‘স্যাম রাইমি’র ডিরেকশন আর মুখচোরা ইন্ট্রোভার্ট টিন-এজারের চরিত্রে ‘টবে ম্যাগুইর’ এর অসাধারণ অভিনয় মিলিয়ে ২০০২ সালে বের হওয়া ‘স্পাইডার ম্যান’ ট্রিলজি খানা আমার পছন্দের মুভিগুলোর ভেতর একটি । তখনও 3D আর Blue-screen নামের দৈত্যযুগল এসে সিনেমার Storytelling-টাকে গলাটিপে মেরে ফেলেনি । তখনও সিনেমা মানে স্পেশাল এফেক্ট আর থ্রী-ডি ফিল দেবার জন্য নানান ফাঁক ফোকর দিয়ে ক্যামেরার অযথা ছোটাছুটি নয়, বরং তখনও সিনেমা মানে অসাধারণ অভিনয়ের সাথে ধীর-স্থির এবং গভীরভাবে গল্পশোনার এক দারুণ অভিজ্ঞতার নাম ছিল । যা হোক, সেই ট্রিলজির প্রথম সিনেমাতে এক অসাধারণ ডায়ালগ ছিল, যা আমার প্রায় সময়েই মনে পরে । পিটারকে যখন তার ‘চাচা বেন’ বক্সিং পিটে নামিয়ে দিয়ে আসতে যায় তখন গাড়ির ভেতর বসে সে পিটারকে বলেছিল – “Remember, with great power comes great responsibility“। এটাই ছিল পিটারের সাথে চাচা বেনের শেষ কথোপকথন । তারপরেই দুষ্কৃতিকারীর ছুরির আঘাতে সে মারা যায় ।
.
এই ডায়ালগটি আমার ইদানিং আবার খুব বেশী বেশী মনে পড়ছে আমাদের দেশের ব্যবসা-অঙ্গনে সেলিব্রেটিদের হালচাল দেখে ।
.
আমার ‘ঠিক-বেঠিক মার্কেটিং’ বইতে একটা টপিক আছে – “সেলিব্রেটি এনডোর্সমেন্ট – কী, কেন এবং কীভাবে নয় ?” সেখানে বিস্তারিত বলেছি কোনো ব্র্যান্ড বা কোনো প্রতিষ্ঠান কেন এবং কখন সেলিব্রেটি ব্যবহার করে । সে বিষয়ে এখন আর বলব না । যারা জানতে চান তারা বই থেকেই পড়ে ফেলতে পারবেন । কিন্তু সে তো গেলো ব্র্যান্ডের দিক থেকে । কিন্তু একজন সেলিব্রেটির দিক থেকে এই বিষয়ে দায়িত্বটা কি ? যে কোনো ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠান চাইলেই কি একজন সেলিব্রেটির নিজেকে ব্যবহার করতে দেয়া উচিৎ ? বিনিময়ে শুধু টাকা পেলেই হলো ? আর কিছু নয় ? আর কোনো কিছু খেয়াল না করলেও হয় ? আর কোনো দায়িত্ব তাঁর নেই ?
.
প্রথমেই বলি ‘ব্র্যান্ড এ্যাম্বেসেডর’ আর ‘ব্র্যান্ডের এ্যাডে অভিনয় করা’ কিন্তু এক নয়; বরং ভিন্ন দুটি জিনিষ । যখন কেউ অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে কোনো ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপণের গল্পে কাজ করে, তখন মূলত: তাঁর অভিনয় দক্ষতাটাই সেখানে ব্যবহার করা হয় । এখানে সেই অভিনেতা-অভিনেত্রী কিন্তু ব্যক্তি বা এক্সপার্ট হিসেবে কোনো কিছু endorse করছেন না । তিনি তখন শুধু গল্পের একখানা চরিত্র হিসেবে অভিনয় করছেন । যতক্ষণ গল্পটি বা চরিত্রটি তাঁর ব্যক্তিগত বিশেষত্বের বাইরে থাকে, ততক্ষণ সেটি এনডোর্সমেন্ট নয়, ব্র্যান্ড এ্যাম্বেসেডরশীপও নয় । কিন্তু যদি এ্যাডটি সেই সেলিব্রেটির ব্যক্তিগত চরিত্র / পেশা / প্রভাবের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়, তবে সেটি কিন্তু তখন ‘এনডোর্সমেন্ট এবং এ্যাম্বেসেডরশীপ’ হয়ে যায় ।
.
