তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটা। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি কিছুটা মুনাফা করলেও বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পর্ষদ সভা শেষে প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
লভ্যাংশের বিষয়ে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের নেয়া সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২১ মার্চ। আর রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ ডিসেম্বর।
সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৩৩ পয়সা। গত বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৪ পয়সা। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা বেড়েছে ৮ গুণের বেশি।
মুনাফার পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদ মূল্যও বেড়েছে। ২০২০ সাল শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। যা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ছিল ১২ টাকা ৬৪ পয়সা।
নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আইপিও খরচের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) শেয়ার ছেড়ে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০ টাকা সংগ্রহ করা রবির শেয়ার গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়।
লেনদেনের প্রথম দিন থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে মহাদাপট দেখায়। লেনদেনের প্রথম কার্যদিবস থেকে টানা ১৫ কার্যদিবস বাড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম। দফায় দফায় দাম বেড়ে কোম্পানিটির ১০ টাকার শেয়ার ৭৭ টাকা ১০ পয়সায় উঠে যায়।
দফায় দফায় কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্যও প্রকাশ করা হয়। ডিএসই জানায়, শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ জানতে কোম্পানিটিকে নোটিশ করা হয়। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে তার পিছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই।
ডিএসই থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয় গত ৫ জানুয়ারি। কিন্তু এরপরও কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়তে থাকে। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত লেনদেন হওয়া প্রতিটি কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এর মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে কোনো কোম্পানি লেনদেন শুরুর প্রথম ১৩
কার্যদিবস দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
অবশ্য ১২ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দামের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন তদন্তের নির্দেশ দিলে রবির দাম বাড়ার প্রবণতায় কিছুটা ছেদ পড়ে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তের নির্দেশে ১৩ জানুয়ারি লেনদেন শুরু হতেই রবির শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে এক পর্যায়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম আগের দিনের তুলনায় কমে যায়। তবে লেনদেনের শেষের দিকে বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে তদন্তের নির্দেশ স্থগিত করা হচ্ছে। এতে কোম্পানিটির শেয়ার আবার বাড়ে। ফলে পতন কাটিয়ে ৪০ পয়সা দাম বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ করে রবি।
বাজারে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন (শেয়ার দামের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন তদন্ত স্থগিত) সত্য হলে ১৪ জানুয়ারি আবার হু হু করে বাড়তে থাকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম এবং দিনের সর্বোচ্চ দামের সীমা স্পর্শ করে। এতে ১৫ কার্যদিবসের লেনদেনেই কোম্পানিটির ১০ টাকার শেয়ার দাম বাড়ে ৬০ টাকা ১০ পয়সা বা ৬০১ শতাংশ।
অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পর ১৭ জানুয়ারি প্রথম কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়। দফায় দফায় দাম কমে প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩৯ টাকা ৯০ পয়ায় নেমে আসে।
এই দরপতনের মধ্যে লভ্যাংশ সংক্রান্ত বৈঠকের ঘোষণা দেয় রবি। এরপর বাজারে গুঞ্জন ছড়ায় রবি বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। এমন গুঞ্জনে সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।