জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘গেইম অফ থ্রোন্স’ এর পর্দা পড়েছে বেশ আগেই, কিন্তু আমাদের চোখের সামনে বেশ জমে উঠেছে দেশী মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারদের মধ্যের Brand War! স্পেশালি MFS সেক্টরে দীর্ঘদিন দাপটের সাথে এরাউন্ড 70% মার্কেট শেয়ার রেখে নেতৃ্ত্ব দেয়া ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি ‘bKash’ কে ইন্ডিকেট করে ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এর লঞ্চ করা ক্যাম্পেইনগুলো বারুদে আগুন জ্বালানোরই ইঙ্গিত দিচ্ছে!
ফাদার অব মডার্ন মার্কেটিং Philip Kotler কম্পিটিটরদের জন্য মিলিটারি টাইপ মার্কেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন তার বিখ্যাত বইগুলোতে। “Bkash Vs Nagad: Our Own ‘Game Of Thrones’” নামক এই কেইস স্টাডিতে আমরা ফিলিপ কোটলারের সেই মিলিটারি টার্মগুলো ব্যবহার করে দেখাবো কিভাবে মার্কেট লিডার কে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে, কি কি স্ট্র্যাটেজি নিয়ে লিডার তার সিংহাসন ধরে রাখার চেষ্টা করবে। আর এজন্য আমরা case হিসেবে বেছে নিয়েছি FinTech কোম্পানি ‘bKash’ এবং ‘নগদ’ কে।
———————————-
Challengers দের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি
———————————-
কোন ইন্ডাস্ট্রিতে যারা সেকেন্ড, থার্ড পজিশনে রয়েছে তাদেরকে আমরা challengers বলি। চ্যালেঞ্জারদের সাধারণত লক্ষ্য থাকে মার্কেট শেয়ার আরো বাড়িয়ে নেবার, অথবা বেশি ambitious হলে লিডারকে হঠিয়ে সিংহাসন দখল করে ফেলার (শুধু Lannister, Stark আর Targaryen রাই যে আয়রন থ্রোন নিয়ে যুদ্ধ করে এমন না)!
যদি শুধু মার্কেট শেয়ার বাড়াতে চায় তাহলে ফোকাস করতে হবে unique value proposition, স্পেসিফিক গ্রুপ অফ কাস্টোমার এসবে। মাঝে মাঝে এক আধটু গেরিলা স্টাইল এটাক করে লিডার এর underserved কিছু কাস্টোমারকে ছিনিয়ে আনা। আর মার্কেট লিডার হতে চাইলে পুরোপুরি নীল নকশা তৈরি করে আটসাট বেঁধে নামতে হবে ময়দানে।
বাংলাদেশে মার্কেট লিডার বিকাশ এর রয়েছে এরাউন্ড 70% মার্কেট শেয়ার। আর এর পরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের Rocket (দেশের প্রথম MFS অপারেটর) এবং নগদ (উভয়েরই সম্ভবত 12-15% করে মার্কেট শেয়ার)। যেহেতু বিকাশকে টার্গেট করে নগদের ক্যাম্পেইন থেকেই আলোচনার সূত্রপাত, এই কেইস স্টাডিতে আমরা এনালাইসিস করার চেষ্টা করবো চ্যালেঞ্জার হিসেবে নগদ কি কি স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে এবং সম্ভাব্য কি কি স্ট্র্যাটেজি নিতে পারে।
Flank Attack: এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জার অপোনেন্ট এর সবচেয়ে অরক্ষিত এবং দূর্বল পয়েন্টে আঘাত হানবে। বিকাশ এর সবচেয়ে দূর্বল পয়েন্ট নিঃসন্দেহে 18.50 টাকা ক্যাশ আউট চার্জ। প্র্যাক্টিকালি 20 টাকা, যেটা আমার মতো বেশিরভাগ কাস্টোমারের কাছেই মনে হয় মাত্রাতিরিক্ত।
