Written by 2:21 pm Brand Practitioners

করোনাকালীন সময়ে অফিস ওয়ার্ক কালচার গত দুই মাসে যে ৫ ভাবে বদলেছে

করোনাকালীন সময়ে অফিস ওয়ার্ক কালচার গত দুই মাসে যে ৫ ভাবে বদলেছে
Walton and Herlan Ads

১. মিটিং, মিটিং, মিটিং…

অফিস কালচারের সবচেয়ে বেশি সময় জুড়ে থাকে বোধ হয় এই মিটিং। যে দিনে যত বেশি মিটিংয়ে থাকবে বা কল দিলে যত বেশিবার বলতে পারবে ‘আমি মিটিংয়ে, পরে কথা বলছি’, সে-ই মনে হয় তত ভাল পারফরমার অফিসের। অথচ বেশিরভাগ মিটিংই আদতে ফলপ্রসূ হয়না।

এর সাথে যোগ করেন ঢাকার রাস্তার ট্রাফিক জ্যাম। ৩০ মিনিটের একটা মিটিংয়ের জন্য জ্যাম ঠেলে যাওয়া-আসা মিলে দিনের ওয়ার্কিং আওয়ারের ২-৩ ঘন্টা বেলালুম হাওয়া। পাশাপাশি যার সাথে মিটিং করতে গিয়েছেন, তিনি যদি বসিয়ে রাখেন, তাহলে তো পোয়াবারো। বিশেষ করে সরকারি অফিসে এই কালচারটা অতি জঘন্য। এক সরকারি অফিসে ১৫ মিনিটের জন্য মিটিং করতে গিয়ে ৩ ঘণ্টা শুধু রিসেপশনে বসে থেকেছি, এরকম রেকর্ডও আছে আমার। এরপর লাঞ্চ মিটিং, স্ন্যাকস মিটিং এসবেও অর্থ বরাদ্দ থাকত অফিসের; যে অর্থটা এখন নিজের অফিসের লোকজনের উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে।

অথচ জুম, স্কাইপ কিংবা হ্যাংআউটের মত কনফারেন্স অ্যাপ দিয়ে এখন কত সহজে মিটিংগুলো সেরে নেয়া যাচ্ছে। সাথে কত অর্থ আর সময়ও সাশ্রয় হচ্ছে। করোনার আগে কত ক্লায়েন্টকে ভিডিও কনফারেন্স কলের কথা বলেছি, সাড়া মিলেনি কোনো। অ-গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হলেও সামনাসামনি গিয়ে ধরণা দেয়াই লাগত। এখন সরকারি অফিসের বিভিন্ন মিটিং-প্রেজেন্টেশনও দেখছি অনলাইনে হয়ে যাচ্ছে দিব্যি। করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠলেও যেন এই সুস্থ ধারাটা বজায় থাকে সব জায়গায়। ছোটখাট মিটিং যেন অনলাইনেই সেরে ফেলার কালচার জারি থাকে।

 

২. কাজের এপ্রুভাল

‘বস, কাজটা একটু দেখে দেন’ বলে কাজের এপ্রুভাল পেতে আগে দিনের কত সময় ব্যয় হত হিসেব করেছেন? বসও নানান কাজে ব্যস্ত, সময়ই পাচ্ছেন না এসে কাজটা দেখে যাওয়ার। শেষতক দেখা গেল, সন্ধ্যার পর এসে ফিডব্যাক পাচ্ছেন, এরপর কাজ শেষ করে ফাইনাল এপ্রুভাল পেতে রাত ৮টার বেশি হয়ে গেল। এইদেশে আবার মেইল করে ফোনে জানিয়ে দেয়ার সিস্টেম জারি আছে।

ওয়াটসঅ্যাপ/স্ল্যাক/টিমভিউয়ার কিংবা মেইল দিয়ে এই এপ্রুভালগুলো চটজলদি করে ফেলা যায়। সামনাসামনি এসে কাজ দেখে যাওয়া বাধ্যতামূলক না আর। আমাদের নিজেদের অফিসে এই অনলাইন এপ্রুভাল সিস্টেম বেশ আগে থেকেই চালু ছিল। তাই বাসায় বসে কাজ করা আর কাজের অনুমোদন পাওয়ার ব্যাপারটা আমাদের মানিয়ে নিতে সময় লাগে নি। তবে হ্যাঁ, অনলাইনে ডিজাইন বা ক্রিয়েটিভ কাজের ফিডব্যাক দেয়াটা একটু ঝক্কির, তবে এটিও আয়ত্ত্বে চলে আসবে বলে ধারণা আমাদের।

 

৩. ডকুমেন্টেশনের ডিজিটাইলাইজেশন

মাসদুয়েক আগেও কারও পিসি কিংবা ল্যাপটপ অন করলে দেখা যেত ডেস্কটপ ভর্তি কেবল ফাইল আর ফাইল আইকনের ছবি। কোনো ডকুমেন্ট খুঁজতে গেলে রীতিমত গলদঘর্ম হওয়া লাগত। সাথে সেই কম্পিউটার যদি কোনোদিন ক্র্যাশ করে তাহলে তো সাড়ে-সর্বনাশ। কিংবা অফিসের ওয়ার্কস্টেশনে না থাকা অবস্থায় যদি কোনো ফাইলের দরকার পড়ে, তাহলে কি আবার অফিসে ছুটবেন সেসময়?

