Written by 7:39 pm Market Research, Resources

ভারতীয় উপমহাদেশে ‘কোলা ওয়্যার’

Cola Wars
Walton
Proloy

লেখকঃ প্রলয় হাসান

কোলা ওয়্যার বলতে মূলতঃ কোকা-কোলা আর পেপসি এর মধ্যকার লড়াইকে বুঝানো হয়ে থাকে। এটি প্রধানত শুরু হয় ৭০ দশকের শেষ ভাগ থেকে, তীব্রভাবে চলে পুরো ৮০ এর দশক জুড়ে, বিশ্বজুড়ে। তবে ১৯৭৫ সালে এ যুদ্ধটা শুরু করে পেপসি। তারা আমেরিকার নাগরিকদের কাছে “ব্লাউন্ড টেষ্ট” করায় যে কেউ যদি কোক আর পেপসির ভেতর সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের নাম না জেনে পান করে, তবে কোন পানীয়টা তাদের কাছে বেশী পছন্দীয় হয়। পেপসি এর নাম দেয় Pepsi Challenge.

এটা আদতে ছিলো তাদের এক ধরনের মার্কেটিং ক্যাম্পেইন, যেটা টানা কয়েক বছর ধরে চলে। এই ক্যাম্পেইনের ফলাফলে দেখা যায়, আমেরিকানরা কোকের চাইতে পেপসীর স্বাদকে বেশী পছন্দ করে। ওদিকে কোকও বসে থাকে না। শুরু হয় দুই ব্র্যান্ডের যুদ্ধ! এ নিয়ে একটা ডকুমেন্টারিও বানানো হয় ২০১৯ সালে। (কমেন্টে লিংক)

কিন্তু আমাদের এই উপমহাদেশে কোলা-যুদ্ধটা কেমন ছিলো?আমি এ লেখাতে পাকিস্থান থেকে শুরু করে ভারতের কোলা ওয়্যার মুটামুটি বিশদ বলে বাংলাদেশে এসে শেষ করেছি।

ভারতীয় উপমহাদেশে কোলা ওয়্যারঃ

কোলা যোদ্ধাদের ভেতর এ উপমহাদেশে কোকা-কোলা কোম্পানি সর্বপ্রথম প্রবেশ করে, ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানে কোকা-কোলা বোতলজাতকরণ শুরু করার মাধ্যমে। কোকা-কোলা প্রকৃত অর্থেই বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান, কারণ তারা যে দেশে ব্যবসা শুরু করে, সে দেশে স্থানীয়ভাবে কারখানা নির্মান করে থাকে, এবং স্থানীয় জনবল দিয়েই তা পরিচালিত হয়। কোকা-কোলার এই ‘স্থানীয় উৎপাদনের” ফলে স্থানীয় লোকেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়; স্থানীয় উৎপাদনের কারণে প্রডাকশন ব্যয়ও কম হয় তাই দামও থাকে স্থানীয় কাষ্টমারদের হাতের নাগালে।

কোলা ওয়্যারের ২য় যোদ্ধা পেপসি ১৯৫৯ সালে পাকিস্থানী বাজারে প্রবেশ করে। খুব সম্ভবত প্রায় একই সময়ে তারা ভারতের বাজারেও প্রবেশ করে। কিন্তু ১৯৬২ সালে মাত্র ৩ বছর পরেই তারা ভারত থেকে পাততারি গুটাতে বাধ্য হয় সেখানকার বাজারে ব্যবসায় মন্দা যাবার কারণে। বিক্রি-বাট্টা কম হবার কারণে তারা পরের বছর পাকিস্থান থেকেও চলে যায়।

এরপর ১৯৭৭ সালে ভারতের বাজার থেকে কোকা কোলাও নিজেদের উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়, তবে পেপসির মতো ব্যবসায়িক কারণে না, বৈরী সরকারী নীতিমালার কারণে। ভারত সরকার কোককে নির্দেশ দিয়েছিলো, ভারতীয় খাদ্য কৃর্তপক্সের কাছে তাদের রেসিপি প্রকাশ করতে, এবং কোম্পানির কমপক্ষে ৬০% মালিকানা ভারতে রাখতে। কোক সঙ্গত কারণেই দুটো নিদের্শের কোনটাই মানেনি, ফলশ্রুতিতে তৎকালীন ভারত সরকার তাদেরকে ভারত থেকে চলে যেতে বলে। (অর্থাৎ, ভারতের বাজারে কোক টানা দেড় দশক এক চেটিয়া ব্যবসা করেছিলো!)