উদাহরণ হিসেবে ধরুণ – আবুল হায়াত । বরেণ্য এই অভিনেতা ব্যক্তিগত জীবনে ‘সিভিল ইঞ্জিনিয়ার’ । জীবনে অসংখ্য নাটক-সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন এবং সাথে অনেক বিজ্ঞাপণেও । তিনি যখন বিজ্ঞাপণে একজন বাবা-শ্বশুর-স্কুল মাস্টার-চেয়ারম্যান হিসেবে অভিনয় করেন, তখন সেটি এনডোর্সমেন্ট বা এ্যাম্বেসেডরশীপ কোনোটিই নয় । কারণ, সেখানে শুধু ‘অভিনেতা আবুল হায়াত’কে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র, ‘ইঞ্জিনিয়ার আবুল হায়াত’কে নয় । কিন্তু কোনো বিজ্ঞাপণে যদি তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে appear করেন বা এ ধরণের কোনো কথা বলেন“একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আমি বলছি / আস্থা রাখি / রেকমেন্ড করি… … …” ইত্যাদি, ইত্যাদি তবে সেটি কিন্তু আর তখন নিছক অভিনয় থাকে না, বরং এনডোর্সমেন্ট এবং এ্যাম্বেসেডরশীপ হয়ে যায় ।
.
ঠিক একইভাবে বলা যায় লাক্স সাবানের এ্যাডগুলোর কথা । সেখানে প্রত্যেক অভিনেত্রীই লাক্সের গ্ল্যামারাস ইমেজের প্রতীক হিসেবে নিজের গ্ল্যামারাস ইমেজসহ একজন অভিনেত্রী হিসেবেই হাজির হন । সুতরাং, সেটিও এনডোর্সমেন্ট এবং এ্যাম্বেসেডরশীপের সংজ্ঞায় পড়ে । তাই যখন লাক্সের এ্যাডে নতুন কোনো অভিনেত্রী কাজ করেন, তখন খেয়াল করে দেখবেন ইউনিলিভার থেকে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকে “লাক্সের ব্র্যান্ড এ্যাম্বেসেডর হলেন অমুক” ।
.
পার্থক্যাটা সূক্ষ্ণ, তবে অবশ্যই আলাদা করার মত ।
.
শুধু বিজ্ঞাপণে অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করা একজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সাথে সেই ব্র্যান্ডের সম্পর্কটা থাকে খুব সামান্য এবং সাময়িক । বিজ্ঞাপণের কাজ শেষ, তাঁর সম্মানী পাওয়া শেষ, ব্যস্ । এরপর খুব বেশী হলে কিছু মাস তার সাথে ব্র্যান্ডের একটা চুক্তি থাকে, যার বেশীরভাগটাই হচ্ছে সে ঐ সময়ের ভেতর তিনি অন্যকোনো প্রতিযোগী ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে কাজ করতে পারবেন না – এরকম কিছু একটা । প্রতিষ্ঠানের সাথে সেই সেলিব্রেটির আর তেমন কোনো দায়-দেনা-সম্পর্ক থাকে না ।
.
কিন্তু’ ব্র্যান্ড এ্যাম্বেসেডর’ হিসেবে আপনি যখন একটি ব্র্যান্ডকে এনডোর্স করেন, তখন তার প্রভাব-ব্যাপ্তি-সময়কাল যেমন অনেক বড়, ঠিক তেমন দায়িত্বটাও অনেক বড় । আপনি কিন্তু তখন শুধু ত্রিশ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপণের একজন চরিত্রাভিনেতাই নন, বরং এমন একজন ব্যক্তি যার ব্যক্তিগত বিশ্বাসযোগ্যতা, ইমেজ এবং সুপারিশের উপর ভরসা করে বহুলোক ডিসিশন নিচ্ছে ! যার সাথে ঐ ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কটি অনেক অনেক মানুষের সিদ্ধান্তে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে ! সুতরাং, সেই ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানটি তার কনজ্যুমার এবং কাস্টোমারদের সাথে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করছে কিনা, সেটা তখন সেই সেলিব্রেটিরও ব্যক্তিগত দায় হিসেবে চলে আসে । এমনকি চুক্তিপত্রের সময় পার হয়ে গেলেও সেই দায় থেকে যায় ।
.