ঠিক এই weak point টাকে আইডেন্টিফাই করে price discount strategy দিয়ে নগদ সাজিয়েছে তার রিসেন্ট ক্যাম্পেইন। (আমাদের অতি প্রিয় Galib Bin Mohammad ভাই এই এড ক্যাম্পেইনগুলো নিয়ে অসাধারণ চুলচেরা বিশ্লেষন করেছেন, সেটা এখনো না পড়ে থাকলে অবশ্যই পড়বেন।)
তবে শুধুমাত্র প্রাইসিং দিয়ে কিন্তু লিডারকে কুপোকাত করা যাবে না। উদাহরণ স্বরুপ, ক্যাশ আউট চার্জ আমার জন্য মুখ্য কোন ফ্যাক্টর না। কারণ আমি কিছু কিছু জায়গায় ক্রেডিট কার্ডের বদলে বিকাশ ব্যবহার করি cause it’s easy, simple and reliable (আমি সম্ভবত বিকাশ বা নগদের আইডিয়াল কাস্টোমাদের মধ্যে পড়ি না)। একজন existing এবং satisfied ইউজারকে সুইচ করানো খুবই খুবই কঠিন একটা কাজ।
আর এই flank attack করার সময় নগদকে তার কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজের প্রতি অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। পটেনশিয়াল কাস্টোমারকে ‘বেকুব’ বলাটা মোটেও শোভন না এবং চরম বোকামিও বটে। শুধু এই এডই না, এর আগেও নগদের পক্ষ নিয়ে তৈরি করা বেশি কিছু ভিডিওতে দেখেছি ঢালাওভাবে offensive এবং aggressive ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হচ্ছে। একটা ব্র্যান্ড এর ভয়েস এতটা arrogant কেন হবে? একই মেসেজ কিন্তু অনেক subtle ওয়েতেও দেয়া যায়।
শুধু নগদ না, ইনফ্যাক্ট বিকাশ এর অনেক আগের ‘তুমি স্মার্ট ছেলে তোমার বিকাশ নেই কেন’ টাইপ এডও আমি পারসোনালি নেগেটিভলি নিয়েছিলাম (যদিও সেটার ডেলিভারি অতটা offensive ছিল না)। বিকাশ ব্যবহার না করলে একজন ‘আনস্মার্ট’, নগদ ব্যবহার না করলে একজন ‘বেকুব’… কাস্টোমারকে মনগড়া এবং যাচ্ছেতাই একটা ট্যাগ বসিয়ে দেবার অধিকার ব্র্যান্ডগুলোকে কে দিয়েছে?
REMEMBER, CUSTOMER IS NOT A MORON, SHE IS YOUR WIFE – DAVID OGILVY
Guerrilla Attack: গেরিলা এটাক আমরা সবাই খুব ভাল করে চিনি, যেহেতু আমাদের মাতৃভুমি স্বাধীন হয়েছে নয় মাসের গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমেই। এক্ষেত্রে অপ্রস্তুত প্রতিপক্ষের বিভিন্ন টেরিটরিতে আচমকা মেজর এটাক করেই দ্রুত সরে যেতে হবে।
বিকাশ কাস্টোমার acquisition করার জন্য একসময় প্রচুর প্রচুর ডিসকাউন্ট দিয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক বছর বিকাশ ইন্সটল করি নি, কিন্তু যখন পাঠাওতে বিকাশ পেমেন্টে upto 50% ডিসকাউন্ট দেয়া হলো তখন আর না করে পাই নি। নগদকে চিন্তা করতে হবে কিভাবে এরকম স্পেসিফিক অফারে যাওয়া যায় যেন বিকাশের ইউজারও এটলিস্ট অফার পাবার জন্য নগদ ইন্সটল করে। তবে ইন্সটল করালেই কিন্তু কাজ শেষ না, তারপর কন্টিনিইয়াসলি রিটেনশন টেকনিক ব্যবহার করে ইউজারকে ধরে রাখতে হবে এবং ইভেনচুয়ালি সুইচ করানোর চেষ্টা করতে হবে।
চ্যালেঞ্জার যে শুধু মার্কেট লিডার হবার জন্য ফাইট করে তা কিন্তু না, প্রাথমিক ভাবে কাস্টোমার acquisition করা, শেয়ার বাড়ানোটাও কিন্তু শর্ট টার্ম গোল হতে পারে। রেন্ট এ কার সার্ভিস Avis মার্কেটে সেকেন্ড পজিশনে ছিল, তারা তাই কাস্টোমারকে এভাবে আশ্বস্ত করতো,