থামস আপ এর উত্থানঃ

কোকের প্রস্থানের পর ভারতের বাজারে আর কোনই ভিনদেশী কোলা পানীয় রইলো না, এই সুযোগটাকেই কাজে লাগান ভারতীয় ব্যবসায়ী চৌহান ভাতৃদ্বয় রমেশ চৌহান ও প্রকাশ চৌহান, যারা কিনা ভারতীয় কোম্পানি Parle এর অন্যতম মালিক ছিলেন, যে কোম্পানির দুটো পানীয় (Limca এবং Gold Spot) ইতোমধ্যেই তখন স্থানীয় বাজারে বেশ জনপ্রিয় ছিলো।

উদ্যোগটা প্রথম নেয় বড় ভাই রমেশ। চৌহানজী চাইলেন এমন একটা পানীয় বাজারে আনতে, যেটা কোক-পেপসীর চাইতেও মশলাদার ও ঝাঝালো হবে। তিনি একদম শুরু থেকে কোলা ফর্মূলা বানানো শুরু করলেন, আর উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করেন লবংগ, এলাচ, দারুচিনির মতো জনপ্রিয় ভারতীয় মশলা, সাথে যুক্ত করলেন হালকা কমলা ফ্লেভার। তিনি ও তার টিম অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সম্পূর্ণ নিজেদের রেসিপিতে Thums Up লঞ্চ করেন। শুরুতে এর নাম Thumbs Up দেয়া হলেও পরবর্তীতে স্বাতন্ত্রতা আনার জন্য “B” অক্ষরটাকে বাদ দিয়ে ব্র্যান্ডিং করা হয়।

বাকীটা ইতিহাস। ভারতীদের কাছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেলো থামস আপ। সমগ্র ভারতজুড়ে খুব অল্প সময়ের ভেতরই থামস আপের জয়জয়কার শুরু হয়ে গেলো। সে সময় বাজারে আরো কয়েকটি কোলা ব্র্যান্ড ছিলো, যেমনঃ Campa Cola, Double Seven, Duke’s McDowell’s Crush, Double Cola ইত্যাদি। এর ভেতর আবার ডাবল সেভেন ছিলো সরকারীভাবে উৎপাদিত পানীয়। কিন্তু থামস আপের জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও কেউ ভীড়তে পারলো না।

পরবর্তীতে ভারত সরকার বিদেশী কোম্পানিদের প্রতি বৈরী নীতিমালা থেকে সরে আসার পর সবার আগে সেখানকার বাজারে ঢুকে পেপসিকো, সম্ভবত ভারতীয় বাজারে তারা শুধুমাত্র তাদের চিপস বিক্রি করতো সে সময়। এরপর ১৯৯০ সালের মে মাসে Pepsi, Seven-Up এবং Mirinda সীমিত আকারে ভারতের বাজারে ছাড়া হয়। সে সময় লস এঞ্জেলস টাইমস ”Pepsi-Cola Back in Indian Market After a 28-Year Absence” শিরোনামে একটা সংবাদও প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, পেপসি পরবর্তী ১০ বছরে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ভারতের বাজারে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত সরকারকে।

১৯৯০ সালে অফিসিয়ালি পেপসি লঞ্চ করা হলেও ভারতে পেপসি প্রজেক্ট শুরু হয় ১৯৮৫ সাল থেকেই। সে বছরে ভারত সরকারের কাছে তারা ব্যবসা শুরু করার আবেদনপত্র দাখিলের সাথে সাথেই তা প্রত্যাখান করা হয়। এরপর পেপসী বাধ্য হয়ে সরকারী প্রতিষ্ঠান Agro-Industries Corp আর টাটা গ্রুপের সাথে যৌথ উদ্যোগে তাদের পানীয় ভারতের বাজারে ছাড়ে, সরকারী নীতিমালা মেনে মালিকানার সর্বোচ্চ ৪০% শেয়ারে। পেপসির ক্রমাগত চেষ্টায় এর ৬ বছর পর তাদেরকে অফিসিয়ালি ইন্ডিপেন্ডলি ভারতের বাজারে পুনঃপ্রবেশ করার অনুমিত দেয় সরকার।