আমি জানি ঠিক এখানেই অনেকেই “হা রে রে !” করে উঠবেন । বলবেন “চুক্তির সময় শেষ হয়ে গেলে আবার দায় কিসের ?”
.
আমি বলব, আইনত: দায় না থাকেলেও নৈতিক দায় আপনার থাকেই । আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাসযোগ্যতা, ইমেজ, সুপারিশ এবং সম্পর্কের উপর ভরসা করে যদি কেউ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা যখনই হোক, যত বৎসর পরেই হোক, তাতে আপনার নৈতিক দায় আছে । কারণ, সে ভরসা করেছে আপনার কথাকে, আপনার সুপারিশকে, ব্র্যান্ডের বা প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনার সম্পর্ককে । সুতরাং, সেই ভরসার প্রতিদানে যদি গড়মিল হয়, তবে আপনাকে তার জন্য প্রশ্নবিদ্ধ করাই যায় – সেটি আইনের কাঠগড়ায় না হলেও, বিবেকের কাঠগড়ায় তো বটেই ।
.
এই ব্যপারটি এখনকার সোস্যাল-মিডিয়ার সময়ে সেলিব্রেটিদের জন্য আরও অনেক বেশী করে খাটে । আগে তো তাও একজন সেলিব্রেটিকে লোকে মান্য করত, ভক্তি করত, ভালবাসত; কিন্তু এখন সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সেলিব্রেটি সাধারণ মানুষদের খুব কাছের একজন মানুষ । তাঁকে লোকে এখন আর শুধু মান্য-ভক্তি আর ভালইবাসে না; বরং ‘Follow’ করে । অভিধান খুঁজলে দেখবেন Follow মানে “অনুসরণ করা, অনুকরণ করা, অনুগমণ করা ।” অর্থাৎ, সেলিব্রেটি’র ভুমিকা এখন কিন্তু অনেকটা ‘পথ-প্রদর্শক’ এর মত । সে যা বলে-করে-দেখায়, তাঁর ভক্তরাও সেটি মান্য করে-বিশ্বাস করে-অনুকরণ করে-অনুসরণ করে । সে যখন বলে আমি এটা খাই, ভক্তরাও সেটা খায় । সে যখন বলে আমি এটা পরি, ভক্তরাও সেটা পরে । সে যখন বলে আমি এটা কিনি, এখানে কিনি, ভক্তরাও সেটা কিনে, সেখান থেকে কিনে । সে যখন বলে আমি এটার সাথে জড়িত বা কাজ করি, ভক্তরাও তখন সেখানে জড়িত হতে সিদ্ধান্ত নেয় ।
.
এটা কিন্তু এক বিশাল ক্ষমতা !
.
এই ক্ষমতার কারণ সেলিব্রেটির ‘ব্যক্তিগত বিশ্বস্ততা এবং জনপ্রিয়তা’ । লোকে তাঁকে পছন্দ করে এবং বিশ্বাস করে বলেই তাঁর কথা শোনে এবং মানে । তিনি যদি কোনো ব্র্যান্ডের বা কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যপারে রেকমেন্ড করেন, বা সেখানকার কোনো পদে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন, বা তাদের কাজে নিজেকে জড়িত করেন, তবে সেটি মানুষকে ভরসা যোগায় সেই ব্র্যান্ডের বা প্রতিষ্ঠানের ব্যপারে । মানুষ মনে করে ‘উনি’ যখন এটার সাথে আছেন, এটার কথা বলছেন বা এখানে কাজ করছেন তাহলে প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডটি নিশ্চয়ই ভাল এবং বিশ্বস্ত; নিশ্চয়ই তারা আমাকে ঠকাবে না ।
.
এটিই সেলিব্রিটি এনডোর্সমেন্টের মূল তত্ত্ব এবং চালিকা-শক্তি । না হলে একটা ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠান একজন সেলিব্রিটির পেছনে লাখ-লাখ, কোটি-কোটি টাকা খরচ করবেই বা কেন ?
.