“AVIS IS ONLY NO.2 IN RENT A CARS, SO WE TRY HARDER”।
FinTech ইন্ডাস্ট্রিতে এমনিতেই fast-paced technological change এর সাথে নিয়মিত তাল মিলিয়ে চলতে হয়, সেই সাথে cybersecurity, data privacy and protection এর মতো সুপার-সেনসিটিভ ইস্যু তো রয়েছেই। এই জায়গাগুলোতে কোন ভাবেই গ্যাপ রাখা যাবে না, কোন একটা আনফরচুনেট ইন্সিডেন্ট ঘটলে অপোনেন্ট সেটাকে ফুললি লিভারেজ করবে।
Frontal Attack: এটা একটা খুবই aggressive এটাক স্ট্র্যাটেজি, যেখানে চ্যালেঞ্জার অপোনেন্টের strength এর জায়গাতে আঘাত হানে, weak প্লেসে না। এর ফলে কাস্টোমার এবং মার্কেট এর কাছে crystal clear মেসেজ যায় যে চ্যালেঞ্জার determined এবং লিডারকে সরিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে। ব্যাংকিং, ইন্সুরেন্স, সেলফোন, এয়ারলাইন এর মতো ইন্ডাস্ট্রিতে এই টেকনিক widely প্র্যাক্টিস হয়।
MARKETING IS NOT A BATTLE OF PRODUCTS, IT’S A BATTLE OF PERCEPTION।
তবে এই লেভেলে প্লে করতে চাইলে backend এ প্রচুর ক্যাপাসিটি তৈরি করতে হবে। বিকাশ তার ইনোভেশন এর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে গত কয়েক বছর ধরে। Head hunting করে সেরা টিম তৈরির পাশাপাশি state of art টেকনোলোজিতে আনবিলিভেবল ইনভেস্টমেন্ট করেছে। Arsenal এ যথেষ্ট পরিমাণ অস্ত্রসস্ত্র না থাকলে নগদ এই ধরণের এটাকে যেতে পারবে না, শুধু ডাক বিভাগের ফিনান্সিয়াল ব্যাকআপ বা গভর্মেন্ট এর সাপোর্ট এক্ষেত্রে যথেষ্ট না। এজন্য হাইলি কোয়ালিফাইড এবং এক্সপেরিয়েন্সড টিম লাগবে, এক্সটেনসিভ R&D লাগবে, রিসোর্স লাগবে।
তবে নগদ যে নেক্সট লেভেলে যেতে ইচ্ছুক তার তার কিছু লক্ষণ কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি। রিসেন্টলি ব্যাংকিং জগতে অত্যন্ত সফল এবং দুই দশকের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন Rahel Ahmed ভাই নগদে CEO হিসেবে যোগদান করেছেন। এর আগে তিনি Prime Bank এ অনেক অনেক ডিজিটাল ইনোভেশন নিয়ে এসেছিলেন, নগদকে একটা লিডিং পেমেন্ট কোম্পানি হিসেবে রুপান্তর করার চ্যালেঞ্জ নিয়েই তিনি হাল ধরেছেন কোম্পানির।
Head to Head ফাইটে যেতে হলে নগদকে বিকাশ এর ইনোভেশন, এজেন্ট নেটওয়ার্ক এই সব stronghold গুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। খেলাটা জমার সম্ভাবনা রয়েছে কারণ নগদ নিজেও কিন্তু ইনোভেশনে যথেষ্ট ফোকাস দিচ্ছে। দেশের প্রথম Digital KYC তারাই ইন্ট্রোডিউস করেছে। *167# ডায়াল করলে রবি, এয়ারটেল এবং গ্রামীনফোনে খুব সহজেই ওপেন করা যাচ্ছে নগদের একাউন্ট। নগদের এই উদ্যোগগুলো অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার।
