Written by 2:33 pm Market Research

কেস স্টাডি on Pepsi!

175280081 4244805745531600 721182207135399420 n
Walton

twil canচ্যালেঞ্জঃ
২০০৯ সালের কথা।
পেপসি-তুর্কি ঠিক করলো গ্রীষ্মকালে বিক্রি বাড়ানোর জন্য ক্যাম্পেইন করবে। এতে করে মার্কেট শেয়ারও যদি কিছুটা বাড়ে। এজন্য তারা তাদের ফ্যামিলি-সাইজ বোতল দিয়ে ক্যাম্পেইন করবে বলে ঠিক করলো।

এর আগেও তুরস্কে বিক্রি বাড়ানোর জন্য ছোট সাইজের বোতল দিয়ে ক্যাম্পেইন করা হয়েছে। সেসময় টার্গেট অডিয়েন্স ছিল তরুণরা। তখন মোবাইলের “টেক্সট করো, জিতে নাও” টাইপ ক্যাম্পেইন দিয়েই সফল ক্যাম্পেইন করা গিয়েছে।

তাহলে এবার সমস্যা কোথায়?

সমস্যা হলো, এইবার তাদের ক্যাম্পেইন প্রোডাক্ট ফ্যামিলি-প্যাক বোতল। অর্থাৎ এবার এই ফ্যামিলি প্যাক বোতলের গ্রাহকদেরকেই রিচ করতে হবে এবং ক্যাম্পেইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সমস্যা হল, তুরস্কের হিসেবে এই ফ্যামিলি-সাইজ বোতলের মূল গ্রাহক গৃহিনীরা। এদেরকে মোবাইলের মাধ্যমে রিচ করা ততটাই কঠিন – যতটা তরুণদের ক্ষেত্রে সহজ ছিল।

ক্যাম্পেইন বাজেটঃ
বলা যাবে না। কারণ পেপসি এটা কখনোই প্রকাশ করেনি। তবে তারা ২ কোটি ৭২ লক্ষ মিনিট ফ্রি এয়ারটাইম প্রদান করেছিল এই ক্যাম্পেইনে। এবার বাকিটা আন্দাজ করে নেন, কত বাজেট হতে পারে!

টার্গেট অডিয়েন্সঃ
আগেই বলেছি, ক্যাম্পেইনের টার্গেট অডিয়েন্স ছিল তুর্কিস গৃহিনীরা।

এক্সিকিউশনঃ
আগের ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রমাণিত যে, ফ্রি-মিনিট প্রদান করা খুবই কাজের একটা উইনিং-স্ট্র্যাটেজি। তাই ঠিক করা হল, ফ্রি-মিনিট এয়ারটাইম এবারও দেয়া হবে। দিনের সর্বোচ্চ ১০ মিনিট পাবে প্রতি গ্রাহক। এর পাশাপাশি তারা ফ্রি মোবাইল ব্যালেন্স এর ব্যবস্থাও রাখলো। সবাই জানেন, ২০০৯ সালে সারা দুনিয়ার অর্থনৈতিক মন্দা চলেছিল এবং সেই মন্দার ভেতর এইটা একটা ভাল অফার হতে পারে বলে পেপসি টিম মনে করেছিল।

কিন্তু ক্যাম্পেইনের সাথে একজন অপিনিয়ন-লিডার বা ব্র্যান্ড এ্যামবাসেডর দরকার ছিল, যে গৃহিনীদের উপর প্রভাব ফেলতে পারবে এবং “জিততে হলে টেক্সট করো” ব্যাপারটা গৃহিনীদের বুঝিয়ে বলতে পারবে।
পেপসি টিম সেদা সায়ান নামক এক সেলিব্রিটিকে ক্যাম্পেইনের ব্র্যান্ড এ্যামবাসেডর হিসেবে নিয়ে আসে। তাকে তুরস্কের “অপরাহ উইনফ্রে” বলা হয়ে থাকে।

