৩১ মে, আব্দুল মোমেন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব আব্দুল মোনেম সাহেবের প্রথম মহা প্রয়াণ দিবস। ২০২০ সালের এই দিনে পরপারে পাড়ি জমান তিনি। তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন, আজীবন আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
প্রকৌশলী আব্দুল মোনেম ১৯৩৭ সালের ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিজেশ্বর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ২ ছেলে এবং ৩ কন্যা সন্তানের জনক। তার বড় ছেলে মইনউদ্দিন মোনেম এবং ছোট ছেলে মহিউদ্দিন মোনেম আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব পালন করছেন।
পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে এসএসসি পাস করে অল্প কিছু টাকা নিয়ে মোনেম ঢাকায় আসেন, যা দিয়ে চলাই দায় ছিল। পেশায় প্রকৌশলী, আবদুল মোনেম যাত্রা শুরু করেছিলেন অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ১৯৫৬ সালে এএমএল কনস্ট্রাকশন দিয়ে। মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি নিজের নামে গড়ে তোলেন ‘আবদুল মোনেম লিমিটেড। ধীরে ধীরে এই কম্পানিকে তিনি বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণ শিল্পের সামনের কাতারে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে একে একে প্রতিষ্ঠা করেন বিভিন্ন শিল্প কারখানা।
এছাড়াও, গত ৬০ বছরে এএমএল কনস্ট্রাকশন, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো বড় সংস্থার সঙ্গে উন্নয়নমূলক প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছেন তিনি।
জীবনকালে জনাব আবদুল মোনেম ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছিলেন অনেক ক্ষেত্রে। ১০ হাজারের বেশি মানুষ তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে তার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। অনেক কষ্ট, পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে, ধাপে-ধাপে তিনি তার প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছিলেন। এছাড়াও খাবার, বেভারেজ, ফার্মাসিউটিক্যালসসহ আরও নানা খাতে তিনি বিনিয়োগ করেন।
মোনেম গ্রুপ, ইগলু আইসক্রিম ইউনিট প্রতিষ্ঠা ছাড়াও এএম বেভারেজ ইউনিটের অধীন এএমএল কোকা-কোলা ব্র্যান্ডের কোকা-কোলা, ফান্টা ও স্প্রাইট বোতলজাত করে আসছে। সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভারসহ দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণকাজে যুক্ত এএমএল কন্সট্রাকশন, মেট্রো রেল প্রকল্প এবং পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পেও বিভিন্ন কাজে জড়িত রয়েছে মোনেম গ্রুপ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে নির্মাণের কাজেও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।
১৯৮২ সালে আইসক্রিম ইউনিট ও বেভারেজ ইউনিট, ২০০০ সালে ম্যাঙ্গো পাম্প প্রসেসিং, ২০০৪ সালে ইগলু ফুডস, ড্যানিস বাংলা ইমালশন, সিকিউরিটি ও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইগলু ডেইরি প্রোডাক্টস। ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে প্রযুক্তি শিল্পের অংশ হিসেবে ২০০৬ সালে আবদুল মোনেম এসইবিপিও (আউটসোর্সিং কোম্পানি) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি গ্রহণ করেছিলেন। ২০০৭ সালে সুগার রিফাইনারি ও এম এনার্জি, ২০০৮ সালে নোভাস ফার্মাসিউটিক্যালস, ২০১০ সালে এএম অ্যাসফল্ট অ্যান্ড রেডিমিক্স, ২০১২ সালে এএম অটো ব্রিকস, ২০১৪ সালে এএম ব্র্যান্ড অয়েল কম্পানি এবং ২০১৫ সালে আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোন নামে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দেশের দ্বিতীয় বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলেন প্রয়াত আবদুল মোনেম।
এই মহান কারিগরের মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কালের কণ্ঠ পরিবার, অবিস্মরণীয় এই মনিশির আত্মার মাগফেরাত করছে।