Written by 4:13 pm Brand Practitioners, Digital Marketing

ফেসবুক শপ নিয়ে খুটিনাটি।

100491886 10159812503032598 1203745338679099392 o
Walton

ফেসবুক শপ

ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের জন্য নিয়ে আসলো দারুন এক্সসাইটিং একটা ফিচার – ফেসবুক শপ।

১৯শে মে, ২০২০, ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গ তার এক ভিডিও বার্তায় ফেসবুক শপের কথা ঘোষণা করে।

ফেসবুক শপ কি?

ফেসবুক শপ হল ফেসবুকের ভেতরে একটা “অনলাইন স্টোর”। এটা আপনি আপনার ফেসবুক পেইজে বা ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইল/অ্যাকাউন্টের মধ্যেই তৈরি করতে পারবেন একদম ফ্রিতে। আপনার ফেসবুক ফলোয়াররা আপনার তৈরি করা এই স্টোর থেকে কেনাকাটা করতে পারবে খুব সহজেই।

এই ফেসবুক স্টোরে যথেষ্ট কাস্টমাইজেশনের সুযোগ থাকবে যেমন আপনি আপনার ইচ্ছা মতো প্রোডাক্ট আপলোড করে আপনার প্রডাক্টের “কালেকশন” তৈরি করতে পারবেন, স্টোরের জন্য আপনার মন মতো ব্যানার দেয়া, আপনার ব্র্যান্ড কালারের সাথে মিল রেখে লেখার (ফন্ট) কালার পরিবর্তন এবং আপনার ইচ্ছা মতো ফন্ট ব্যবহার করতে পারবেন।

একজন ক্রেতা একটা ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মতোই আপনার ফেসবুক স্টোরে এসে, আপনার সমস্ত প্রোডাক্টের কালেকশনগুলো ব্রাউজ করে দেখতে পারবে, কোন প্রোডাক্ট পছন্দ হলে সেটা পরে কেনার জন্য “সেভ” করে রাখতে পারবে এবং কোন প্রোডাক্ট কিনতে চাইলে তাৎক্ষনিকভাবে “অর্ডার প্লেস” করতে পারবে।

আপনি চাইলে ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রাম স্টোরিজের মাধ্যমে অথবা অ্যাড ক্যাম্পেইনের মাধ্যমেও আপনার ফেসবুক স্টোরকে আপনার পটেনশিয়াল ক্রেতার কাছে প্রমোট করতে পারবেন।

সত্যিই, আর কি চাই বলুন তো।

আমরা না চাইলেও, ফেসবুক আমাদের আরো দিতে চায়। আসুন জেনে নেই আর কি কি এক্সট্রা ফিচার থাকছে।

আমরা যখন কোন একটা দোকানে/শো-রুমে যাই, তখন হয় আমাদের কোন প্রোডাক্ট নিজে থেকে বাছাই করে কিনে ফেলি অথবা কোন প্রোডাক্টের ব্যাপারের কোন কিছু জানার থাকলে বিক্রেতা বা শো-রুমে কাজ করা মানুষদের জিজ্ঞাসা করি।

ফেসবুকে শপে ঠিক এই ফিচারগুলোও থাকবে, অর্থাৎ যেকোন কাস্টমার কোন প্রোডাক্টের ব্যাপারের বিস্তারিত জানতে চাইলে, অর্ডার ট্রাকিং এর খোঁজ নিতে, কিংবা যেকোন সাহায্যর জন্য সে আপনাকে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক পেজের মেসেঞ্জার বা ইন্সটাগ্রামে ডাইরেক্ট মেসেজ পাঠাতে পারবে।

আর ফেসবুকের পরবর্তি আপডেটে, একজন ক্রেতা হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক পেজের মেসেঞ্জার বা ইন্সটাগ্রামে ডাইরেক্ট মেসেজের ইনবক্সের ভেতর থেকেই চ্যাট করতে করতে আপনার “ফেসবুক শপ” – এর যেকোন প্রোডাক্ট তাৎক্ষণিক ভাবে অর্ডার করতে পারবে। অর্থাৎ, অর্ডারিং প্রসেসটা চলবে সম্পূর্ণ ম্যাসেজিং প্লাটফর্মের ভেতরেই।

নতুন আর কি কি থাকছে?