টিভি বিজ্ঞাপনে এবং নিজের মর্নিং-শো তে সেদা প্রতিদিনই কিভাবে এসএমএস করে জিততে হবে ফ্রি-এয়ারটাইম, সেটা ডেমোনস্ট্রেট করে দেখাতো।

এতোকিছুর পরও ক্যাম্পেইনে যেটা ছিলনা, তা হলো ভাইরালিটি। গৃহিণীদের কোন মোটিভেশন ছিলনা, তাদের পাশের বাসার ভাবি(!) বা আশেপাশের গৃহিণীদের সাথে এই ক্যাম্পেইনের কথা শেয়ার করার।

এইখানেই হইলো আসল খেলা!

ভাইরালিটি বাড়ানোর জন্য পেপসি টিম ক্যাম্পেইনে যোগ করলো “প্রোমো-টোন”। এই প্রোমো-টোন হচ্ছে প্রমোশনাল-রিংব্যাক-টোন। আমাদের দেশের কলার টিউনের মতোই। রিং বাজার আগে বা বাজার সময় এই প্রমো-টোন চলবে। যখনই কেউ প্রমো-টোন শুনবে, তখনই যাকে কল দিয়ে প্রমো-টোন শুনেছে, সে ফ্রি-মোবাইল ব্যালেন্স পেয়ে যেত। তুরস্কে এই জাতীয় প্রমোশন ছিল সেটাই প্রথম।

এবার আসি প্রমোশন প্রসেস নিয়ে বা ইউজার স্টোরি নিয়ে। একজন একটা ফ্যামিলি-সাইজ পেপসি কিনলো দোকান থেকে। সে ক্যাপের নিচে থাকা কোডটি লিখে নির্দিষ্ট নম্বরে এসএমএস করলো। এসএমএস করার পর ইন্টারেক্টিভ-ভয়েস-রেসপন্সের মাধ্যমে সেদা সায়ানের কল আসতো। সে অভিনন্দন জানাতো ক্যাম্পেইনে পার্টিসিপেট করার জন্য এবং ১০-মিনিট এয়ারটাইম জিতে নেবার জন্য। সাথে এটাও জানাতো যে, আগামী ২৪ ঘন্টার জন্য তার মোবাইলে প্রোমো টিউন সেট করে দেয়া হয়েছে। ২৪-ঘন্টার ভেতর কেউ তাকে কল দিয়ে সেটা শুনলেই সে পাবে ফ্রি-মোবাইল ক্রেডিট বা ব্যালেন্স।

অন্য কেউ কল দিয়ে যখন ক্যাম্পেইনের কথা শুনতো, সেখানে তাকে জানানো হতো যে, আপনি যাকে কল করেছেন, পেপসি ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহন করে সে জিতে নিয়েছে ১০ মিনিট এয়ারটাইম এবং ফ্রী-মোবাইল ক্রেডিট। আপনিও জিতে নিতে চাইলে দোকান থেকে ফ্যামিলি-সাইজ বোতল কিনে কোড এসএমএস করুন।

প্রশ্ন আসতে পারে, জোর করে প্রোমো-টোন সেট করে দিলে তো ক্যাম্পেইন ব্যাকফায়ার করতে পারতো। কিন্তু না, গ্রাহক চাইলেই প্রোমো টোন ক্যান্সেল বা অপট-আউট করতে পারতো। ধারণা করতে পারেন, এই অপট-আউট এর রেট কত ছিল?