যে সেলিব্রেটির ফলোয়ার যত বেশী, তার এই ক্ষমতাও ঠিক ততটাই বেশী ! উদাহরণ হিসেবে দেখুন মাত্র কয়েকমাস আগে রোনাল্ডোর সেই কোকের বোতল সরিয়ে দেয়ার ঘটনাটি । মাত্র ৪ সেকেন্ডের এই ঘটনাটি ‘কোকাকোলা’,র মত Giant Brand, যা কিনা বহুকাল যাবৎ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী Equity সম্পন্ন ব্র্যান্ড, তারও চৌত্রিশ হাজার কোটি টাকা’র (চার বিলিয়ন ডলার) বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে ! ভাবতে পারেন একজন সেলিব্রেটি এখন কি অমিত ক্ষমতাধারী !
.
সেলিব্রেটির কথার শুনে লোকে এখন খায়, পরে, দেখে, যায়, কেনে, ব্যবহার করে । এমনকি জীবনের সবচেয়ে বড় বড় সিদ্ধান্তগুলোও নেয় । যেমন কোথায় ছেলেমেয়েকে পড়াবে, কি পড়াবে, কোথায় অর্থ ইনভেস্টমেন্ট করবে, কোথায় নিজের সঞ্চয় রাখবে, কোথায় থাকবে, রোগ হলে কোথায় চিকিৎসা নেবে ইত্যাদি যার সাথে তার জীবন-মরণ-ভূত-ভবিষ্যৎ পর্যন্ত জড়িত !
.
প্রশ্ন হলো একজন সেলিব্রেটি এই ‘ক্ষমতা’ কিভাবে ব্যবহার করছেন ? সে চাইলে শুধু তাঁর নিজের পকেট ভরতে এটি ব্যবহার করতেই পারেন । কিন্তু তাঁর কথা শুনে যখন লাখ-লাখ, কোটি-কোটি লোক ছোটখাট দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে এমনকি জীবনের বড় বড় সিদ্ধান্তগুলোও নিচ্ছে, তখন শুধু নিজের পকেট ভরার কথা চিন্তা করাটা সেলিব্রেটিদের পক্ষে ঠিক কতখানি নৈতিক ? তাঁর কথা শুনে লোকে যখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, বা তার কাজ-কর্ম যখন লোকের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে, তখন সেই সিদ্ধান্তের কারণে যদি লোকের ক্ষতি হয় বা ধোঁকাবাজীতে পরে যায়, তবে আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে সেই সেলিব্রেটি কি সত্যিই দায় এড়াতে পারেন ?
.
আমি মনে করি পারেন না । কারণ, তিনিও এই ধোঁকার পেছনে সহায়ক হিসেবে ছিলেন । তিনিও এই ফাঁকিবাজীতে সাহায্য করেছেন । তিনিও ধোঁকাবাজীর collaborator and accomplice হিসেবে কাজ করেছেন । অবশ্য ঘটনা ঘটলে তিনি হয়ত বলতেই পারেন যে, যখন তিনি ছিলেন তখন ধোঁকাটা সামনে আসেনি, এসেছ পরে; তাই তিনি দায়মুক্ত । কিন্তু আমার যুক্তি বলে ধোঁকাটা সামনে কখন এসেছে সেটি বিচার্য হওয়া উচিৎ নয়, বরং বিবেচনায় আসা উচিৎ তাঁর কথা শুনে, বা তাকে দেখে কত লোকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ধোঁকা খেয়েছে সেটি – এবং সেটির সময়কাল যখনই হোক না কেন ।
.
একটা উদাহরণ দেই ।
.
মনে করুন একটা ডাকাত দল শহরে ডাকাতি করে বেড়ায় । কিন্তু তারা কখনও ধরা পরেনি । বেশ কিছুদিন ডাকাতি চালাবার পর দলের একজন বলল “আমি আর ডাকাতি করব না । ছেড়েছুড়ে ভাল গেলাম ।” এবং সে সত্যি সত্যি চলেও গেল । গিয়ে অন্য কোনা আইনসিদ্ধ ভাল কাজ করা শুরু করল । এই ঘটনার কিছুমাস পর সেই ডাকাতদল অবশেষে ধরা পরল । পুলিশ যখন তদন্ত করল জানা গেল এই দলে একসময় আমাদের এখনকার সেই আইনসিদ্ধ ভাল মানুষটিও ছিল । এখন যদি সেই ভদ্রলোক বলে “আমি যেহেতু এখন আর এই ডাকাত দলের সাথে নেই, সুতরাং এবিষয়ে আমার কোনো দায় নেই, আমি নিষ্পাপ ।” আপনি কি সেটা মেনে নিবেন ? কিংবা আইনেই দৃষ্টিতে কি সেটা মানানসই যুক্তি ?
