“If I had asked people what they wanted, they would have said faster horses.”
উক্তিটি করেছেন আমেরিকান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Ford এর প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফরড। যদিও অনেকে সন্দিহান যে ফরড সাহেব আসলেই এমন কিছু বলেছেন কিনা। অনেকের মতে তিনি এমন কিছু বলেননি। তবে উনার জীবন, চিন্তা ভাবনা, অর্জন যদি কেও স্টাডি করে তবে তার কাছে মনে হবে যে হেনরি ফরডের মত মানুষ এটি বলেছেন। তার চিন্তা ভাবনা কাজ সেই কথার সাথে যায়। প্রচন্ড Innovative, smart এবং ambitious ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। উনার চিন্তা-ভাবনা ছিল তার সময়ের তুলনায় অনেক অনেক অগ্রসর। ১৯০৮ সালে তিনি ফরড টি মডেল বাজারে ছেড়ে পুরো আমেরিকার গাড়ির বাজার কাপিয়ে দেন।
হেনরি ফরড যখন তরুণ ছিলেন তখন পৃথিবীতে মোটর গাড়ি আসেনি। পাবলিক বেশি দূরে যেত ঘোড়ায় চরে। ঘোড়া অনেক ধীর ছিল, যখন মানুষের দেরি হত তারা আফসোস করতো, ইশ আমার যদি আরও দ্রুত ঘোড়া থাকতো আমি আরও আগে আমার গন্তব্যে যেতে পারতাম। তাদের মাথায়েও গাড়ির চিন্তা আসেনি। আরও দ্রুত যাওয়ার জন্য তারা আরও দ্রুত ঘোড়া চেয়েছিল, গাড়ি চায়নি। সে সময় গাড়ি ছিল না।
সেই উক্তিটি বোঝাতে চেয়েছে যে যেই জিনিস মানুষের সমস্যা সমাধান করবে সেই জিনিস মানুষ জানেনা, তার ব্যাপারে তাদের ধারণা নেই। তারা গাড়ি চাবেনা, যা ঘোড়ার চেয়ে অনেক দ্রুত, তারা ঘোড়াই চাবে। অতএব তাদের বলে লাভ নেই যে তারা কি চায়।
ওই উক্তির সাথে Steve Jobs এর উক্তির মিল আছে, যেই উক্তি জবস সাহেব আসলেই করেছিলেন। তিনি বলেছেন- “People don’t know what they want until you show it to them”.
ফরড যেমন আমেরিকার গাড়ির বাজার কাপিয়ে দেন, স্টিভ কাপিয়ে দেন দুনিয়ার মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজার তার আইফোন সেটের মাধ্যমে।
আমি ফরডের ওই উপরের উক্তিটি জেনেছি স্টিভ জবসের একটি উক্তির মধ্যে। স্টিভ জবস মনে করতেন যে উপরের সেই “…faster horse” এর উক্তিটি ফরড নিজে করেছেন।
স্টিভ জবসের কথা- Some people say give the customers what they want, but that’s not my approach. Our job is to figure out what they’re going to want before they do. I think Henry Ford once said, ‘If I’d ask customers what they wanted, they would’ve told me a faster horse.’ People don’t know what they want until you show it to them. That’s why I never rely on market research. Our task is to read things that are not yet on the page.
এরকমি জবসের আরেকটি কথা- “It’s not the customer’s job to know what they want”
অর্থাৎ, মদ্দা কথা, তাদের মতে, যখন innovation এর ব্যাপার আসে কাস্টমার/ভোক্তা/টার্গেট গ্রুপ তারা জানে না তারা আসলে কি চায়। যখন তারা নতুন কিছু পাবে তখন বলবে, আরে! এটাই তো আমার দরকার ছিলো!