১.৩%

সেদা সায়ান থেকে যে কল আসতো ইন্টারেক্টিভ-ভয়েস-রেসপন্সের মাধ্যমে, সেটা এবং প্রোমো-টোন – দুটোই ক্যাম্পেইনের মাঝে কয়েকবার করে চেঞ্জ করা হলো। যাতে ক্যাম্পেইন ফ্রেশ থাকে, ক্রিয়েটিভ-ফ্যাটিগ না চলে আসে।

গড়ে ক্যাম্পেইন পার্টিসিপেন্টরা দিনে ৪-টা করে কল রিসিভ করতো। এরা সবাই-ই ক্যাম্পেইনের কথা জানতে লাগলো এবং পার্টিসিপেট করতে লাগলো। ক্যাম্পেইন হয়ে গেল ভাইরাল।

এছাড়াও আরো কিছু মার্কেটিং টুল ইউজ করা হলো, যেমন মোবাইলের WAP ব্যানার (২০০৯ সালের ইন্টারনেট ইউজাররাই বুঝবেন ওয়াপ কি জিনিস 😉), মোবাইল গেমস, ওয়ালপেপার, পেপসি-রিংটোন ইত্যাদি।

ফলাফলঃ
৩৩ লক্ষ মানুষ ক্যাম্পেইনে পার্টিসিপেট করেছে। আগের ক্যাম্পেইনের প্রায় ডাবল। ক্যাম্পেইন অংশগ্রহণকারী ৫ জনের মাঝে ৪ জনই এর আগে কখনোই পেপসির কোন ধরনের ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করেনি।

পেপসি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ লক্ষ ২৫ হাজার এসএমএস রিসিভ করে ক্যাম্পেইন থেকে। পুরো ক্যাম্পেইনে মোট ১ কোটি ৬২ লক্ষ এসএমএস রিসিভ করে।
৫৭ লক্ষ প্রোমো টোন সেট করা হয় ক্যাম্পেইনে। অর্থাৎ পুরো ক্যাম্পেইনে পেপসির জিংগেল ২ কোটি বার শুনা হয়েছে। ৮২% সময়ই ইন্টারেক্টিভ-ভয়েস-রেসপন্সের কল পার্টিসিপেন্টরা কেটে দেয়নি, পুরোটা শুনেছে।

পেপসির বিগত সকল ক্যাম্পেইনের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয় এই প্রমোশন। প্রথমবারের মতো পেপসির সেলস এর ৬৩% কন্ট্রিবিউশন আসে এই ফ্যামিলি-সাইজ বোতল থেকে। ফ্যামিলি-সাইজ কোলা মার্কেটে পেপসির শেয়ার বাড়ে ১৭%।

সবকিছু মিলিয়ে পেপসির মার্কেট শেয়ার বাড়ে ৫%।

—————–
গতবছর ইন্ডিয়ার এক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছিলাম, যারা এরকম ক্যাম্পেইনের এয়ারটাইম বা ফ্রি ব্যালেন্সের ব্যাপারটা ম্যানেজ করে। পেপসি তুরস্কের সাথে অলরেডি তারা কাজ করে। সেই সুবাদে এই কেস-স্টাডি হাতে পাওয়া। কিছু সেনসিটিভ ফিগার ছাড়া পুরোটাই এখানে আছে।

২০০৯ সালেই এই কাহিনী। এখন পেপসি কি করছে তুরস্কে, খোঁজ খবর নিন। খুবই ইন্টারেস্টিং কিছু ক্যাম্পেইন এর খোঁজ পাবেন বিগত ২-৩ বছরে, স্পেশালি রোজার মাস এবং ঈদ-কে কেন্দ্র করে।

গত বছরের সালমান খান-কে নিয়ে করা ইন্ডিয়ার ক্যাম্পেইনের ইমপ্যাক্টও দেখতে পারেন। ৪ দিনে সর্বোচ্চ পরিমান টিক-টক ভিডিও পোস্ট হয় তাদের ক্যাম্পেইনে।

মার্কেটার হিসেবে সবসময় নিউট্রাল থাকুন এবং আপডেটেড থাকুন সারা দুনিয়ার ব্যাপারে। হতে পারে এমন এক ম্যাস ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করতে হতে পারে আপনার, যেখানে আপনার জানতে হবে টিক-টক মার্কেটিং, রেডিট মার্কেটিং, এসএমএস মার্কেটিং কিংবা আমাজন এফিলিয়েশন মার্কেটিং।

Writer – Mazharul Islam Nishad

Share this on
Close