All-round Attack: ফুটবলে আমরা যেমন দেখি, অলরাউন্ড এটাকে ডিফেন্স-মিডফিল্ড-স্ট্রাইক সব জায়গাতেই প্রতিপক্ষকে চারদিক থেকে আক্রমণ করে নাজেহাল করার চেষ্টা করা হয়। এই এটাকে যেতে হলে অবশ্যই superior resource থাকতে হবে প্রতিটা ফিল্ডে। এই ধরণের এটাকে যেতে হলে নগদকে শুধু প্রাইসিং না, আরো বিভিন্ন দিক থেকেই বিকাশকে এটাক করতে হবে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল মার্কেট এর জন্য স্কোপ এখনো হিউজ, সাউথ ইস্ট এশিয়া এর অন্যান্য দেশগুলোতেও এখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে এই সেক্টরে। নগদকে তাই বিকাশের মতো সেইম TG নিয়ে কাজ করতে হবে তা না, তারা diversify করতে পারে নতুন demography, সোশ্যাল ক্লাস, জিওগ্রাফি, psychographic সেগমেন্টে যেগুলো বিকাশ এখনো ধরতে পারে নি।
—————————————
Market Leader এর মার্কেটিং স্ট্রাটেজিঃ
—————————————
2019 সালে bKash বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের Best Brand Award জেতার পর আমি ‘The Daily Star’ এ “How bKash became the most loved brand of the country” শিরোনামে একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম (গুগলে সার্চ করলে পাবেন)।
সেখানে দেখিয়েছিলাম কিভাবে ফার্স্ট মুভার এডভ্যান্টেজ কাজে লাগিয়ে একটা blue ocean তৈরি করে শক্তিশালী ঘাটি গেড়ে বসেছে বিকাশ। কোটি কোটি লয়াল এবং লং টার্ম ইউজার এর পাশাপাশি বিকাশের রয়েছে অসাধারণ টিম, হিউজ এক্সপেরিয়েন্স, সলিড মার্কেটিং কমিউনিকেশন এবং মাইন্ডব্লোয়িং ইনোভেশন ক্যাপাবিলিটি।
নগদের ব্যাকআপ সরকারী ডাক বিভাগ হতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে Brac Bank এর পাশাপাশি বিকাশে 20% stake রয়েছে ইপেমেন্ট জায়ান্ট Alipay এর। গ্লোবাল করপোরেট সুপারপাওয়ার Alibaba এর এই ফিনান্সিয়াল আর্ম এর প্রসেস, স্ট্র্যাটেজি, ইনোভেশন সব কিছুই বিকাশের হাতের নাগালে। সুতরাং বিকাশের মনোভাবটা এই মুহূর্তে ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’।
চলুন দেখি এই ম্যাসিভ এডভান্টেজগুলো নিয়ে বিকাশ কিভাবে মার্কেটে তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করবে।
1. Defending / Maintaining Current Market Share
এই স্ট্র্যাটেজি যেই theme এর উপর বেইজড সেটা হচ্ছে, ‘Customer Retention is more profitable than customer-creation’।
মার্কেট লিডারকে সব সময় খুব সতর্ক থাকতে হয় কোন অবস্থাতেই যেন কারেন্ট মার্কেট বিপন্ন না হয়। Coca-Cola যেমন আমেরিকাতে এরাউন্ড 43% মার্কেট শেয়ার ধরে রেখেছে গত কয়েক বছর ধরে, তার সবচেয়ে কাছের প্রতিপক্ষ Pepsi এর মার্কেট শেয়ার এরাউন্ড 24%। লিডার হিসেবে বিকাশকেও সম্ভাব্য সব কিছুই করতে হবে মার্কেট শেয়ার ডিফেন্ড করার জন্য। এর মধ্যে ব্লক চেইন টাইপের লেটেস্ট টেকনোলজির এডাপ্টেশন, এজেন্ট এবং কাস্টোমারদেরকে বেটার সার্ভিস, competitive এডভান্টেজ কাজে লাগিয়ে cost-cutting খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
THE MOST POWERFUL CONCEPT IN MARKETING IS OWNING A WORD IN THE PROSPECT’S MIND.
