রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ২০১৮ সালে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা খরচ করে স্বয়ংক্রিয় চালকল তৈরি করেছিল সজীব গ্রুপ। হাশেম রাইস মিলস লিমিটেড নামে এই প্রতিষ্ঠানে ছয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে সিন্ডিকেট ঋণ দেয় ১৪৪ কোটি টাকা। পরে ব্যাংকগুলো আরও দেড় শ কোটি টাকা চলতি মূলধন ঋণ দেয়। তবে এত দিনেও উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার হয়নি চালকলটির। এর ফলে ব্যাংকঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে মিলটি বিক্রি করে দিচ্ছে সজীব গ্রুপ। আর চালকলটি কিনে নিচ্ছে শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের আকিজ রিসোর্সেস লিমিটেড।
মিলটিতে ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এরই মধ্যে হাশেম রাইস মিলের মালিকানা পরিবর্তনের অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে রাইস মিলের ঋণ সজীব গ্রুপ থেকে আকিজ গ্রুপের নামে স্থানান্তরিত হচ্ছে। পাশাপাশি এই ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোতে আকিজ সিমেন্ট করপোরেট গ্যারান্টি দিয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে মিলটির মালিকানা বুঝে নেবে আকিজ গ্রুপ। নারায়ণগঞ্জে সজীব গ্রুপের সেজান জুসের কারখানায় আগুনের ঘটনার পর চালকলটির মালিকানার হাতবদল প্রক্রিয়া দ্রুত হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
আকিজ রিসোর্সেস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মিনহাজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কৃষি খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে চাই। চালের গুণগতমান ও দাম স্থিতিশীল রাখতে আমরা কাজ করব। এ জন্য চাল মিলটি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। মিলটি নিতে ঋণের বাইরে আর কোনো টাকা দেওয়া হবে না।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে রাজধানীর একটি তারকা হোটেলে বড় আয়োজন করে সজীব গ্রুপকে ১৪৪ কোটি টাকা সিন্ডিকেট ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রাইম ব্যাংক ছিল এই ঋণের মূল আয়োজক প্রতিষ্ঠান। এতে অংশ নেয় ট্রাস্ট, বেসিক, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাবিনকো। সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও হাশেম রাইস মিলসের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাশেম নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঋণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বর্তমানে এ ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৫১ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও ১৫৪ কোটি টাকা চলতি মূলধন ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে গত জুন শেষে চালকলটির ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা।
ঋণদাতা ব্যাংকের সূত্রে জানা যায়, চালকলটির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করতে না পারায় ও করোনার কারণে সজীব গ্রুপ মিলটি বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২১ মার্চ অর্থায়নকারী ব্যাংকগুলো ও সজীব গ্রুপের মধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গ্রুপটি আকিজ রিসোর্সেসের কাছে বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করে। পাশাপাশি মেয়াদি ঋণের সুদ মওকুফ চায়। তবে আকিজ গ্রুপের কিছু সিদ্ধান্তে পরিবর্তন ও সাইলো স্থাপনে জটিলতার কারণে ২১ মার্চের সিদ্ধান্ত সময়মতো বাস্তবায়ন হয়নি। পরে সজীব গ্রুপের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলো একে একে মিলটির মালিকানা পরিবর্তনের অনুমোদন দেয়। তবে কেউ সুদ মওকুফ করেনি। এর ফলে সজীব গ্রুপ থেকে মালিকানা যাচ্ছে আকিজ গ্রুপে।
ঋণদাতা পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম খান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাশেমের নারায়ণগঞ্জের কারখানায় আগুনের ঘটনায় সজীব গ্রুপ সমস্যায় পড়েছে। আমরাও চিন্তায় পড়েছিলাম। এখন আকিজ গ্রুপ ঋণের দায় নিচ্ছে, তাই আমাদের ঋণও এখন অনেকটা সুরক্ষিত হয়েছে।’
জানা যায়, এই চালকলে উৎপাদন হয় সরু সেদ্ধ চাল ও সুগন্ধি চাল। বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন। তবে বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ।
বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাশেম রাইস মিলের মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়টি আমাদের ব্যাংকের পর্ষদে অনুমোদন হয়েছে।’
আরও নতুন তথ্য পেতে ব্র্যান্ড প্র্যাক্টিসনার্স এর সাথে থাকুন।