মার্কেটিং সেক্টরে বর্তমানে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া। কর্পোরেট হাউস গুলোও বিভিন্ন মিডিয়ায় এই নিয়ে প্রায়ই হতাশা প্রকাশ করে, কেউ কেউ উপায় না পেয়ে বিদেশি লোক ধরে আনে। কিন্তু কথা হচ্ছে দেশের বাইরের বিজনেস স্কুলগুলোতে যে টেক্সট পড়ানো হয়, আমাদের দেশের প্রায় সব বিজনেস স্কুলেও তো একই টেক্সট পড়ানো হয়। তবে সমস্যাটা আসলে কোথায়? কেনই বা কোম্পানিগুলো মার্কেটিং বিদ্যায় দক্ষ প্রার্থী পাচ্ছেনা?
প্রথমেই বলি, মার্কেটিং সম্পুর্ণভাবে একটা ব্যবহারিক (applied) সাবজেক্ট। যেটা মোটামুটি ভাবে সোশিওলজি, সাইকোলজি, ইকোনমিকস ও এনথ্রোপলজির একটা ব্লেন্ড। ফলে দেশের বাইরে বা আমাদের দেশের বিজনেস স্কুল গুলোয় বিজনেস/মার্কেটিং কোর্সগুলোর পাশাপাশি এই বিষয়গুলোও পড়ানো হয়। সবকিছুই তো তাহলে ঠিকঠাক, তাহলে কেন এমন হচ্ছে!
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটা কথা প্রায়শই আমরা বলি যে, “ইনপুট ঠিক না হইলে আউটপুট ভালো হইব কেমনে!” আমাদের দেশের অধিকাংশ বিজনেস স্কুলে ঠিক এমনটাই হচ্ছে। আন্ডারগ্রাড লেভেলের চার বছরে একটা স্টুডেন্ট গড়ে ৪৫/৫০ টা কোর্স পড়ে থাকে। যার একটা বড় অংশ স্টুডেন্টরা পড়ে না বুঝে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্লাসে কোর্স প্রতি অনেকগুলো সংক্ষিপ্ত স্লাইড দেখিয়ে টিচাররা লেকচার দিয়ে যান, আর স্টুডেন্টরা সেগুলো মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় ঝেড়ে এসে দায়মুক্ত হয়। অথচ কেন তাদের সেই কোর্সটা পড়ানো হল, কিভাবে সেই থিওরি গুলো রিয়েল লাইফে এপ্লাই করবে সেখানে একটা বড় গ্যাপ থেকে যায়। এখনো এটা আমি বুঝতে পারি না, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই এমন করেন নাকি ব্যাপার গুলো তাঁরাও জানেন না!
আমাদের দেশের ইলেকট্রনিক ক্ষেত্রে লাইটিং ম্যাটেরিয়ালের কথা যদি বলি, তবে বিবর্তন অনেকটা এমন; হ্যারিকেন – বৈদ্যুতিক বাল্ব – টিউব লাইট – সি.এফ.এল/এনার্জি সেভিং বাতি – এল.ই.ডি বাতি। আলোকসজ্জার বিবর্তনের এই প্রতিটা ধাপেই আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, একই সাথে জনগণের অর্থব্যয়ের মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। ফলাফল, যেখানে প্রান্তিক পর্যায়ের একজন লোক আগে যেখানে ২০টাকা দিয়ে একটা বাল্ব কিনতো, সেখানে এখন একজন প্রান্তিক পর্যায়ের লোক ২০০টাকা খরচ করে এল.ই.ডি বাতি কিনে। এটা খুব ইনিশিয়াল লেভেলের একটা সোশ্যাল ইভোলিউশন লার্নিং যেখানে একই সাথে সোশিওলজি, ইকোনমি, সাইকোলজির একটা সুন্দর হারমোনি আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের বেশিরভাগ বিজনেস স্কুলগুলোতে স্টুডেন্টদের স্লাইড/থিওরি মুখস্থ করানো হয় ঠিকই, কিন্তু এই ব্যাপার গুলো হাতে ধরে শেখানো হয় না।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে স্টুডেন্টদের শেখার আগ্রহ কতটুকু। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় বা সেমিস্টারের শুরুতে প্রতিটা স্টুডেন্টকে একটা সিলেবাস দেয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে সম্পুর্ণ কোর্স বোঝা তো পরের কথা, কয়জন স্টুডেন্ট সেই কোর্স আউটলাইনটা একটু মনযোগ দিয়ে দেখে? এই দেশে একজন স্টুডেন্ট চার বছর বিবিএ পড়ে এমএস এক্সেলের কাজ ঠিকঠাক করতে পারেনা, যদিও তাদের বাধ্যতামূলক একটা এক্সেল কোর্স থাকে; স্কিল এনহান্সমেন্টের দিকে নূন্যতম ফোকাস থাকেনা তাদের, অথচ সিক্স ডিজিট বেতনের জব করতে চায়; মার্কেটিং এক্সপার্ট হতে চায় অথচ কর্পোরেট হাউসগুলোর ওয়েবসাইটে চার বছরে কতবার ভিজিট করে বা আদৌ করে কিনা, তা ওপরওয়ালা জানেন!
ফলাফল, স্টুডেন্টরা ফিলিপ কটলারের মার্কেটিং ডেফিনিশন শিখলেও রিয়েল লাইফ মার্কেটিং প্যাটার্ন/পাজল বোঝা ও এপ্লাইড স্কিলের জায়গায় দুর্বল থেকে যায় এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়ে তাদের ক্যারিয়ারে। একই সাথে কর্পোরেট হাউস গুলোও প্রার্থীদের নিয়ে ভোগে আস্থাহীনতায়।