যে কোন ব্র্যান্ডকে কনজিউমার এর মাইন্ডে একটা Specific Word কে Own করতে হবে। উদাহরণঃ volvo = Safety, Cadillac = luxury, Google = Search, Rolex = Expensive watch.
বিকাশ যে ওয়ার্ডটিকে তার কাস্টোমারের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে সেটি হচ্ছে ‘simple’। এই কনসেপ্টটাকেই তারা সামনের দিনগুলোতেও অনায়াসে প্রমোট করে যেতে পারবে।
(Pop quiz: ‘নগদ’ নামটা শুনলে সবার আগে কোন ওয়ার্ড টা আপনার মাথায় আসে?)
চলুন এবার দেখি বিকাশ কি কি ধরণের মিলিটারি ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করতে পারেঃ
Position Defense: এখন পর্যন্ত বিকাশকে সবচেয়ে বেশি টার্গেটেড এটাক করা হচ্ছে ক্যাশ আউটের চার্জ নিয়ে। বিকাশ এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী পর্যায়ে চেষ্টা চালিয়েছে সব MFS এর জন্য একটা কমন রেট বেঁধে দিতে। কিন্তু তাদেরকে জানানো হয়েছে চার্জ কে কত রাখবে এটা কোম্পানির নিজস্ব ডিসিশন।
বিকাশ তার অতিরিক্ত চার্জ কেন কমাচ্ছে না এটা আমার কাছে এখনো পুরোপুরি ক্লিয়ার না। তবে ধারণা করতে পারি এত বছর ধরে মার্কেট তৈরি করা, হাইলি intuitive প্রোডাক্ট ডিজাইন করা এসবে তাদের অলরেডি অনেক ইনভেস্টমেন্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া চার্জ কমালে এজেন্টদের কমিশনও কমে যাবে ফলে তারা বিদ্রোহ করে বসতে পারে।
কিন্তু যেহেতু এটাকেই প্রতিপক্ষ দূর্বলতা ধরে নিয়েছে, বিকাশকে কোন মেকানিজম এর মাধ্যমে কস্টটা কমিয়ে নগদের সমান করতে হতে পারে শেষ পর্যন্ত। যদি এটা করে তাহলে প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার নিমেষেই পুরোপুরি অচল হয়ে যাবে।
Flank Defense: এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে weak সাইডকে কে প্রটেক্ট করা। বিকাশ যদি ক্যাশ আউটের চার্জ আপাতত অপরিবর্তীত রাখতেই চায়, তাহলে তাকে অন্য ধরণের কিছু লো প্রাইসড অফার, ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ইত্যাদি ইন্ট্রোডিউস করতে হবে। এমনকি বিকাশ কাউন্টার এটাক স্ট্রাটেজিও কনসিডার করতে পারে, যেখানে উলটো কম্পিটিটর এর উইক পয়েন্ট এ আঘাত হানতে হবে। নতুন সার্ভিস হিসেবে নগদের অনেক জায়গাতেই এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেগুলো বেছে বেছে কী পয়েন্টগুলোতে ruthless এবং surgical এটাক করা একটা ভাল ডিফেন্স মেকানিজম হতে পারে।
Counteroffensive Defense: এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের আক্রমণের বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণ করতে হবে। একটা উপায় হতে পারে হঠাৎ করে চার্জ নগদের থেকেও কমিয়ে আনা!