কোনো কোন প্রতিষ্ঠান এতদিন পর এসে বুঝতে পেরেছে ক্লাউড স্টোরেজের মর্ম। গুগল ড্রাইভ বা ওয়ানড্রাইভ বা ড্রপবক্সের মত ক্লাউড স্টোরেজের অফিসের ফাইলগুলো রেখে দিলে যখন-তখন একসেস পাওয়া যায় সেসবের। সাথে গুগল ডক-গুগল শিট-গুগল স্লাইডসে (মাইক্রোসফটেরও একইরকম সার্ভিস আছে) কাজ করার আরও কিছু আরাম আছে, যেমন- একসাথে কয়েকজন একই ফাইলে কাজ করতে পারবেন, আবার “ভার্সন হিস্ট্রি” অপশন থেকে চেক করে নিতে পারবেন কে কোন অংশ নিয়ে কাজ করেছে বা কে কোন অংশটুকু বদলেছে। কোনো অংশে নিজস্ব মতামত দিতে চাইলে কমেন্ট করেও রাখা যায়। এতে কাজের ট্রান্সপারেন্সিও বজায় থাকে। আমাদের অফিসে পেপারলেস সিস্টেম চালু ছিল আগে থেকেই, যত কম সম্ভব কাগজের ব্যবহার করা হত, সব গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ক্লাউড স্টোরেজে রাখা ছিল। তাই মাত্র একদিনের নোটিশেই আমরা ওয়ার্ক-এট-হোমে চলে যেতে পেরেছি।

 

৪. প্রোডাক্টিভিটি

করোনাকালীন সময়ে যারা বাসা থেকে অফিস করছেন বা করাচ্ছেন, তাদের কিছু সেলফ-রিয়ালাইজেশন চলে আসার কথা এতদিনে। সারাদিনে কতক্ষণ অফিস টাইম আমাদের, এরমধ্যে কতক্ষণ আজেবাজে সময় নষ্ট করি, কতক্ষণ পাশের ডেস্কের কারও সাথে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করি, কতক্ষণ অফিস টাইমে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করি, ঠিক কতক্ষণ ‘আসলেই’ কাজ করি আর কতক্ষণ কাজে ব্যস্ত থাকার ভান করি, এসব বুঝে যাওয়ার কথা এতদিনে। দেখবেন, কেউ কেউ হয়ত দিনে ২ ঘণ্টার বেশি ‘আসলেই’ কাজ করেন না, অথচ কোম্পানি স্যালারি ইনক্রিমেন্ট দিচ্ছেনা বলে নাখোশ থাকেন ম্যানেজারের উপর।

সারাদিনে যা যা করেন সেগুলোকেও প্রায়োরিটি অনুযায়ী ভাগ করেন। সারাদিন করার মত অফিসের কাজ না থাকলে কিছু অনলাইন কোর্স করে স্কিল বাড়িয়ে নেন। আগে কেউ বলেছে কি না জানিনা, এখন আবার বলে রাখি, যদি কোনো একটা স্কিল যেকোনো অফিসে আর যেকোনো বয়সে দরকারে লাগে, সেটা হল মাইক্রোসফট এক্সেল। বেসিকের পাশাপাশি কিছু এক্সেলের এডভান্স টেকনিকও শিখে নিতে পারেন এইসময়ে।

 

৫. ‘সাইন’, ‘সাইন’, ‘সাইন’

অফিসের আরেকটা সময় নষ্ট করা কালচার হল সাইন। এপ্রুভালের জন্য ম্যানেজারের সাইনের জন্য বসে থাকতে থাকতেও প্রচুর ওয়ার্কিং টাইম নষ্ট হয় এমপ্লয়িদের। অথচ ‘অ্যাডোব সাইন’-এর মত অনলাইন এপ্লিকেশন দিয়ে সবরকম ডকুমেন্ট-এগ্রিমেন্ট ডিজিটালি সাইন করে ফেলতে পারেন। তবে একটা জায়াগায় এখনও বহু পিছিয়ে আছি আমরা, তা হল ব্যাংক ট্রাঞ্জেকশান। স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড, ইবিএল, সিটি ব্যাংকের মত হাতেগোণা কয়েকটা ব্যাংক বাদ দিয়ে অন্য ব্যাংকগুলো এখনও বহু যোজন পিছিয়ে ডিজিটাইলেশন থেকে। অনলাইন ব্যাংক ট্রান্সফার মোটেও স্মুদ না এদের। এজন্য প্রচুর বিল আটকে আছে একেক অফিসের। অথচ ই-ট্রাঞ্জেকশানের মাধ্যমে এই ঝামেলাটা এড়ানো যায় অনেকাংশেই।

 

বহুজন বহুভাবে বলেও এতদিন অফিসগুলোকে ডিজিটাল করতে পারেনি; করোনা এসে যেটা এক ধাক্কায় করে ফেলেছে। এই ওয়ার্ক-এট-হোমের সময়কালীন আপনারা নিজেদের অফিস কমিউনিকেশনের জন্য, অনলাইন ডকুমেন্টেশনের জন্য, সাইন কিংবা মিটিংয়ের জন্য আর কী কী টুলস ব্যবহার করছেন জানাতে পারেন কমেন্ট করে। আর দেখা যাক, করোনার ধাক্কা সামলানোর পর অফিস কালচারে বড়সড় পরিবর্তন আসে কি না।

লিখেছেনঃ প্রিয়ম মজুমদার অভি, Co-Founder & Managing Director at Pavilion

 

Share this on
Close