কোভিড-১৯ এ বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলো একটা বিশাল ধাক্কা খেলেও, বিজ্ঞাপন জগতে সারা দুনিয়াতেই দূর্দান্ত সব ক্রিয়েটিভ কাজ আমরা দেখেছি। সারা দুনিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল অনলাইনে। এমনকি ইউটিউবও কন্টেন্ট সার্ভ করতে হিমসিম খেয়েছিল।
প্রচুর প্রতিষ্ঠান অনলাইনে মুভ করেছে সেসময় (২০২০)। লকডাউন বা কোভিডকে “নিউ নরমাল” হিসেবে ধরে নিয়েই এগিয়েছে সবাই। তবে আপনার আমার বাসার নিচের মুদি দোকানটা কিন্তু অফলাইনেই ছিল। আর, লকডাউনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা সম্ভবত তারাই সামলেছে।
আজকের গল্পটা পাশের দেশের। ব্র্যান্ডের নাম ক্যাডবেরি। সময়টা দিওয়ালি।
গল্পের প্রয়োজনে তারা দোকানের পাঁচটা ক্যাটাগরি করলো। অলংকার/গিফট, কাপড়, ঘড়ি, চশমা এবং ক্যাডবেরি সেলিব্রেশন বক্স পাওয়া যায় এমন দোকান।
সারা ইন্ডিয়াকে পিন কোডে ভাগ করে প্রত্যেক পিন কোড/জিপ কোড এলাকা থেকে উল্লেখিত ক্যাটেগরি’র দোকানগুলোর ডেটাবেস তৈরি করলো। অগিলভি ইন্ডিয়া’র মতে, এই ১৮০০ দোকানের নাম এবং এরিয়া ডেটাবেস তারা ম্যানুয়েলি সংগ্রহ করেছে।
গল্পের সাথে সেই লোকাল শপগুলোর নাম সহ তারা এ্যাড তৈরি করলো। বিজ্ঞাপনটা দেখে আসুন এখান থেকেঃ https://youtu.be/So16ZBPK6mo
ক্যাডবেরি এই ক্যাম্পেইনের ধরন বললোঃ হাইপার-লোকালাইজড বিজ্ঞাপন। ক্যাডবেরি বললো, তারা এ্যালগোরিদম ব্যবহার করে আপনাকে যে বিজ্ঞাপন দেখাবে, সেখানে আপনার সবচেয়ে কাছের লোকাল শপগুলোর নামই থাকবে। এই ট্র্যাকিং এর জন্য পিন কোড বা জিপ কোডের ব্যবহার করেছে তারা।
সিম্পল আইডিয়া। জিওলোকেশন বেইজড এ্যাডভার্টাইজিং এর দূর্দান্ত উদহারন। কেস স্টাডি’র একটা ভিডিও ক্যাডবেরি’র ইউটিউব চ্যানেলেই পাবেনঃ https://youtu.be/gBWLm6Sx1WI
প্রথমেই চিন্তা এলো, তারা এটা কিভাবে করলো। কোন একটা প্রোগ্রাম্যাটিক এ্যাড সার্ভিং প্লাটফর্মের সাথে কানেক্ট করে ভিডিও সার্ভ করে সেখানে ভিডিও’র উপর জিপিএস কোঅর্ডিনেশন হিসেব করে, সেই অনুযায়ী লোকাল শপের নাম বসিয়ে দিয়েছে ওভারলে হিসেবে?