তবে সেটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে, এবং ইফেক্টিভ না হবার সম্ভাবনাই বেশি। যেহেতু নগদ ডাকবিভাগের প্রতিষ্ঠান তাই ফিনান্সিয়াল ব্যকআপ অনেক স্টং এবং লং টার্ম সারভাইব করার ক্ষমতা রাখে। বিকাশের পিছনে Alipay এর ফিনান্সিয়াল মাসল রয়েছে, কয়েক মাস bleeding করার মতো সামর্থ্য বিকাশের রয়েছে। অনেক জায়ান্ট কোম্পানিকে এভাবে মাত্রাতিরিক্ত ছাড় দিয়ে ছোট ছোট কোম্পানি গুলোকে মার্কেট আউট করে দিতে আমরা দেখেছি। বিকাশ-নগদ যদি Price War এ চলে যায় তাহলে উভয় কোম্পানিই ফিনান্সিয়ালি ক্ষতিগ্রস্থ হবে, কিন্তু কাস্টোমার বেনিফিটেড হবে (at least temporarily)!
আরেকটা মেথড হতে পারে সরাসরি কম্পিটিটর এর territory তে গিয়ে এটাক করা। উবার যখন বাংলাদেশে Car রাইড এর পাশাপাশি bike রাইড ইন্ট্রোডিউস করেছিল তখন Pathao হঠাৎ করে বিপদে পড়ে গিয়েছিল। তারপর তারা জাস্ট দুই সপ্তাহের মধ্যে car sharing সার্ভিস চালু করে ফেলে। ফলে উবার বাইক থেকে পিছিয়ে আবার কার শেয়ারিং এ তার প্রাইমারী ফোকাস ফিরিয়ে আনে, এবং পাঠাও বাইক রাইডিং এ আধিপত্ব ধরে রাখতে সমর্থ্য হয়।
বিকাশও নগদের weak ground খুজে বের করে সেখানে invade করে বসতে পারে যেন নগদ বিকাশকে এটাক করা বাদ দিয়ে ঘর সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় এই battle গুলো একটু nasty হয়ে যেতে পারে (Game of Thrones এর Red Wedding এর কথা মনে আছে, যেখানে Robb Stark, তার মা Catelyn সহ শুরু করে প্রায় পুরো স্টার্ক আর্মি massacre এর শিকার হয়?)
2. Expanding Total Market
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্টেটমেন্ট অনুযায়ী, ২০২০ এর ডিসেম্বরে প্রতিদিন এভারেজে ১৮২৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে MFS এর মাধ্যমে, সংখ্যার হিসেবে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি ট্রানজ্যাকশন। রেজিস্টার্ড ক্লায়েন্ট প্রায় 10 কোটি হলেও 3.23 কোটি active account ছিল সেই সময়। করোনা প্যানডেমিক আক্রান্ত বিশ্বে MFS এর ব্যবহার বেড়ে চলেছে দিন দিন, বাংলাদেশেও তাই এই সেক্টরের অপার সম্ভাবনা এবং এখনো বিশাল untapped মার্কেট রয়েছে।
যেহেতু ওভারঅল মার্কেট শেয়ার বেশি, টোটাল মার্কেট সাইজ বাড়লে সেখান থেকেও পাই এর বেশিরভাগ স্বাভাবিক ভাবেই লিডারের ভাগেই যাবে। বিকাশ যেহেতু সর্বস্তরের জনগণের কাছে অলরেডি পরিচিত বিশ্বস্ত একটি নাম…আরো বেশি ইউজারকে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহারে কনভিন্স করা, untapped niche গুলোকে খুজে বের করা তাদের জন্য স্পেশালাইজড সার্ভিস বা ফিচার চালু করা, লয়াল ইউজারদের ব্যবহারের ফ্রিকোয়েন্সি এবং এমাউন্ট বাড়ানোর রাস্তা খুজে বের করার মাধ্যমে টোটাল মার্কেট সাইজ বাড়িয়ে নিজেদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করাটা ইফেক্টিভ একটি স্ট্রাটেজি হতে পারে।
3. Expanding Market Share
“THE WISE WARRIOR AVOIDS THE BATTLE.” – SUN TZU (THE ART OF WAR)
বিকাশ যেহেতু অন্যদের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে আছে, চ্যালেঞ্জারদের প্রতিটা এটাকে রিএক্ট করতে হবে এমন না। তারা সরাসরি head to head battle এভয়েড করেও নিচের স্ট্র্যাটেজিগুলো ফলো করে মার্কেট শেয়ার বাড়িয়ে profitability বাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতে পারে।
