Written by 10:17 am Bangladeshi Brands, Brand Practitioners

টু বি অর নট টু বি

Add a heading
Walton

ইমোশনাল মার্কেটিং

যারা আমার মতো বয়সী তাদের অনেকের হালাল সাবানের কথা মনে আছে। নব্বুয়ের দশকে এই সাবান তোলপাড় তুলেছিল বাংলাদেশ জুড়ে। এবং কিছুদিনের মধ্যে তারা বাজারের বড় অংশটি দখল করে। আর এর মূল কারণ- ধর্মীয় আবেগের অনুভূতির ব্যবহার। বলা হয় এই সাবানটি বাজারের একমাত্র হালাল সাবান কারণ এটি তৈরি করা হয় ভেজিটেবিল ফ্যাট থেকে, আর অন্যান্য যে সুগন্ধী সাবান বাজারে আছে যেমন লাক্স সেগুলো আসলে এনিম্যাল ফ্যাট থেকে তৈরি করা হয়!!! এনিম্যাল ফ্যাট বললেই একটি বিশেষ প্রাণীর কথা আমাদের মনে হয় এবং সেই কারণে এই মার্কেটিংয়ে তারা খুব সুবিধা করে। এই যে এভাবে একটি সাবানকে হালাল সাবান হিসাবে ঘোষণা দিয়ে ব্যবসা করার যে বুদ্ধি সেটি তাদেরকে বাজারে প্রথম স্থানে এনে দিয়েছিলো।

প্রশ্ন হচ্ছে হালাল সাবানের মতো আবেগীয় বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসে প্রচার-প্রচারণা এবং বিপণন স্ট্র্যাটেজি তৈরি করলে সেটা কি অনেক ভালো হয়? হয় এবং সেটি নতুনও নয়। আবেগ বা ইমোশনাল মার্কেটিং নিয়ে দুই দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাপক কাজকর্ম হয়েছে। আমার ধারণা মার্কেটিং বিভাগগুলো এগুলো পড়ায়, কেস স্টাডি করে। কাজে ব্যাপারটা নতুন নয়।

তবে, আমি ব্যাপারটা ভাবছি অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে। আমাদের নতুন উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগেরই মার্কেটিং খাতে খুব একটা বাজেট থাকে না। তাছাড়া সবাই প্রায় কমবেশি “ওয়ানম্যান আর্মি”। তারা কীভাবে এধরণের মার্কেটিং-এর সুবিধা পেতে পারে। উদ্যোক্তাবান্ধব দেশগুলোতে এরক ডামিসদের জন্য প্রচুর বই পত্র লেখা হয়। আমাদের দেশে এর বড়ই আকাল। ফলে অনেক উদ্যোক্তা এখনও মার্কেটিংকে আলাদা কিছু ভাবে। আমার গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং বইতে আমি চেষ্টা করেছি এ কথাটা বলতে যে মার্কেটিং কিন্তু এখন আর আলাদা কোন বিষয় নয়। যেকোন ভাবে কাস্টমারদের কাছে পৌছানোর নামই মার্কেটিং। সেটি যদি হয় যে ওয়েবসাইট ঠিক করা তাহলে সেটা মার্কেটিং। সেটি যদি হয় যে ইমেইল মার্কেটিং করা, মেইলে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চালানো তাহলে সেটা মার্কেটিং। আবার এরকম যদি হয় যে না মোড়কটা পাল্টে ফেললেও সেখানে একটা ভালো লিড পাওয়া যাবে তাহলে সেটাও মার্কেটিং।

Add a heading

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই মার্কেটিংয়ের জন্য কাস্টমারের আবেগকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়? যদিও রিসার্চ বলছে যে শুধু আবেগকে কাজে লাগিয়ে যেমন কাজ হয় না একইভাবে শুধু পণ্য খুব ভালো, কোয়ালিটি খুব ভালো এবং মানসম্মত তা দিয়েও কিন্তু কাস্টমারের লয়ালিটি তৈরি হয় না। নিশ্চয় এর মধ্যে বাড়তি কিছু দরকার। সে বাড়তি কিছু কিভাবে তৈরি করা যেতে পারে সেটি নিয়েই কিন্তু অনেক কিছু ভাবার আছে।

একটা বিষয় আমরা সবসময় খেয়াল রাখি সেটা হলো কিভাবে আমরা আরো ভালো করতে পারি এবং একটা বিষয় খুব নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে আমাদের দেশে, ধরেন— আবেগকে ব্যবহার করে খুব ভালো ব্যবসা করেছে একসময় সেটি হচ্ছে আজাদ প্রোডাক্টস। আজাদ প্রোডাক্টস তাদের যে কার্ডগুলো তৈরি করেছে সেখানে ভালোবাসার বিষয় ছিলো, সেখানে আবেগের বিষয় ছিলো এবং সে আবেগকে পুঁজি করেই কিন্তু আজাদ প্রোডাক্টসের সকল উপাদান তৈরি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এমন আবেগের কারবারি অনেক আছে যাদের মধ্যে হলমার্ক অন্যতম। হলমার্ক প্রায় ১০০ বছর ধরে তাদের কার্ড, গ্রিডিংস কার্ড তৈরি করছে। পৃথিবীর সবচাইতে পুরাতন গ্রিডিংস কার্ড কোম্পানি এবং তারা তাদের উপরে কিন্তু এখনো অনেক মানুষ আস্থা রেখে যাচ্ছে। তো এই যে আবেগ, আবেগকে ব্যবহার করা- একটা হচ্ছে আবেগকে ব্যাবহার করে আবেগের পুঁজি দিয়েই ব্যবসা করা, আরেকটা হচ্ছে যেকোন প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে সে আবেগটাকে ব্যবহার করে একটা বিপণনের ব্যবস্থা করা। ইমোশনাল মার্কেটিং-এর মোদ্দাকথা আমার মতে এটাই।

প্রশ্ন হচ্ছে এই ইমোশন মার্কেটিং-টা আসলে কি কোন কাজে লাগে? এটা নিয়ে কি কোন কিছু করা যায়? এটা নিয়ে কি আগানোর কোন সুযোগ আছে? গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং লিখতে গিয়ে আমি যে জিনিসটা খেয়াল করেছি সেটা হচ্ছে যে বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে ইন্টারনেট বিকাশের ফলে এখন কিন্তু মার্কেটিংয়ে একটা ব্যাপক ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এইসব কিছু বিষয় কিন্তু পুরানো ধ্যানধারণাকে পাল্টে ফেলছে। আপনি যদি এই বিষয়টাকে খেয়াল না করেন তাহলে কিন্তু আপনি হেরে যাবেন। বাংলাদেশে এমন কোন পত্রিকা নেই যেটির মাধ্যমে আপনি দুই কোটি লোকের কাছে পৌছাতে পারবেন। কিন্তু ফেসবুকের মাধ্যমে কোন বুদ্ধি খাটালে আপনি নিশ্চয় দুই কোটি লোকের কাছে যেতে পারবেন। কারণ বাংলাদেশে এখন প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোক ফেসবুক ব্যাবহার করে। প্রশ্ন হচ্ছে তাদেরকে ব্যাবহার করার জন্য যদি আবেগকে ব্যবহার করা যায়, তাদের মধ্যে যদি কোন রকমের আবেগীয় বিষয়কে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে প্রচারণাটা খুব ভালো হয়।

লিখেছেনঃ Munir Hasan, Head of Youth Programme at Prothom Alo

 

Share this on
Close