ইন্সটাগ্রাম শপঃ

আপনি আপনার ইন্সটাগ্রাম বিজনেস প্রোফাইলে বা একাউন্টেও শপ সেটআপ করতে পারবেন। এবং ফেসবুকের মতনই এখন থেকেও কাস্টমারারা আপনার প্রোডাক্টের কালেকশন দেখে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে পারবে।

এই মুহূর্তে, ইন্সটাগ্রামে কোন ডেডিকেটেড বা ফিক্সড “শপিং ট্যাব” নেই। তবে, ফেসবুক বলেছে এবছরের শেষের দিকে তারা এই ফিচারটিও যুক্ত করে দেবে।

লাইভ শপিংঃ

এই ফিচারটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। এখন অনেকই তাদের পেজ থেকে লাইভে এসে প্রোডাক্ট দেখিয়ে বিক্রি করেন। যেমন – জামা কাপড়, কসমেটিক্স বা বিউটি প্রডাক্টস, খাবার ইত্যাদি।

ফেসবুক উনাদের এই কষ্টের চেস্টাটাকে অনেক পছন্দ করেছে। যেকারনে, “লাইভ শপিং ফিচারের” মাধ্যমে, আপনি ফেসবুক লাইভ করার সময়, আপনি যে যে প্রোডাক্টগুলো নিয়ে লাইভ করছেন, সেগুলো আপনি আপনার লাইভের স্ক্রিনে দেখাতে পারবেন। আর আপনার কাস্টকার বা লাইভের ভিউয়ার, সেই সময় সেখান থেকে তক্ষনি অর্ডার প্লেস করতে পারবেন।

তবে, সে প্রোডাক্টগুলো লাইভ চলাকালীন অর্ডার করা যাবে, সেগুলো আগে থেকেই আপনার ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামের শপের “কালেকশন” – এর মধ্যে উপলোড বা অ্যাড করে রাখতে হবে। আপনার, শপের কালেকশনে প্রোডাক্টটা না থাকলে, আপনি লাইভ চলার সময়, সেই “প্রোডাক্টটা” ট্যাগ করতে পারবেন না।

ফেসবুক খুব সম্ভবত এই বছরের (২০২০) মে মাসের শেষের দিকে বা জুন মাসে এই ফিচারটি চালু করবে।

কি দারুন না?

ফেসবুক শপে লয়্যাল্টি প্রোগ্রামঃ

আমরা সবাই জানি লয়্যাল্টি প্রোগ্রাম কি? আপনি যখন কোন ভালো বা ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কিছু কিনেন, তখন দেখবেন তারা আপনাকে বেশিরভাগ সময়ে একটা “লয়্যাল্টি কার্ড” দিচ্ছে। অনলাইন শপগুলো দেয় “রিওয়ার্ড পয়েন্ট”।

এরমানে, আপনি যখন তাদের কাছ থেকে কিছু কিনবেন, তখন আপনার একাউন্টে কিছু “পয়েন্ট” যোগ হবে। যখন আপনার অনেক পয়েন্ট জমে যাবে, তখন আপনি পয়েন্ট ভাঙিয়ে সেটা দিয়ে অন্য কোন প্রডাক্ট ফ্রি-তে কিংবা ডিসকাউন্টে কিনতে পারবেন।

যেকোন ব্যবসায় লয়্যাল্টি প্রোগ্রাম রাখা হয় কাস্টমার রিটেনশনের বা ধরে রাখার জন্য, যাতে একই কাস্টমার সব সময় আপনার কাছ থেকেই পণ্য কিনে।