.
আমি অতি-সামান্য একজন মার্কেটিয়ার, সামান্য দুধ বেচে খাই; মোটেও কোনো আইনজ্ঞ নই । আইনের মত জটিল বিষয়ে আমার এ্যাকাডেমিক জ্ঞানও খুবই স্বল্প । জানি উপরের যুক্তিটিও হয়ত আইনের মারপ্যাঁচে টিকবে না । সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথাও নেই । কারণ আমি এখানে আইনের প্যাঁচ কষতে বসিনি, বরং Celebrity endorsement এবং এর দায়-দায়িত্বের বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গীটা শেয়ার করছি মাত্র । আপনি আমার সাথে একমত হতে পারেন, বা দ্বিমতও হতে পারেন । কোনোটিতেই আমার কোনো সমস্যা নেই ।
.
তবে মানব সমাজে সবসময়ই দুটো মাপকাঠি চালু আছে – ‘Legal’ এবং ‘Ethical’ । এই দুটো বিষয় সবসময় একসাথে হাত ধরাধরি করে নাও চলতে পারে । কখনও কখনও কোনো কোনো বিষয় Legal হলেই Ethical হয়ে যায় না । আবার Ethical হলেও অনেক সময় অনেক কিছুই Illegal হয় । এনিয়ে বিস্তারিত আরেকদিন হয়ত আলোচনা করা যাবে । তবে মোদ্দা কথা হলো এটাই যে একজন সেলিব্রেটি তার কথা, কাজ, আচরণ বা কর্মকান্ড দিয়ে কাকে বা কিকে Endorse করছেন, কি বিষয়ে মানুষকে প্রভাবিত করছেন, সেটির দায় তাঁকে নিতেই হবে – Legally না হলেও অন্ত:ত Ethically তো বটেই। উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে গেলে আইনের ফাঁক দিয়ে তিনি পার পেয়ে গেলেও, নৈতিকভাবে তিনি পার পেতে পারেন না ।
.
একজন সেলিব্রেটিকে তাই কোনো ব্র্যান্ড-প্রতিষ্ঠান-প্রোডাক্ট-সার্ভিস endorse করার আগে তাই ঠিকঠাক মত জেনে-বুঝে করা উচিৎ । সেটি করলে আখেরে তাঁরই লাভ । কারণ তাঁর ইমেজ এবং বিশ্বাসযোগ্যতাটাই কিন্তু তাঁর মূল সম্পদ । সেটা যদি অপাত্রে ব্যবহার করে খুইয়ে ফেলেন, তবে আখেরে তাঁরও ক্ষতি । কারণ, একবার ইমেজ এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে গেলে আর ফেরৎ পাওয়া যাবে না । তাঁর সেলিব্রেটি ক্যারিয়ারও শেষ !
.
আর একজন সেলিব্রেটি যদি শুধু টাকার জন্য তাঁর ইমেজ বেচে দিয়ে লক্ষ-কোটি মানুষের ক্ষতির কারণ হন, তবে সেটার দায়-দায়িত্বও তাকে অবশ্যই নিতে বাধ্য করা উচিৎ । শুধু নৈতিক ভাবেই নয়, আইনগত ভাবেও । এটা যদি করা শুরু হয়, তবে উল্টা-পাল্টা-ভেজাল প্রোডাক্ট কিংবা ফাঁকিবাজীর ব্যবসায় সেলিব্রেটিদের চেহারা দেখানো বা অংশগ্রহণ করা বন্ধ হয়ে যাবে । তাঁরা সাবধান হবেন এবং কোনো কিছু এনডোর্স করার আগে বা কিছুর সাথে পাবলিকলি জড়িত হবার আগে খোঁজখবর নিবেন, অন্ত:ত দশবার ভাববেন । তাতে কিছু বোকা এবং নিরীহ মানুষ লুট হওয়া থেকে বাঁচবে ।
.
চাচা বেন সেই ১৯ বছরে আগেই বলে গিয়েছেন “With great power comes great responsibility“। সেলিব্রেটি হয়ে আপনি শুধু Power-এর মজাটা লুটবেন, Responsibility’র দায়টুকু নেবেন না, তা তো হতে পারে না ।
Writer – Galib Bin Mohammad