খোঁজ করে পেলাম যে, ফেসবুক ইউটিউবেই বিজ্ঞাপন সার্ভ করেছে। নাথিং ফ্যান্সি চ্যানেল। গোটা ইন্ডিয়ার কথা বললেও, আসলে তারা বিজ্ঞাপনের জন্য টার্গেট করেছে ৭টা শহর। দিল্লি, মুম্বাই, পুনে, ইন্দো, লখনো, জয়পুর ও আহমেদাবাদ।
ইউটিউবের একটা টুল আছে, ডিরেকটর মিক্স। এর মাধ্যমে আপনি এক বিজ্ঞাপন ভিডিও’র শত/হাজার ভার্সন বানাতে পারবেন। (https://create.withgoogle.com/tools/director-mix)
ক্যাডবেরি এটা ব্যবহার করে প্রত্যেক পিনকোডের বিপরীতে একটা করে ভার্সন তৈরি করে সেটা দিয়ে সেই এরিয়াতে এ্যাড সার্ভ করেছে। https://mndlz.co/live?p=400101 – এই এড্রেস এর শেষে জিপ কোড চেঞ্জ করে করে আলাদা এরিয়ার আলাদা বিজ্ঞাপন চেক করতে পারবেন।
ঝামেলা বাধলো, বিশাল এক অডিয়েন্স তাদের সোস্যাল মিডিয়াতে যেয়ে বিজ্ঞাপন চেক করে দেখতে গেলো। ফেসবুক/ইউটিউবের রেগুলার রেকমেন্ডেশন পেয়েও অনেকে অর্গানিকালি সেটা দেখলো। সেখানে কিন্তু সবাই একটা ভার্সনই দেখলো। কারন, বিজ্ঞাপনে সার্ভ করা ভিডিওর ভার্সন হয়, অর্গানিক ভিডিওর কোন ভার্সন হয়না।
শুরু হলো কমেন্ট সেকশনে নেগেটিভ কমেন্ট এর বন্যা।
আইডিয়া বা এফোর্ট নিয়ে কারো প্রশ্ন নেই। সবার কথা একটাই, “বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে লোকাল শপ সাপোর্টের কথা। কিন্তু আমি পুনে থেকে বসে মুম্বাইয়ের লোকাল শপ দেখছি। এই মিথ্যাচারিতা ভালো নয়।” অনেকে বলছে, “হুম, লোকাল শপ থেকেই খাবো, তবে তোমাদের চকলেট না। জিলাপি আর মিঠাই। চকলেট কখনোই দিওয়ালি’র অংশ ছিল না।”
(কিছু প্রতিক্রিয়াঃ https://beast-of-traal.s3.ap-south-1.amazonaws.com/…
খুবই মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এক্সিকিউশনের জন্য এত সুন্দর একটা আইডিয়া নষ্ট হয়ে গেল। পেইড বিজ্ঞাপন হিসেবে এক্সিকিউশন দূর্দান্ত হয়েছে। কিন্তু, অর্গানিক ভার্সনের ব্যাপারে এক্সিকিউশন ঠিক জমেনি।
Cause-Marketing এ খুবই সফল ক্যাডবেরি এই ক্যাম্পেইন দিয়ে। ইউটিউবের জেনেরিক ভার্সনটা ভিউ হয়েছে ৪৫ লক্ষবারের বেশি। আমি প্রায় ৫০/৬০ টা জিপ কোড দিয়ে ভিডিও চেক করে দেখেছি। এভারেজে দুই-তিন হাজার ভিউ প্রতি ভিডিওতে। তবে মুম্বাইয়ের বিশাল এরিয়ার জিপ কোড ভিডিওতে বারো হাজারের বেশি ভিউ দেখেছি। সেই হিসেবে প্রায় ৩৫-৩৬ লক্ষ ভিউ এসেছে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এওয়ারনেস বিল্ডিং কিংবা ব্র্যান্ডিং এ, আমি বলবো ক্যাডবেরি সফল।
এই পুরো ক্যাম্পেইন এর আইডিয়েশন থেকে এক্সেকিশনে, সময় লেগেছে আড়াই মাস।
আমার শিক্ষা সমূহঃ
১. টেকনোলজি এর পূর্ণ ব্যবহারঃ টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে পূর্ণরূপে। ফেসবুক ইউটিউব গুগলের অনেক টুল আছে, যেগুলোর ব্যবহার বাংলাদেশে আমি খুবই কম দেখেছি। বাজেট এখানে বিরাট এক ফ্যাক্টর, আমি বুঝি। তবুও যতটুকু সম্ভব হয়। মাস্টহেড নিয়ে যেহেতু কাজ হচ্ছে, অনেক ব্র্যান্ডেরই বাজেট থাকে। অডিয়েন্স-ও একটা ফ্যাক্ট। যেমন আমি যদি ফেসবুকের অগমেন্টেড রিয়েলিটি ব্যবহার করে ক্যাম্পেইন করতে চাই ম্যাস স্কেলে, ফেল করার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, অনেক ডিভাইসেই এটা সাপোর্ট করে না।
২. Cause মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ফোকাসটা ব্যান্ড এর চেয়ে Cause এর দিকে দিলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ক্যাডবেরি’র ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
৩. বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে মাইক্রো-মোমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে দেখাতে পারলে উদ্দেশ্য সফল।
৪। ক্যাম্পেইনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পেইড চ্যানেলে ফোকাস না দিয়ে অর্গানিক বা আর্নড (Earned) মিডিয়া এর দিয়েও নজর রাখতে হবে।
যে ইনফোটা অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারিনি, সেটা হল লোকাল শপগুলোতে ঠিক কি পরিমানে ফুটফল পড়েছে, এই ক্যাম্পেইনের ইমপ্যাক্ট হিসেবে।
এটা কোন কেস স্টাডি নয়। পুরোটাই অবজার্ভেশন এবং রিসার্চ। তথ্যে কোন ভুল থাকলে শুধরে দেবেন।
Writer – Mazharul Islam Nishad