বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় নতুন রপ্তানি খাত হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছে টেলিভিশন শিল্পের। টিভি রপ্তানি খাতের এই সাফল্যের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। বর্তমানে ৩৫ টিরও বেশি দেশে, শতাধিক বিজনেস পার্টনারের মাধ্যমে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেবেলযুক্ত টিভি রপ্তানি করছে ওয়ালটন। শীর্ষ টিভি রপ্তানিকারক হিসেবে ওয়ালটন দেশের রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির, কর্মস্থংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে রাখছে বিশেষ অবদান।
সম্প্রতি স্থানীয় টেলিভিশন খাতের প্রযুক্তি উন্নয়ন, বৈশ্বিক ক্রেতা চাহিদা বৃদ্ধি, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সৃষ্টিতে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে এসব কথা বলেন ওয়ালটন টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন।
বাংলাদেশের শীর্ষ টিভি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটির সিইও বলেন, ওয়ালটনের তৈরি টিভি ইউরোপের বাজারে গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে, উন্নত বিশ্বের বাজারে ওয়ালটন টিভির রপ্তানি বাণিজ্য দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। তার মতে, টিভি রপ্তানিতে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হলে উন্নত দেশগুলোর বাজারে দেশীয় শিল্পে তৈরি টিভির প্রতিযোগি মূল্যসক্ষমতা অনেক বাড়বে। সেইসঙ্গে সম্ভাবনাময় এই খাতটি দেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি আয়ের উৎস হয়ে উঠবে।
মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওয়ালটন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও যুগোপযোগী ডিজাইনের এলইডি, এলইডি স্মার্ট ও ভয়েস কন্ট্রোল স্মার্ট টিভি উৎপাদন করছে। ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি হচ্ছে ওয়ালটন টিভি। সর্বাধুনিক টেকনোলজির ডলবি এবং গুগল লিস্টেড ‘লাইসেন্সড টিভি ম্যানুফ্যাকাচারার’ স্বীকৃতি পেয়েছে ওয়ালটন। বাংলাদেশে একমাত্র ওয়ালটনই ডলবির অফিশিয়াল সাউন্ড কোয়ালিটির টিভি উৎপাদন করছে। এসব টিভির দাম যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি মানেও সেরা। আর তাই স্থানীয় বাজারে মার্কেট শেয়ার বিবেচনায় একক প্রতিষ্ঠান শীর্ষে এখন ওয়ালটন টিভি।
ওয়ালটন টিভির বৈশ্বিক ক্রেতা চাহিদা ও রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ সম্ভাবনা প্রসঙ্গে মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, ওয়ালটন টিভির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, উচ্চমান ও প্রতিযোগী মূল্য বৈশ্বিক ক্রেতাদের আস্থা ও মন জয় করে নিচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ক্রেতারা উচ্চমানের পণ্য উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে এখন বাংলাদেশের ওপর আস্থা রাখছেন। ফলে, ইউরোপ থেকে বিপুল পরিমাণ টিভি রপ্তানি আদেশ পাওয়া যাচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি বিপর্যয়ের মধ্যেও ইউরোপের উন্নত দেশ ডেনমার্ক, জার্মানি, পোল্যান্ড, গ্রীস, স্পেন, ক্রোয়েশিয়ায় টিভি রপ্তানিতে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক সাড়া মিলেছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে করোনায় ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ওয়ালটন টিভির সিইও বলেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত ও মন্দার মুখে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও করোনায় ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছে। তবে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও ইউরোপসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে টিভি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ওয়ালটন টিভি রপ্তানি হয়েছে ১০ গুণ বেশি। যা কিনা শুধু ওয়ালটনের জন্যই নয়; করোনায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দেশের রপ্তানি আয় ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে এক বিরাট সুখবর।
রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে নেওয়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, ওয়ালটনে ভিশন-২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা ৫টি গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের তালিকায় স্থান করে নেওয়া। এই ভিশন সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে নিজস্ব ব্র্যান্ডের পাশাপাশি ওইএম (ওরিজিনাল ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স) এর মাধ্যমে টিভির রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার সৃষ্টির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নিজস্ব কারখানায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে যেকোনো দেশের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের সক্ষমতা থাকায় ওয়ালটন এই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। চলতি বছর আমেরিকা, অস্ট্রলিয়া ও ইউরোপের ২০ টির বেশি দেশে টেলিভিশন রপ্তানির টার্গেট নিয়েছি।
সূত্রমতে, ওয়ালটন টিভি রপ্তানি করা হচ্ছে ভারত, নেপাল, ভুটান, ইয়েমেন, পূর্ব তৈমুর, আফ্রিকাসহ ইউরোপের জার্মানি, পোল্যান্ড, গ্রিস, ডেনমার্ক, স্পেন, ক্রোয়েশিয়ার মতো উন্নত বিশ্বের দেশগুলো। ২০১৯ সালে ওয়ালটন টিভি রপ্তানির মধ্যে ৩৪ শতাংশ ডেনমার্কে, ১৮ শতাংশ জার্মানিতে, ২২ শতাংশ গ্রিসে, ১৫ শতাংশ ক্রোয়েশিয়া ও আয়ারল্যান্ডে, ৬ শতাংশ পোল্যান্ডে, ৫ শতাংশ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে হয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজীপুরের চন্দ্রায় নিজস্ব কারখানায় টিভির মাদারবোর্ড, এলজিপি, এলডিপি, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার তৈরি করছে ওয়ালটন। কারখানায় রয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ সুসজ্জ্বিত গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) সেন্টার। ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে উৎপাদিত ওয়ালটনের টেলিভিশন সুইজ্যারল্যান্ডভিত্তিক এসজিএস এর আন্তর্জাতিক টেস্টিং ল্যাব থেকে সিই, আরওএইচএস, ইএমসি সনদ অর্জন করেছে। ইউরোপে ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানিতে অত্যাবশকীয় এসব সনদ অর্জন করে ওয়ালটনের তৈরি টেলিভিশন রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের জার্মানি, পোল্যান্ড, গ্রিস, ডেনমার্ক, স্পেন, ক্রোয়েশিয়ার মতো উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে।