয়ে। আপনাকে বিয়ে দিতে হবে। তাহলে একজন তরুনীর ইমেজ তৈরি করতে হলে আপনাকে কি কি করতে হবে ? আপনার সম্পর্কে বলুন (প্রোডাক্ট এফিকেসি), আপনি কে ? দরকার হলে স্পেসিফিক কাওকে দিয়েও বলাতে পারেন (এন্ডর্স্মেন্ট)। তারপরে আপনি ড্রেস আপ ঠিক করুন, মেক আপ দিন (প্যাকেজিং)। এবং একজন কে ঠিক করুন, যে আপনাকে নিয়ে যাবে পার্টিতে (মিডিয়া)। এইবার মানুষজন আপনাকে দেখলেই বুঝবে, আপনি মার্কেটে এসেছেন একজন হ্যাজবেন্ডের জন্য। অর্থাৎ আপনার ইমেজ ই বলে দিবে আপনি কি ম্যাসেজ থ্রো করতে চান। মজা না ?
ভালো কথা, আপনি যদি বুদ্ধিমান হন, তাহলে অবশ্যই মার্কেটে কম্পিটিশন এনালাইজ করতে হবে। আপনার কম্পিটিটর ব্রান্ড রা কে কি ম্যাসেজ থ্রো করছে, তাদের পার্সোনালিটি কি ? ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরিতে এডভার্টাইজিং ডিজাইনের জন্য আরেকটা খুব গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার হচ্ছে কমিউনিকেশোনের টোন অফ ভয়েস। মাথায় রাখতে হবে কি ধরনের টোন আপনার ব্র্যান্ড ইমেজের সাথে যায়। সেই টোন ব্যাবহার করতে হবে আপনার কপি এবং ভিজুয়ালে। কোন মডেল আপনি ব্যাবহার করবেন। কোন ধরনের টোন সেই মডেল থেকে বের হবে সবকিছুই এলাইন হতে হবে আপনার ব্র্যান্ড পারসোনার সাথে। মনে করুন আপনি ক্লোজ আপ বা যে কোন টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনের স্ট্র্যাটেজি মেক করতে যাচ্ছেন। এখন ফ্যামিলিতে বাবা-মা, তাদের সন্তান সবাই টুথ পেস্ট ইউজ করবে। তাহলে আপনার বিজ্ঞাপনের টোন কি হবে ? আপনার কঞ্জিউমার বাবা, মা আর শিশু সন্তান।কাজেই আপনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কার সাথে কমিউনিকেট করবেন ? আপনার টোন অফ ভয়েস কার জন্য হবে ? মনে রাখতে হবে কঞ্জিউমার অনেক হলেও আপনার টার্গেট গ্রুপ খুব ই স্পেসিফিক। কাজেই আপনার অবশ্যই স্টাডি করতে হবে আপনার কম্পিটিটর কে। এনালাইজ করতে হবে তাদের কমিউনিকেশন টোন অফ ভয়েস। সেখান থেকেই আপনি পেয়ে যাবেন, আপনার টোন টা কি হবে। অনেক কথা বলে ফেললাম। আরো কিছু বলার ছিলো। আশা করি নেক্সট লেখায় আরো কিছু বলতে পারবো। হাওএভার, মনে রাখবেন একটা ব্র্যান্ডের আইডেন্টিটি তৈরি হয় এর ব্র্যান্ড পার্সোনালিটি, ব্র্যান্ড ইমেজ, এর ভয়েস অফ টোন সব কিছুর সমন্বয়ে। কাজেই সব সময় এই কটা ব্যাপার প্ল্যানিং এ রেখেই ব্র্যান্ডের আইডেন্টিটি তোইরি করতে হয়।
লিখেছেনঃ Tanmoy Ferdous