বাজার যাচাই করার জন্য তারা আগেই পেপসি কোলা না ছেড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে পেপসি তাদের দুটো পটোটো চিপস ব্র্যান্ড বাজারে ছাড়ে, Cheetos এবং Hostess (যেটাকে ১৯৯৬ সালে Lays এ রিব্র্যান্ডিং করা হয়)। ভালো ফল পেলে এর তিন মাস পর পেপসি কোলা ভারতের বাজারে ২য় বারের মতো আত্নপ্রকাশ করে।

থামস আপ আর পেপসির মল্লযুদ্ধঃ

এরপর শুরু হয় তৎকালীন ভারতীয় বাজারের কোলা-লিডার থামস আপের সাথে পেপসির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। শুরুতে পেপসি ভেবেছিলো, বাজারে যেহেতু তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী কোক নেই, সেহেতু আরামসে ব্যবসা করতে পারবে। কিন্তু থামসের কাছ থেকে যতটা বাধা তারা পাবে ভেবেছিলো, বাস্তবে পেয়েছিলো তার চাইতেও বেশী। পেপসির এক প্রাক্তন মুখপাত্র এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পেপসি এর আগে আর কখনো ভিনদেশী কোন কোলা-ব্যান্ডের সাথে এতটা তীব্র যুদ্ধে অবতীর্ন হয়নি। পেপসি বলিউড নায়িকাদের দিয়ে (যেমনঃ জুহি চাওলা) টিভিসি ও বিজ্ঞাপন বানানো শুরু করলো, অপরদিকে থামস আপ ভারতীয় ক্রিকেটে স্পন্সরশীপ বাড়িয়ে দিলো।

এদিকে ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে কোকা কোলার কাছে খবর চলে গেলো যে, পেপসি তাদের পন্য ছাড়া শুরু করেছে ভারতের বাজারে। কোক বুঝে গেলো পেপসির পরিকল্পনা। তাই তারা ঐ মাসেই ভারত সরকারের কাছে ৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কোকের কারখানা নির্মানের প্রস্তাব দিয়ে আবেদন করে, এবং যথারীতি তারাও প্রত্যাখাত হয়।

১৯৯৩ সালে অনেক দেন দরবার করে কোকা-কোলাও ভারতের বাজারে পুনঃপ্রবেশ করে ও তিনটি কোম্পানির তীব্র প্রতিযোগীতা শুরু হয়। সে সময় থামস আপ ও পেপসির মার্কেট শেয়ার ছিলো যথাক্রমে ৩৬% ও ২৬%! টুইষ্ট হলো, ঐ বছরের শেষের দিকে পেপসিকে বেকায়দায় ফেলতে কোকা-কোলা কোম্পানি ৬০ মিলিয়ন ডলারে থামস আপ, Limca এবং Gold Spot তিনটা ব্র্যান্ডকেই একত্রে কিনে নেয়। ২০১২ সালে থামস আপের মার্কেট শেয়ার ছিলো ৪২%। যা কোক ও পেপসীর চাইতেও বেশী ছিলো। ২০১৪ সালে থামস আপক ভারতের সবচাইতে বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের তালিকায় ৬৬ তম স্থান অধিকার করে।

যদিও কোকের স্প্রাইট তখন একেবারে ২য় কাতারেই ছিলো, থামস আপের পরেই নাম্বার টু ব্র্যান্ড ছিলো স্প্রাইট। থামস আপ আর স্প্রাইটের অবস্থান ভারতের বাজারে খুবই কাছাকাছি ছিলো লম্বা সময়।

কোক প্রথমে চেয়েছিলো থামস আপকে কেনার পর বাজার থেকে গায়েব করে দিতে, কিন্তু থামস আপের লয়্যাল কাষ্টমার বেইজ এত শক্ত ছিলো যে, সেটা করতে কোক সাহস পায়নি, এবং পরবর্তীতে থামস আপকে নিজের মতো করেই চলতে দেয় কোক কোম্পানি। কোক ভাবলো, থামস আপকে টিকিয়ে রাখবে, কিন্তু এর প্রডাকশন আর মার্কেটিং ব্যয় কমিয়ে দেবে কোকের বিক্রি বাড়াতে। কিন্তু দেখা গেলো, থামস আপ না পেয়ে লোকে কোক না কিনে পেপসি কিনছে! কোক বুঝলো, এভাবে হবে না। তাই তারা অন্য স্ট্রাটেজিতে গেলো।