Adding New Product / Service Line: MBA (IBA) তে গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে আমাদের Brand Management কোর্স টা নিয়েছিলেন আমার অত্যন্ত পছন্দের ব্যক্তিত্ব Zeeshan Kingshuk Huq স্যার (সিন্দাবাদ.কম এর কোফাউন্ডার)। স্যার বলেছিলেন বিকাশ তার জার্নির প্রথম দিকে এড গুলোতে সেলিব্রিটি দেরকে portray না করে নিয়ে এসেছিল অপরিচিত সাধারণ কিছু মুখ। এই ক্যাম্পেইনগুলো তাই TG এর সাথে খুবই ভাল resonate করেছিল।
এখন কিন্তু বিকাশের কাস্টোমার সেগমেন্ট সোশ্যাল ক্লাসের আরো উপরেও রয়েছে। বিকাশ তাই Prestige Good Strategy নিতে পারে, অর্থাৎ সুপিরিয়র কোয়ালিটির নতুন কিছু সার্ভিস যেগুলোর জন্য স্পেসিফিক গ্রুপ অফ কাস্টোমার প্রিমিয়াম প্রাইস দিতে রাজি থাকবে। ঠিক যেমন ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো Platinum, Titanium ইত্যাদি কার্ড অফার করে এলিট কাস্টোমারদেরকে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই নতুন প্রোডাক্ট লাইনের জন্য ডিমান্ড আছে কিনা সেটা ভাল ভাবে রিসার্চ করে নিতে হবে, হুট করে কিছু করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
Expanding Existing Product Lines: নতুন ধরণের প্যাকেজ, বেনিফিট, ফ্যাসিলিটি চালু করা যেতে পারে। বিকাশ এগুলো নিয়ে রেগুলারলি কাজ করছে, বিদ্যুৎ বিল দেয়া থেকে শুরু করে ভার্সিটির সেমিস্টার ফি দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। খুজে বের করতে হবে আরও কোথায় কোথায় ক্যাশলেস পেমেন্ট ইন্ট্রোডিউস করা যায়।
Increasing Promotion Efforts: যাত্রা শুরুর পর থেকেই বিকাশ হেভিলি এডভার্টাইজিং করেছে, এবং যার অধিকাংশই অত্যন্ত ইফেক্টিভ বলেই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তখনকার মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ছিল মানুষকে MFS এ পরিচিত করানো, অভ্যস্ত করানো। এখন প্রমোশনের মধ্যে যে এন্সারটা কাস্টোমার খুজবে সেটা হচ্ছে ‘Why should I pay more for cash out to bKash?’ এই উত্তরটা বিকাশকে দিতে হবে।
Improving Services: MFS এর সিংহাসন ধরে রাখার খেলাটা তো শুধু এডভার্টাইজিং এর না, বরং মেজর একটা পার্ট হচ্ছে এজেন্ট। ঢাকা থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ে সার্ভিসকে যতো বেশি এফিসিয়েন্ট করা যাবে, স্মুথ করা যাবে তত বেশি মার্কেটে আধিপত্য তৈরি হবে।
Innovation এর দিক থেকে বিকাশ একদমই world class. আরো বছর তিন আগে থেকেই তারা Intelligent Machines এর মতো কোম্পানির সাথে AI নিয়ে কাজ করছে। Standard Chartered Bank এর সাথে লঞ্ছ করেছে দেশের প্রথম blockchain রেমিট্যান্স সার্ভিস। বর্তমান চ্যালেঞ্জের মুখে তারা ইনভেস্টমেন্ট, ফোকাস, ইফোর্ট আরো অনেক বাড়িয়ে দেবে নিঃসন্দেহে।
শুধুমাত্র কিছু pinching ক্যাম্পেইন দিয়ে তাই বিকাশ এর আসন টলানো যাবে না। খেলাটা আসলে হবে innovation এর, যেখানে বিকাশ অলরেডি মাস্টার এবং আরো এগিয়ে যাচ্ছে। নগদকে তাই অলআউট ইফোর্ট দিতে হবে ইনোভেশন এর পিছনে। তাহলেই জমবে খেলা!