আর খুশির ব্যাপার হল – ফেসবুক শপের ভেতরেও আপনি চালু করতে পারবেন এই লয়্যাল্টি প্রোগ্রাম। অর্থাৎ, কোন কাস্টমার যদি আপনার ফেসবুক শপ থেকে কিছু কেনে, তবে তাকে আপনি চাইলে কিছু “পয়েন্ট” দিতে পারেন। কত টাকার বিক্রিতে, কত পয়েন্ট দেবেন সেটা পুরোপুরি আপনার ব্যাপার এবং একজন কাস্টমার, সেই পয়েন্ট কিভাবে ভাঙাতে পারবে, সেটাও আপনাকে ফিক্সড করে দিতে হবে।

আর কাস্টমারও, তার ফেসবুক আকাউন্টে তার অর্জিত “রিওয়ার্ড পয়েন্টগুলো” দেখতে পারবেন।

বাংলাদেশে কি আপনি ফেসবুক শপ সেটাপ করতে পারবেন?

এটা ফেসবুকের খুব নতুন একটা ফিচার, তাই তারা ধীরে ধীরে এটা বিভিন্ন দেশে একে একে এটা চালু করছে। আমি আশা করছি, আমরা বাংলাদেশও এটা সবাই খুব দ্রুত পেয়ে যাব।

তবে, যাদের ফেসবুক পেজে অলরেডি – ফেসবুকের পুরাতন “শপ” অপশনটি চালু আছে, তারা এটা দ্রুত পেয়ে যাবেন।

তাই, যারা এই সুবিধাগুলো নিতে চান, তারা ফেসবুকের শপ অপশনটি এখুনি চালু করে রাখতে পারেন।

বাংলাদেশি টাকায় কি কেনাকাটা বা পেমেন্ট দেয়ানেয়া করা যাবে?

আপনি পেমেন্ট দেয়া-নেয়ার ব্যাপারটা তিন ভাবে করতে পারেন।

এক/ আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমেঃ

আপনার যদি অলরেডি কোন ওয়েবসাইট থাকে, এবং সেখানে “পেমেন্ট গেটওয়ে” যুক্ত করা থাকে – তবে, আপনি আপনার নিজের ওয়েবসাইটের সাথে ফেসবুক শপের কানেকশন করে পেমেন্ট নিতে পারেন।

দুই/ ফেসবুকের ভেতরেই লেনদেনফাস্ট এবং নেটিভভাবেঃ

ফেসবুক এখন পর্যন্ত যেটা বলছে, শুধুমাত্র আমেরিকার ভেতর কেউ লেনদেন করলে, ফেসবুকের ভেতরেই পেমেন্ট করা যাবে।

কিন্তু, ফেসবুক বিভিন্ন অনলাইন শপিং এর প্লাগিন এবং প্লাটফর্মের (যেমন, সপিফাই, বিগকমার্স, উকমার্স, চ্যানেল এডভাইজর, ক্যাফে২৪, ফ্রিডোনোমিক্স ইত্যাদি) সাথে নিজেদের ইন্ট্রিগেশন করছে খুব দ্রুত।

আমি আশা করছি, যদি “উকমার্স” এর সাথে ফেসবুকের এগ্রিমেন্ট হয়ে যায়, তাহলে আমরা উকমার্স-এর মাধ্যমে আমাদের দেশের কোন “পেমেন্ট গেটওয়ে” সেটআপ করে – বাংলাদেশি টাকায় পেমেন্ট নিতে পারবো। তবে, ফেসবুকের ভেতরে কি করে “উকমার্স” এবং “পেমেন্ট গেটওয়ে” সেটআপ করতে হবে, সেটা এই মুহূর্তে আমি জানাতে পারছি না। আমি জানার পরে, আপনাদের জানি দেব।