ভারতীয় বাজারে তারা কোকের বদলে থামস আপকে রিব্র্যান্ডিং (লোগো আর স্বাদে হালকা বদল আনা হয়), রিপজিশনিং (ম্যানলি ড্রিংক) ও রিলঞ্চিং করে একেবারে লেলিয়ে দিলো পেপসির পেছনে! কোক কেনার দরকার নাই, লোকে যেন পেপসির বদলে থামস আপকেই কেনে। থামস আপ রীতিমতো আক্রমনাত্নকভাবে বিঞাপন দেয়া শুরু করলো পেপসিকে টার্গেট করে। সেই সাথে চল্ল বিভিন্ন জনপ্রিয় হিন্দী ও হলিউডি (যেমনঃ Eat, Pray, Loveসিনেমাতে থামস আপের প্রডাক্ট প্লেসমেন্ট!

ওদিকে পেপসিও কিন্তু বসে নাই!

পেপসি তাদের বিখ্যাত গ্লোবাল ক্যাম্পেইন লঞ্চ করেছিলো সে সময়। এর আওতায় তাদের প্রতিটা দেশের বাজারে সেরা সেলিব্রেটিদের নিয়ে টিভিসি করা হলো। আমেরিকাতে মাইকেল জ্যাকসন, পাকিস্থানে ইমরান খান, ভারতে আমির খান ও বাংলাদেশে গায়ক শুভ্রদেব। ৯০ দশকে যারা কিশোর ছিলেন, তাদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, “পেপসি আর আছে কি খ্যাত সেই টিভিসির কতা, আমি তখন প্রাইমারিতে পড়ি। টিভিসির লিংক কমেন্টে দিলাম। তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো পেপসির এই বিজ্ঞাপনগুলো।

এই গ্লোবাল ক্যাম্পেইনটা ছিলো পেপসির ইতিহাসের অন্যতম সেরা হিট ক্যাম্পেইন। পরবর্তীতে তারা বলিউড তারকাদের পেছনেও খরচা বাড়িয়ে দেয়। এই কারণেই মাউন্টেন ডিউ এর টিভিসিতে সালমান খান ও হৃত্বিক রোশানের মতো বডি বিল্ডার মাসলওয়ালা নায়কদেরকে দেখা যেতে লাগলো। আমরা যখন ইউনিভার্সিটিতে এডভারটাইজিং ক্লাস করেছিলাম, তখন পড়েছি এ ধরনের বিজ্ঞাপনকে Resonance advertising, যা কিনা প্রডাক্টকে কনজুমারের সাথে টাই করে ফেলে।

৯০ দশকের মাঝামাঝিতে পেপসি লঞ্চ করে তাদের ইতিহাসের স্মরণকালের সবচাইতে সফল দীর্ঘমেয়াদী কোলা-যুদ্ধ স্ট্রাটেজি পেপসি স্টাফ! সেটার স্লোগান ছিলো Drink Pepsi, Get Stuff. পেপসি কিনে পয়েন্ট জমিয়ে লোকে পেপসির স্যুভেনির (টুপি, জ্যাকেট, টি-শার্ট) কিনতে পারতো নির্দিষ্ট পেপসি পয়েন্ট থেকে। শুরুটা আমেরিকাতে হলেও পরবর্তীতে তারা বিশ্বজুড়েই পেপসি স্টাফ ক্যাম্পেইন চালায়।