———————
Winter is Coming!
———————
আমাদের ব্র্যান্ড প্র্যাক্টিশনার্সদের জন্য কিন্তু এটা একটা অসাধারণ সুযোগ MFS ইন্ডাস্ট্রির এই Game of Thrones দেখতে পপকর্ণ নিয়ে বসে পড়ার। সারা জীবন ধরে আমরা শুধু দেখে এসেছি বাইরের FedEx vs Ups, Coca-Cola vs Pepsi, Apple vs Samsung ব্র্যান্ড ওয়ার। এখন আমরা উপভোগ করবো আমাদের নিজেদের homegrown কোম্পানিগুলোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই, শিখবো নতুন নতুন টেকনিক এবং স্ট্র্যাটেজি, শান দেব নিজেদের স্কিল সেটেও।
অন্যদের ইতিহাস তো অনেক হলো, এখন আমাদের সময় এসেছে Akij, Square এর ইতিহাস শোনার। সারাজীবন গল্প শুনে এসেছি কিভাবে গ্যারেজে যাত্রা শুরু করেছিল Google, Apple, Microsoft, কিন্তু এখন আমরা শুনতে চাই Pathao, Sheba, Rokomari, Bohubrihi সহ অন্যান্য লোকাল স্টার্টআপ এর বেড়ে ওঠার গল্প। Nike এর ইন্সপায়ারিং এড নিয়ে আলোচনা না করে আমরা এখন Grameenphone এর এওয়ারনেস বিল্ডিং ক্যাম্পেইন এর কথা আলোচনা করতে চাই। Amazon এর ডকুমেন্টারি বাদ দিয়ে দেখতে চাই কিভাবে চোখের সামনে গড়ে ওঠে আমাদের নিজস্ব ইকমার্স ইন্ডাস্ট্রি।
আমরা এই কেইস স্টাডিতে যে সম্ভাবনা গুলো আলোচনা করছি তার মধ্যে কোনগুলো ইমপ্লিমেন্ট হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এখন যেটা প্রত্যাশা করে বলতে পারি সেটা হচ্ছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি ম্যাচিউর হচ্ছে, আমরা ক্রিটিকাল এনালাইসিস করতে শিখছি, প্রেডিকশন করছি…আর এভাবেই একসময় আমরা নিজেদের গন্ডি ছাড়িয়ে পা বাড়াবো বিশ্বের বুকে রাজত্ব করতে।
কেইস স্টাডিতে তথ্যগত কোন ভুল থাকলে শুধরে দেবার অনুরোধ রইলো, সেই সাথে আপনার অপিনিয়ন জানার অপেক্ষায় থাকলাম। বিকাশ-নগদের সাথে সংশ্লিস্ট সকলে আশা করি এটাকে লার্নিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে কন্সিডার করবেন কাইন্ডলি। কোন অবজেকশন-অবজারভেশন বা ইনফো শেয়ার করতে চাইলে জাস্ট feel free to buzz me…সময় বের করে কফি খেতে খেতে আড্ডা দেয়া যাবে।
আলোচনাটা চলুক…
(নিচের হ্যাশট্যাগ ক্লিক করে আমার আগের লেখাগুলো পড়তে পারবেন)