বাংলাদেশের ৯৫% ই-কামার্স ওয়েবসাইট বানানো উকমার্স দিয়ে। আর ভালো ভালো পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানিদের নিজস্ব “এপিআই” আছে উকমার্স এর জন্য। “এপিআই” হল ছোট্ট একটা কোড নাম্বার শুধুমাত্র, আপনার উকমার্স প্লাগিনের মধ্যে বসিয়ে দিলেই কাজ শেষ – এক মিনিটের কাজ।

আমি আমার যে সমস্ত ক্লায়েন্টকে ই-কমার্স সাইট বানিয়ে দিয়েছি, তার সবগুলোই চলছে উকমার্স দিয়ে। এটা একটা ফ্রি প্লাগিং কিনতে হয় না কিন্তু প্রোডাক্ট এবং পেমেন্ট ম্যানেজ করা খুব সহজ। এখন পর্যন্ত কারো কোন কমপ্লেইন নেই।

তিন/ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেবিকাশ বা ক্যাশ অন ডেলিভারিঃ

আপনি ফেসবুকের শপের মাধ্যমে অর্ডার হলে, আপনি কমপ্লিট বিকাশ বা ক্যাশ অন ডেলিভারি যেকোন মাধ্যমে, এখন যেভাবে পেমেন্ট নিচ্ছেন সেভাবে নিতে পারবেন।

তাহলে, ফেসবুক শপ থেকে আপনি কি কি সুবিধা পাচ্ছেন

১. আপনার কোন ওয়েবসাইট না থেকেও আপনার কাস্টমারকে অনলাইন শপিং এর পুরো মজা দিতে পারছেন

২. নিজের মতোন করে একটা – অনলাইন স্টোর তৈরি করতে পারছেন

৩. ফেসবুক লাইভে প্রোডাক্টের তাৎক্ষণিক অর্ডার নিতে পারবেন

৪. আপনার কাস্টমারদের বড় বড় ই-কমার্স সাইটের মতোন করে “রিওয়ার্ড পয়েন্ট” দিতে পারবেন, এতে আপনার লয়্যাল কাস্টমারের সংখ্যা বাড়বে

৫. আপনার অনলাইন স্টোরের যেসমস্ত প্রোডাক্ট / কালেকশন থাকবে সেগুলো ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামে অ্যাড আকারে কাস্টমারকে দেখাতে পারবেন

একটা কথা মনে রাখবেন, ফেসবুকের ব্যবসা কিন্তু বড় বড় কর্পোরেট হাউজ বা কোম্পানি দিয়ে চলে না। ফেসবুকের আয়ের মূল উৎস হল – ছোট এবং মাঝারি সাইজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একটা বড় কম্পানির কাছে মার্কেটিং – এর অনেক বাজেট এবং রাস্তা থাকে, কিন্তু এসএমই ক্যাটাগরির ব্যবসায়ীদের থাকে নাই।

তাই এই দুর্যোগের সময়, একটু তাড়াহুড়ো করেই আমার ধারনা ফেসবুক তাদের এই ফিচারটা চালু করেছে। হয়ত, আরো কিছুদিন পরে করার প্ল্যান ছিল – কিন্তু, ছোট ছোট ব্যবসা যদি মারা যায়, তবে ফেসবুকের আয় ইনকামও কমে যাবে। যেটাই, হোক না কেন, ফেসবুক-কে সাদুবাদ জানাই তাদের এই সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেবার জন্য।

আমার লেখাটা কেমন লাগলো জানাবেন।

যদি আপনাদের কোন ভালো এবং ইম্পরট্যান্ট ইনফরমেশন দিতে পারি এই পোস্টে, তাহলে সেটাই আমার জন্য আনন্দের।

ধন্যবাদ, আপনাকে কস্ট করে লেখাটা পড়ার জন্য।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
ডিজিটাল মার্কেটিং কনসালটেন্ট এবং ব্র্যান্ডিং এক্সপার্ট
সিইও, ডিজিম্যাক । সিইও, স্পিডনএক্স
লিঙ্কডইনঃ https://www.linkedin.com/in/anowarthebrand

 

Share this on
Close