বাংলাদেশে কোলা ওয়্যারঃ

বাংলাদেশে কোক প্রবেশ করে ১৯৬৫ সালে তাবানী বেভারেজের হাত ধরে। আমি জন্ম থেকে ঢাকার ‍মিরপুরের স্থানীয় অধিবাসী বলে ছোটবেলা থেকেই ঢাকা চিড়িয়াখানায় যাবার পথে তাবানী বেভারেজ লিমিটেড কোম্পানিকে চোখে পড়তো। শুরুতে তেজগায়েঁ থাকলেও আশির দশকের প্রথমভাগে একে মিরপুর ২ নং সেকশনে স্থানান্তরিত করা হয়। এটি ছিলো কোকা-কোলার অনুমোদিত দুটি দেশীয় প্লান্টের একটি, এখানেই উৎপাদিত হতো কোকা-কোলা, ফ্যান্টা আর স্প্রাইট; মার্কেটিংয়ের দায়িত্বেও ছিলো তাবানী, যা ছিলো মুক্তিযোদ্ধা কল্যান টাস্ট্রের সবচাইতে লাভজনক কোম্পানি। কিন্তু ২০০৮ সালে এটি বলতে গেলে হুট করেই বন্ধ করে দেয়া হয়। ধারনা করা হয়, কোকা-কোলার মাদার কোম্পানি আর চাইছিলো না তাবানীকে দিয়ে কাজ করাতে। কারণ বন্ধ করার কয়েক বছর আগে থেকেই তাবানীর ব্যালেন্স শিটে কোক উল্লেখযোগ্য পরিমান আর্থিক ক্ষতি দেখতে পাচ্ছিলো। তবে তাবানী থেকে দাবী করা হয়েছিলো, ষড়যন্ত্র করে এটিকে বন্ধ করা হয়েছে।

সে সময়ে বাংলাদেশে কোকা-কোলার ২য় প্রডাকশন প্লান্ট ছিলো K Rahman and company এর অধীনে। তাবানী এবং কে রহমানউভয় কোম্পানির মালিকই ছিলেন দুইজন অবাঙ্গালী। তাবানীর অংশে ছিলো ঢাকা আর রাজশাহী বিভাগ, আর কে রহমানের অংশে ছিলো চট্টগাম আর খুলনা বিভাগ। দেশ স্বাধীন হবার পর তাবানী চলে যায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যান টাষ্ট্রের অধীনে, আর কে রহমান চলে যায় সুগার এন্ড ফুড লিমিটেডের অধীনে।

পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে Abdul Monem Ltd. কিনে নেয় কে রহমানকে। এরপর মোনেম গ্রুপ আলেখার চরে একটা কারখানা নির্মান করে সেখানেই কোকা কোলা উৎপাদন করা শুরু করে। বর্তমানে মোনেম গ্রুপ, এবং কোকা-কোলার অঙ্গসংস্থা International Beverages Private Ltd (IBPL) বাংলাদেশে কোকা-কোলা উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিপনন করে যাচ্ছে। IBPL ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর অধীনে ২০১৭ সালের শুরুতে কোক ময়মনসিংহের ভালুকায় কোক তাদের নিজস্ব প্লান্ট বসায় ৭৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, যেখান থেকে প্রতি মিনিটে ৬০০ Kinley ও ৭২০ বোতল কোক উৎপাদিত হচ্ছে।

প্রাণ গ্রুপ কি কোক বানাচ্ছে এখনো?

পেপসি এই দেশে ঠিক কত সালে যাত্রা শুরু করে, তা আমি অনেক খুঁজেও পাইনি কোথাও। জানতে চেয়ে পেপসির হেড অফিসে ই-মেইল করেছিলাম গত সপ্তাহে, সেটারও কোন প্রত্যুত্তর পাইনি এখনো। ধারনা করছি, ভারতে লঞ্চ করার দুয়েক বছর পরেই আমাদের দেশে পেপসি প্রবেশ করে, ৯৩ সালে শুভ্রদেবের টিভিসি প্রচারও আমার এ ধারনাকে সমর্থন করে।

দেশের বাজারে পেপসির মার্কেট শেয়ার সবচাইতে বেশী, ৩৫%, এরপর কোক (২৫%), তারপর আকিজ ও প্রাণ যথাক্রমে ১৫% ও ১০%।

বাংলাদেশে কোলা ওয়্যাল নিয়ে খুব বেশী তথ্য-উপাত্ত পাইনি। কেউ জানলে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। এই লেখার সবগুলো রেফারেন্সের লিংক কমেন্টের ঘরে দিলাম। লেখাটি নেয়া হয়েছে আমার প্রকাশিতব্য মাকেংটিংয়ের বই “নন-মার্কেটারদের জন্য মার্কেটিং” বইয়ের “বেভারেজ শিল্পে বাংলাদেশের উত্থান” অধ্যায় থেকে। প্রচ্ছদ ও এডিটিংয়ের কাজ শেষ। বইটি এ মাস থেকেই প্রি-অর্ডার করা যাবে ইনশাল্লাহ।

 

Share this on
Close