কিন্তু তার আগে বলতে পারবে না তারা কি চায়।
অতএব তারা কি চায় এটা তাদের বলে লাভ নেই, জিনিস সৃষ্টি করতে হবে নিজের মেধায় নিজের বুদ্ধিতে। আবার বাজার গবেষণাও করে লাভ নাই।
এটি স্টিভ জবসের বিশ্বাস। কথাগুলো তার সাথেই যায়। তিনি যখন আইফন আনেন কেও চিন্তা করেনি যে এমন স্মার্টফোন তারা ব্যবহার করবে।
জবসের কথা, কাস্টমারদের কাছ থেকে তথ্য নেয়ার দরকার নাই। তারা জানেনা যে তারা কি চায়। নিজের মত করেই Innovation এবং development করতে হবে।
আসলেই কি তাই? অনেকের মতে জবসের সেই কথাটি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। অনেকের মতে স্টিভ জবস বুঝাচ্ছেন যে তিনি এবং তার প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট টিম সেখানে কাস্টমারের ভূমিকা পালন করছে, তারাই পণ্যকে কাস্টমারের দৃষ্টিতে দেখছে। আসলেই কিন্তু তাই, জবস নিজেই পণ্যকে কাস্টমারের দৃষ্টিতে দেখতে তার দল কে উৎসাহ দিতেন। এই যেমন আইফনের ডিজাইন এমন যেন হয় যেটা দেখে কাস্টমার জিহ্বা দিয়ে সেই ডিভাইসটা চাটবে।
এখন কথা হল কাস্টমাররা কি আসলেই বলতে পারেনা তারা কি চায়?
অনেক বিজনেস এক্সপার্টের মতে ব্যাপারটা এমন না। কাস্টমার বা ভোক্তা বলতে পারেনা তারা কি চায়। এই ব্যাপারে তাদের তেমন আইডিয়া নেই। কিন্তু তাদের কাছ থেকেই জানা যাবে তারা কি চায়। নিজে বলতে না পারলেও বিভিন্ন সময় তারা বার্তা দেয়। তারা কি চায় সেই বার্তা দেয়। সেসব বার্তা ধরতে হবে, তারা কি চায় এটা জানতে হলে তাদেরকে বুঝতে হবে, তাদের সমস্যা দেখতে হবে, খুজে বের করতে হবে।
এমনই বার্তা পেয়েছিলেন আমেরিকান গাড়ির ডিজাইনার জেরি হারশবারগ। তিনি সে সময় নিসান গাড়ির ডিজাইন সেকশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ তার নজরে এলো রাস্তার পাশে একটি দম্পতি তাদের সোফা একটি মিনিভেনে ঢোকানোর চেষ্টা করছে। সেখানে সোফা ঢোকাতে তাদের সমস্যা হচ্ছে, পারছেনা তারা। জেরি কিছুক্ষণ থামলেন এবং তাদের সাথে কথা শুরু করলেন, এই সমস্যা নিয়ে, আফটার অল উনি মোটরযানের
ডিজাইনার। সেই দম্পতি জেরিকে বলল যে তারা এই মিনিভেনটি কিনেছিল এই ভেবে যে এখানে অনেক জায়গা হবে অনেক কিছু ঢোকানো যাবে, কিন্তু পড়ে তারা দেখলো যে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ট জায়গা নেই, একটি জিনিস ঢোকাতে গেলে আরেকটা জিনিস বের করতে হচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলেই জেরির মাথায় আইডিয়া আসলো ভ্যানে জায়গা করার জন্য বসার সিট ভাজ করার ব্যাপারটা।
আরেকটা ঘটনা মোটরযান নিয়েই। টাটা গ্রুপের রতন টাটা নিজের গাড়িতে করে রাস্তায় যাতায়াত করছিলেন। বাইরে বৃষ্টি। এর মধ্যে তার নজরে এলো একটি চার জনের পরিবার একটা মটরসাইকেলে করে কোনমতে বসে ভারী বৃষ্টির মাঝে ভিজতে ভিজতে ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করছে। রতন টাটার মাথায় এলো যারা মটরবাইক কেনার সামর্থ রাখে, তারাও যেন অন্তত একটা গাড়ি কিনতে পারে তার সামর্থ অনুযায়ী। এ থেকেই উনার মাথায় টাটা ন্যানো গাড়ির আইডিয়া এলো।
কাস্টমারের কাছ থেকে কার্যকর তথ্য, ডাটা, অবস্থা, আইডিয়া পাওয়ার অন্য অনেকে Empathic design কে গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রয়োজন ভিত্তিক Innovation এর কার্যকর পন্থা এই empathic design. এখানে কাস্টমারের সেই সব প্রয়োজনকে নির্ণয় এবং তা পূরণের কথা বলা হয়েছে যা কাস্টমার এখনও অনুধাবন করেনি। অর্থাৎ কাস্টমারের সুপ্ত চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা পর্যবেক্ষণ করে এমন পণ্য বা সেবা প্রস্তুত করা যেই সব পণ্য বা সেবা কাস্টমার এর পূর্বে চায়নি। যেমন, যারা ঘোড়ায় চরতো তারা আরও দ্রুত ঘোড়া চেয়েছিল, গাড়ি না, কিন্তু যখন গাড়ি পেয়েছে তখন বলেছে, আরে! ইহাই তো আমার জরুরত ছিল!
