বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে পেছনে ফেলে ফ্রিজের বাজারে দারুণ দাপট এখন দেশি ব্র্যান্ডের। এ তালিকায় শীর্ষস্থান ওয়ালটন ফ্রিজের। দেশে ফ্রিজের বাজারের ৭৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। যেখানে ৬৬ শতাংশ দখলে নিয়ে ওয়ালটনের অবস্থান সবার শীর্ষে।
ওয়ালটনের সহযোগী ব্র্যান্ড মার্সেলের অবস্থানও বাজারে দারুণ সংহত। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বাজারে মার্সেলের হিস্যা ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের (এমডব্লুবি) এক গবেষণায় দেশে ফ্রিজের বাজারের এই পরিসংখ্যানভিত্তিক তথ্যচিত্র মিলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ সোমবার (১ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফল জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং এমডব্লুবির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মো. নাজমুল হোসাইন।
ফ্রিজের বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডকে প্রতিযোগিতায় পেছনে ফেলে দেশীয় ব্র্যান্ডের শীর্ষস্থান দখলে নেওয়ার এ সাফল্য মাত্র এক দশকে। এ সাফল্যে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছে ওয়ালটন ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মার্সেল।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রিজের বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে সিঙ্গারের হিস্যা ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং বাটারফ্লাইয়ের হিস্যা ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ তালিকায় দেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে যমুনার হিস্যা ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ৬৬ শতাংশ হিস্যার একক কৃতিত্ব নিয়ে ওয়ালটনের অবস্থান সবার ওপরে।
‘ওয়ালটন আমাদের পণ্য’ এ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে বাংলাদেশে ফ্রিজ এবং ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে ওয়ালটন এখন লিডার। প্রতিষ্ঠানের এ সাফল্যের প্রসঙ্গে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান মো. হুমায়ূন কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো পৃথিবীকে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প শোনাতে চাই। যে দেশ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে, সে দেশ অবশ্যই অর্থনৈতিকভাবেও বিশ্বের বুকে নিজেদের সাফল্য তৈরি করতে পারবে। সে লড়াইয়ে ওয়ালটন সবসময় অগ্রযাত্রায় শামিল। আমরা চাই, দেশের উন্নয়ন, আর সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই ওয়ালটন এখন বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত একটি ব্র্যান্ড। আমরা এখন দেশে ফ্রিজের বাজারে শীর্ষস্থানে আছি। এখন লক্ষ্য- বিদেশের বাজারেও ওয়ালটনের ফ্রিজকে সেরাদের কাতারে পৌঁছে দেওয়া। সে লক্ষ্য পূরণের পথে ওয়ালটন এগিয়ে চলেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের সব মিলিয়ে ৪০টি দেশে এখন ওয়ালটন ফ্রিজ রপ্তানি করছি। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা পাঁচটি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস ব্র্যান্ডের মধ্যে অন্যতম হতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান ও মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বলেন, ‘দেশীয় কোম্পানিগুলো বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে ভবিষ্যতে দেশি ফ্রিজের চাহিদা আরও বাড়বে। দেশীয় চাহিদা পূরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে।’ দেশি ব্র্যান্ডগুলো যেন গুণগতভাবে আরও ভালো করতে পারে, সেজন্য সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের (এমডব্লুবি) গবেষণায় জানানো হয়, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে প্রায় ৩২ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ২১ লাখ ৪৫ হাজার ফ্রিজই ওয়ালটনের। ওয়ালটনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড মার্সেল এই সময়ে বিক্রি করেছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ফ্রিজ। একই সময়ে সিঙ্গার ব্র্যান্ডের ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার। বাটারফ্লাইয়ের ইকো প্লাস ফ্রিজ বিক্রির সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার। ২০১৯ সালে দেশি ব্র্যান্ডের মধ্যে যমুনার ফ্রিজ হয়েছে ৯৭ হাজার।
অপেক্ষাকৃত সায়শ্রী মূল্যে টেকসই, গুণগতমানে সেরা, দেশের মানুষের রুচি-পছন্দ এবং আবহাওয়া উপযোগী পণ্য উৎপাদনের কারণেই বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজকে পেছনে ফেলে এই সেক্টরে এগিয়ে গেছে দেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ। এছাড়া, ফ্রিজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিজের স্থায়িত্ব, ডিজাইন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, কম্প্রেসার, ওয়ারেন্টি, বিক্রয়োত্তর সেবা এবং অভিনব প্রযুক্তির ব্যবহারকে ক্রেতারা অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
এই গবেষণা দলে ছিলেন ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান ও মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হোসাইন, ড. ফরিদ আহমদ এবং গবেষক সাখাওয়াত হোসেন। মাঠ পর্যায়ে ১ হাজার ৭৭৮ জন এবং অনলাইনে ৬৬২ জনসহ মোট ২ হাজার ৪৪০ জন ফ্রিজ ব্যবহারকারীর ওপর এ গবেষণা করা হয় বলে জানানো হয়। ১০টি ফোকাস দল আলোচনা, ১০টি রিটেইল স্টোর অডিট, ১০ জন বিশেষজ্ঞের সমীক্ষা, ৩ হাজার ৮৬০ জন অনলাইন ক্রেতার প্রতিক্রিয়া, ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট রিভিউয়ের মাধ্যমে ১৯৬টি পাবলিক পোস্ট এবং ৮টি প্রতিষ্ঠানের ৯টি টেলিভিশন কমার্শিয়াল (টিভিসি) বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়।