Empathic design প্রক্রিয়ায় টার্গেট গ্রুপদের পর্যবেক্ষণ করা হয় তাদের নিজ পরিবেশে। তাদের সত্যিকারের বিহেভিয়ার পর্যবেক্ষণ করা, যেটি কোন গবেষণা পরিবেশের অংশও নয় এবং তাদের বুঝতেও না দেয়া যে তাদের কাছ থেকে ডাটা নেয়া হচ্ছে বা তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সেখান থেকে তুলে আনা হয় তারা আসলে কি চায় বা কি করলে তাদের প্রয়োজন মিটবে কিংবা সমস্যার সমাধান হবে। এরপর সেই প্রাপ্ত ডাটা, আইডিয়া, অবস্থা, পরিবেশ দেখে সেই অনুযায়ী তাদের জন্য পণ্য বা সেবা তৈরি করা। যেমন, জেরি সেই দম্পতির সমস্যা দেখে গাড়ির সিট ভাজ করার ব্যবস্থা করেছেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লিওনারডো এবং রেপোর্ট তাদের ১৯৯৭ সালের একটা পেপারে Empathic design নিশ্চিত করার জন্য ৫ টি স্টেপের কথা বলেছেন। সেগুলো হল-
১) Observation
২) Capturing Data
৩) Reflection and Analysis
৪) Brainstorming for solutions
৫) Developing prototypes of possible solution
টার্গেট গ্রুপ বা কাস্টমারদের observe করতে হবে তাদের নিজ পরিবেশেই এবং সেখান থেকে তাদের সত্যিকারের কার্যবলির Data এবং কাজগুলোকে Capture করতে হবে। সেটি প্রতিষ্ঠানের R&D দল করতে পারে তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে। কিংবা তৃতীয় কোন পার্টির সহায়তা নেয়া যেতে পারে। সেই Data বা observation বিশ্লেষণ করতে হবে এবং বুঝতে হবে তারা কি চায়, তাদের সমস্যা বের করতে হবে। সেই সব সমস্যার সমাধান খুজতে হবে Brainstorming এর মাধ্যমে। অর্থাৎ সমস্যাটি সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। সেই অনুযায়ী সেই পণ্য বা সেবা ডিজাইন করতে হবে এবং এরপর তা ডেভেলোপ করতে হবে। সেটির শুরুর দিকে সেই পণ্য বা সেবার prototype বানাতে হবে। অর্থাৎ সেটির একটি প্রাথমিক বাস্তব রুপ দিতে হবে।
কাস্টমার কি চায় তা কাস্টমারের কাছ থেকেই জানতে হবে। তারা হয় তো বলতে পারবেনা যে তারা কি চায়, কিন্তু তারা ক্ষণে ক্ষণেই সুপ্ত বার্তা দিবে। সেই বার্তাকে কাজে লাগিয়েই Innovation এর শুরু হবে।
মূল কথা তাদের সমস্যা, চাহিদা এবং প্রয়োজনকে খুজে বের করতে হবে।